দোতারা নিয়ে গান গাইছেন সুভাষ কর্মকার 

Dotara Making: দোতারাকে সঙ্গী করে দিব্যি আছেন শিলিগুড়ির সুভাষ

শিলিগুড়ি: “ভাল কইরা বাজাও গো দোতারা / সুন্দরী কমলা নাচে…”
এই গান সকলেই শুনেছেন। দোতারার সুরে কমলারা আজকাল নাচে না। বর্তমানে দোতারার জায়গা করে নিয়েছে উকুলেলে। কালের বিবর্তনে আধুনিক সংস্কৃতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হারিয়ে গেছে এমন‌ই অনেক বাদ্যযন্ত্র। এসবের জায়গায় দখল করে আছে আধুনিক ঘরানার নানান বাদ্যযন্ত্র। বর্তমানে সঙ্গীতে পাশ্চাত্য যন্ত্রের বেশি ব্যবহার এবং দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রতি অনান্তরিকতা ও উদাসীন মনোভাবের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দোতারা। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রশিল্পীরা দীর্ঘদিন চর্চা করেও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনার সুযোগ, পরিবেশের অভাবে চর্চার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

এমনি পরিস্থিতিতে দোতারা চর্চার ধারাকে অব্যাহত রাখতে বিগত কয়েক বছর ধরে নিজের হাতে দোতারা তৈরি করছেন শিলিগুড়ির ক্ষুদিরাম কলোনির বাসিন্দা সুভাষ কর্মকার। ছোটবেলার বাবার কাছে দোতারায় গান শেখেন। দোতারা বাদক হিসেবে প্রচুর জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন। তবে মাঝে পেটের টানে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু দোতারাকে তিনি ভুলতে পারেননি সুভাষ। নিজের হাতে দোতারা বানিয়ে এখন তাঁর দিব্যি কাটছে। নাতিদের নিয়ে মাঝে মাঝে দোতারার পাঠও দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, এই দোতারাকে সম্বল করেই আমার বেঁচে থাকা। এখন সবাই দেশী বাদ্যযন্ত্র ভুলে পাশ্চাত্য বাদ্যের প্রেমে পড়েছে। তবে আমি আমার মাটির জিনিসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনে লবণ সহনশীল বিকল্প চাষ! প্রশিক্ষণ বাসন্তী ও কুলতলিতে

সুভাষবাবু আরও জানান, এখন ক্রেতাও সঠিকমূল্য না পাওয়ায় বাদ্যযন্ত্রের প্রস্তুতকারক ও মেরামতকারীরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। ধীরে ধীরে এসব বাদ্যযন্ত্রের ক্রেতা কমে যাওয়ায় কারিগরদেরও এখন আর সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই পেটের দায়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য পেশায়। তবে তিনি কিন্তু হাল ছাড়েননি। শিলিগুড়িতে সুভাষবাবু একমাত্র দোতারা প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিত। অর্ডার অনুযায়ী তিনি দোতারা তৈরি করে থাকেন। এক একটা দোতারা তৈরি করতে তাঁর তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। সকাল থেকেই ছেনি, হাতুড়ি, বাটালি নিয়ে বসে পড়েন দোতারা তৈরিতে। এর মাঝেই নাতি এসে গান শোনাতে বললে তাদের আবদার মেটাতে কিন্তু ভোলেন না সুভাষ

অনির্বাণ রায়