দেবী দুর্গার পটোচিত্র

Durga Puja 2024: কনকাঞ্জলিও দেন পুরুষরা! এই বনেদি বাড়িতে ৪০০ বছরের দুর্গাপুজো হয় পটচিত্রে

রাহী হালদার, হুগলি: চুঁচুড়ার পালবাড়ির দুর্গাপুজো পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম বনেদি বাড়ির পুুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির দুর্গাপূজার বয়স প্রায় ৪০০ বছরের কাছাকাছি। তবে অন্যান্য বনেদি বাড়ির মতো এখানে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে মায়ের পুজো করা হয় না। বরং, পালবাড়ির এই পুজোতে পটচিত্রের মাধ্যমে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়, যা বাংলার সংস্কৃতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে এখনও পালিত হয়ে আসছে।

পালবাড়ির কুলদেবতা হলেন রাধামাধব গোপাল জীউ। এই দেবতা এবং দেবমূর্তি পালবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন বংশের পূর্বপুরুষ সেবক রামপালের সময়ে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, কোনও এক সাধু সেবক রামপালকে কুলদেবতা হিসেবে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি উপহার দেন। তবে সেবক রামপালের তৎকালীন আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এই দেবমূর্তিগুলি ঘরে বন্দি করে রাখেন। পরে একদিন স্বপ্নাদেশে তাকে কুলদেবতার পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই রাধাকৃষ্ণের পুজো শুরু হয় এবং সেবক রামপাল ধীরে ধীরে বিপুল ধন-সম্পদের অধিকারী হন। সেই সময় থেকেই পালবাড়িতে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু অন্যান্য বনেদি বাড়ির পূজার মতো এখানে কখনোই মূর্তি আনা হয় না। মায়ের পূজা হয় পটচিত্রের মাধ্যমে, যা পাল পরিবারের ঐতিহ্যবাহী আচার।

আরও পড়ুন : ২ বছর বয়সেই মুখস্থ কবিতা থেকে শুরু করে ফুল-ফল-পশুপাখির নাম! তাক লাগাচ্ছে খুদে

পালবাড়ির দুর্গাপুজোর কিছু বিশেষ নিয়মাবলি রয়েছে, যা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আজও মেনে চলা হয়। পুজোর দিনগুলোতে পাল পরিবারের সকলে, যেখানেই থাকুন না কেন, একত্রিত হয়ে মায়ের পুজোয় অংশ নেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন বাড়ির সমস্ত সদস্য একত্রে খাওয়া-দাওয়া এবং উৎসবে মেতে ওঠেন। এই পুজোর আচার-অনুষ্ঠান বিশেষভাবে পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। মাকে নৈবেদ্য সাজানো থেকে শুরু করে কনকাঞ্জলি দেওয়া এবং পুজোর শেষ আচার-বিসর্জন পর্যন্ত সবকিছুই পাল পরিবারের পুরুষরা করেন। তবে এই বিসর্জন অনন্য, কারণ এখানে মূর্তি নেই, যা বিসর্জন দেওয়া হবে। পুজো শেষে কুলদেবতা রাধামাধব তাঁদের মন্দিরে ফিরে যান এবং পটচিত্রটি পুজোর সমাপ্তির পরে যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়। আজকের দিনে, পালবাড়ির এই পটচিত্রের মাধ্যমে মা দুর্গার পূজা শুধু একটি পুজো নয়, এটি বাংলার প্রাচীন বনেদি পরিবারের সংস্কৃতি, আচার এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন।