পশ্চিম মেদিনীপুর : দেবী মহামায়ার স্বর্গালোকে গমনের পর দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে উঠেছিল আপামর সাধারণ মানুষ। সামান্য কটা দিন পর দেবী কালিকার আরাধনায় মেতে উঠবে সকলে। কালীপুজো মানেই আলোর উৎসব, ঘরে ঘরে জ্বালানো হবে মাটির প্রদীপ। জ্বলবে মোমবাতি থেকে বিভিন্ন বাহারি আলো। তবে রাঢ় বাংলার মেদিনীপুরের ঐতিহ্য দেওয়ালি পুতুল। যা এখনও বংশপরম্পরায় বানিয়ে চলেছে বেশ কয়েকটি ব্লকের কুমোর পরিবারেরা। মাঝে তার কৌলিন্য হারালেও এখন ধীরে ধীরে ফের সতেজ হচ্ছে দেওয়ালি পুতুল ব্যবসা। বাজারে বাড়ছে বিক্রির পরিমাণ। তবে অবিভক্ত মেদিনীপুরের নস্টালজিয়া দেওয়ালি পুতুল। যা একটা সময়ে ঘরে ঘরে বেশ জ্বালানো হত।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম কালীপুজো বা আলোর উৎসব। প্রতিটি ঘরেই সলতে দেওয়া মাটির প্রদীপ, মোমবাতি কিংবা বাহারি টিনি বাল্ব জ্বালিয়ে আলোর উৎসবে মেতে ওঠেন প্রত্যেকে। তবে জানেন কি, মেদিনীপুরের লোকইতিহাসের আড়ালে কান পাতলে শোনা যায় জেলার নস্টালজিয়া দেওয়ালি পুতুল। তবে কী এই পুতুল, কেমনইবা দেখতে? কুমোররা কালীপুজোর আগে বেশ কয়েক মাস ধরে বানিয়ে তোলেন এই পুতুল। এই দেওয়ালি পুতুল দেখতে পুতুলের মত। তার দুই হাতে কিংবা চার হাতে থাকে একাধিক প্রদীপ। মূলত মাটি দিয়ে এই পুতুল প্রস্তুত করে তাকে পুড়িয়ে ফের পোড়ানো এই পুতুলের উপর রং করে তৈরি হয় সুন্দর দেখতে দেওয়ালি পুতুল।বাড়ির মহিলারা সেই প্রদীপে তেল, সলতে দিয়ে জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করে। তবে বর্তমান দিনে সেই বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল, তবে ফের মেদিনীপুরের নস্টালজিয়ার চাহিদা বাড়ছে।
আরও পড়ুন : মোগলমারি বৌদ্ধবিহারে এসেছেন? দেখেছেন এক মূর্তি গুলো? ইতিহাস জানেন?
মনে করা হয়, ভূত চতুর্দশী থেকে কালীপুজো পর্যন্ত প্রতিটি বাড়িতে আলো জ্বালানো শুভ। বাজারে বাহারি ইলেকট্রিক আলোর চাহিদা বাড়ায় দেওয়ালি পুতুলের চাহিদা কমে ছিল। তবে বর্তমান দিনে সেই চাহিদা কিছুটা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বাজারে দেওয়ালী পুতুল বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন : ছোট থেকে নেই প্রথাগত তালিম,তবে শিল্পীর হাতের নিপুণতা অবাক করবে
তবে বহু প্রাচীন সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছে জঙ্গলমহল। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরের মির্জা বাজার এবং কেশিয়াড়ী ব্লকের একাধিক কুমোর পরিবারেরা এই দেওয়ালি পুতুল তৈরি করছেন। কালীপুজোর প্রায় দু মাস আগে থেকে শুরু হয় এই দেওয়ালি পুতুলের তৈরির কাজ। বাড়ির মহিলারাও লেগে পড়েন দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে। তবে সকলেই চান বাংলার এই ঐতিহ্য বজায় থাকুক। জঙ্গলমহলের নস্টালজিয়াকে ধরে রাখুক আগামী প্রজন্ম।
রঞ্জন চন্দ