পানের চুল এবং কাজল বাগদি

Bangla Video: ‘পান থেকে চুন খসিয়ে’ই জীবন যুদ্ধে লড়ছেন কাজল

বাঁকুড়া: কীভাবে পানের চুন তৈরি হয়ে জানেন? প্রচলিত বাংলা প্রবাদ হল, ‘পান থেকে চুন খসলেই রেগে যান ঘরের কর্তা’। বাস্তবে সেই পানের চুন প্রস্তুত করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন বাঁকুড়ার এক মহিলা।

স্বামী প্রয়াত। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার বাঁকুড়া শহরের ফাঁসিডাঙার বাসিন্দা কাজল বাগদির। সেই তিনি প্রতিদিন রাত ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে এই চুন তৈরি করেন। সংসারে অভাবে ছাপ খুবই স্পষ্ট, তবুও হার না মেনে চুন তৈরি করেই দিন গুজরান করছেন ফাঁসিডাঙার এই মহিলা।

আরও পড়ুন: বেহাল বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকির পারাপার! ক্ষোভে ফুটছে স্থানীয়রা

চুন হল ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি অজৈব উপাদান। শুকনো অবস্থায় চুন সাধারণত সাদা রঙের পাউডারের মত হয়। বাড়িঘরে প্লাস্টার এবং ব্লিচিং পাউডার তৈরি ছাড়াও এই চুন কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার ঝিনুকের খোলস থেকে চুন তৈরি হয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ, বিশেষ করে বয়স্কদের মাঝে পানের সঙ্গে এই চুন ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এই গুঁড়ো চুন বাঁকুড়া শহরের লালবাজার থেকে ১৫০ টাকায় ১০ কেজি কিনে আনেন কাজল বাগদি। সেই চুন রাতে জলে ভিজিয়ে আসতে আসতে ছেঁকে তৈরি হয় পানের চুন। তারপর এই চুন করা হয় বাজারজাত। পানের গুমটি থেকে ছোট চায়ের দোকানে কেনা হয় এই চুন। এই প্রবল খাটনির পর দিন শেষে উপার্জন হয় ২০০-৩০০ টাকা।

কাজল বাগদির বাড়িতে রয়েছেন চারজন মানুষ। বাড়ির অন্যান্য কাজ ছাড়াও সংসার চালাতে এই কাজ করেন কাজল বাগদি। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে বন্ধ থাকে কাজ। রয়েছে যথেষ্ট পরিশ্রম। কখনও ১০ বালতি জল নিয়ে গিয়ে ঢালতে হয় চুন রাখার কুন্ডতে। রয়েছে আলোর অভাব। এরকম একটি পরিবেশেই কাজ করতে হয় কাজল বাগদিকে। কাপড়ে করে ধীরে ধীরে ছেঁকে বের করতে হয় পানে দেওয়া চুন। এই পদ্ধতিতেই দীর্ঘদিন ধরে চুন তৈরি করে বিক্রি করে আসছেন তিনি। এভাবেই হার না মেনে জীবন যুদ্ধে লড়ে চলেছেন তিনি।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী