পুজো দিতে ভিড় অগণিত ভক্তদের

Mansa Puja: শ্যাওড়া, ঘেটু ও ডুমুর গাছ‌’ই দেবতা! বুড়ো বাবা আর দেবী মনসার পুজো এখানে মিলেমিশে একাকার

নদিয়া: একধারে তারকাটার বেড়া অন্যদিকে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। ফতেপুর, ঘোষ কমলপুর, মোবারকপুর, পেপুল বেরিয়া, ছুটিপুর প্রভৃতি অঞ্চলের মানুষের কাছে ফতেপুর জনপদ একটি দর্শনীয় ও ভক্তির স্থান। এই স্থানকে ঘিরে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ঘোড়ামারি ডাঙা ও ঘোড়ামারির মাঠে বসে মেলা। মূলত কৃষি জমির মধ্যে ঘোড়ামারির মাঠ নামে রয়েছে এক চিলতে জমি। সেই জমিতেই গোসাই বাবা বা সাধুবাবার থান রয়েছে। এই স্থানটিকে কেউ বলেন পাগলা বাবার ধাম আবার কেউবা বলেন বুড়ো বাবা ধাম।

চারপাশে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বসতি নেই। অথচ প্রতিবছর এই দিনে সকাল থেকে সন্ধেয় মানুষের ঢল নামে এই স্থানে। এই অঞ্চলের মানুষেরা এখানে মনসা পুজো করেন। অবশ্য মূর্তি নেই মা মনসার। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই পুজোর নেই কোনও নিয়ম বিধি। এখানকার গ্রামবাসীরা আগের দিন রাতে ভাত রান্না করে জল দিয়ে রাখেন, আর পরের দিন দশহরা তিথিতে সেই ভাত খেয়ে থাকেন। বলা যেতেই পারে এদিন গ্রামে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। বুড়ো বাবার পুজোর সঙ্গে মনসা দেবীর পুজো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই স্থান।

আর‌ও পড়ুন: চেনা পোশাকে অচেনা ভূমিকায় এসডিপিও

ফতেপুরবাসীরা বাবার স্থানের কোনও গাছের একটি পাতাও কেউ ছেঁড়ে না। এর কারণ একইসঙ্গে ভয় এবং ভক্তি। তাই এখানে গেলে শ্যাওড়া, ঘেটু ও ডুমুর গাছ দেখতে পাবেন ছাতার মতো ঘিরে রেখেছে পুরো জায়গাটিকে। পুজোর প্রসাদ বলতে খিচুড়ি, ল্যাবড়া, সবজি আর পায়েস। আশপাশের কোন‌ও গ্রামেই এই বিশেষ দিনে কেউ দুধ বিক্রি করেন না। যত দুধ হয় সব এই স্থানে নিয়ে গিয়ে পায়েস তৈরি করে এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিতরণ করা হয়। গ্রামের মানুষেরা স্বতস্ফূর্ত হয়ে চাল, ডাল, দুধ, চিনি দান করেন। বিভিন্ন জায়গায় রান্না করা হয় এবং ভক্তদের ও দর্শনার্থীদের বসিয়ে পেট পুরে খাওয়ানো হয়। গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বিএসএফ জওয়ানরা।

পুণ্যার্থী ও ভক্তদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য তাঁরা পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। বর্তমান সমাজে গ্রাম বাংলাতে এইরকম দৃশ্য বিরল। মেলায় নেই কোন‌ও আড়ম্বর, নেই কোনও হই হুল্লোর। তবে আছে এই মেলাকে কেন্দ্র করে মানবতা। বলা যেতেই পারে স্থানীয় বাসিন্দারা এই লোক উৎসবের মাঝে খুঁজে পান তাঁদের পুরনো দিনের স্মৃতি।

মৈনাক দেবনাথ