হাওড়া: পান চাষে দুরবস্থা। বাধ্য হয়ে চাষ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন চাষিরা। ভর পেট খাবার খেয়ে মুখে পান ভরা একটা সময় বিলাসিতা ছিল বাঙালির কাছে। বহু মানুষ কিছুক্ষণ অন্তর পান খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করেছিল। যাদের সঙ্গে সব সময় সাজা পানের কৌটো দেখা যেত। জনবহুল স্থানে চায়ের দোকানের সঙ্গে পান সেজে বিক্রি হবার দারুন চল ছিল সেই সময়। পান বেচাকেনার রমরমা ছিল। সে সময় পানের চাহিদাও ছিল বেশ, ফলে পান চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষের জীবন কেটেছে স্বাচ্ছন্দ্যে।
কিন্তু দ্রুত সেই ছবিটা বদলে যাচ্ছে। ১৫-২০ বছর আগে পর্যন্ত হাওড়া জেলার গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ উঁচু জমিতে পানের চাষ হতে দেখা যেত। একটা পান ক্ষেতের সঙ্গে আরেকটা পান ক্ষেত বা পানের বরজ লেগে থাকত। ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত মানুষের কলরব লেগে থাকত সেখানে। কিন্তু বর্তমানে সেই সমস্ত জমি জন মানবহীন হয়ে খাঁ খাঁ করছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামে কয়েকশো পান চাষি ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যাটা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বর্তমানে গোটা গ্রামে বড়জোর দু-পাঁচ জন পান চাষি আছে।
আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে চলে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মনসুর যা করলেন! এমনটা স্বপ্নেই হয়
পান চাষ দিন দিন অলাভজনক হয়ে পড়ছে। পান চাষে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি হলেও, পান পাতার দাম বাড়েনি। ফলে পান চাষে যুক্ত থাকার মানুষের পরিবারে দেখা দিয়েছে অচল অবস্থা। গত প্রায় দু’দশক ধরে পান চাষের সংখ্যা কম হয়েছে। বর্তমানে হাওড়া জেলার পাঁচলা সহ বেশ কিছু এলাকায় পান চাষ বন্ধের পথে। অধিকাংশ চাষের জমি কোনও জঙ্গল বড় বড় গাছপালায় ঢাকা পড়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন চাষি চাষ করছেন। অলাভজনক পান চাষ তার উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি, সবদিক থেকে একপ্রকার কোণঠাসা পান চাষিরা।
এই প্রসঙ্গে চাষিরা জানান, পানের দাম বৃদ্ধি না হওয়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। যদিও চাষের সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুত হারে। কিন্তু পানের দাম বাড়েনি। সবমিলিয়ে পান চাষ করতে গিয়ে এখন লাভের মুখ দেখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এই চাষের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন।
রাকেশ মাইতি