মৈনাক দেবনাথ, নদিয়া: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। সমাজের সকল স্তরের মানুষ প্রস্তুত হচ্ছেন তাতে শামিল হওয়ার জন্য। কিন্তু চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মীরা এবং বেশ কিছু জরুরি পরিষেবা দেওয়া মানুষজন অবশ্য এই উৎসব থেকে রয়ে যান ব্রাত্য! ঠিক তেমনই, লাইট মাইক প্যান্ডেল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবের কলাকুশলী কিংবা দলগত নৃত্য অথবা জীবন্ত মডেল সেজে যারা উৎসবে সকলকে আনন্দ দেন আজ তাঁদেরই চোখে দুর্গাপুজো।
একদিকে যেমন মৃৎশিল্পের উৎকর্ষে শান্তিপুরের বিভিন্ন পালবাড়ি থেকে মাটির মূর্তি পাঠানো হচ্ছে দেশে-বিদেশে, একইভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে জীবন্ত মডেল পেটের টানে রওনা দিচ্ছেন অসম কিংবা বনগাঁ অথবা অন্য কোনও দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। ছেলেমেয়ে বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের জামাকাপড় কিনে দিলেও তা পরে পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখার সৌভাগ্য তাঁদের হয়নি। পেটের টানে তারা চললেন ভিন রাজ্যে।
তাঁদের কাজ উৎসব পার্বণে বিভিন্ন জায়গায় যাত্রাপালা ও বিভিন্ন ধরনের নাটক প্রদর্শনী করে দর্শকের মনোরঞ্জন করা। শান্তিপুরে এরকমই রয়েছে একাধিক জীবন্ত মডেলের গোষ্ঠী। যারা একসময় তাঁতশিল্পের পেশায় নিযুক্ত থাকলেও, তাঁতের করুণ পরিস্থিতির পরে তাঁরা বিভিন্ন পেশায় ভাগ হয়ে যান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন এই জীবন্ত মডেলের পেশায় নিযুক্ত। শান্তিপুর এরকম রয়েছে ১০-১২ টি সংস্থা, যাঁদের এক একটি সংস্থার অধীনে ৩০ থেকে ৭০ জন সদস্য সংখ্যা রয়েছে। এই সংস্থাগুলির মধ্যেই একটি সংস্থার এ বছর দুর্গাপুজো উপলক্ষে ত্রিপুরায় বায়না হয়েছে তাঁদের প্রদর্শনী করার জন্য।
আরও পড়ুন : যেন ডাঙায় ডলফিন! কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ারবাস বেলুগা এক্সএল
অঙ্কুশ জীবন্ত মডেল গ্রুপ নামের সংস্থা থেকে পুরুষ ও মহিলা মিলে মোট ২৬ জন শিল্পী রওনা দিলেন এদিন ত্রিপুরার উদ্দেশে। এরমধ্যে ১১ জন মহিলা। তারা শান্তিপুর থেকে রওনা দিয়ে পৌছলেন নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে, এরপর ভোরবেলা নবদ্বীপ ধাম স্টেশন থেকে ট্রেনে করে রওনা। টানা ন’দিন পারফর্ম করে ফিরবেন লক্ষ্মীপুজোর পর। পুজোর দুদিন আগে থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী তারপরে আবারও লক্ষ্মী পুজোতে প্রদর্শনী করে তবেই ফিরবেন তারা। আর এই এতগুলো দিন পরিবার আত্মীয়-স্বজন সমস্ত কিছু ছেড়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে পারফর্ম করবে তারা। বাড়তি উপার্জনের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে তাদের দুর্গাপুজোর আনন্দকে।