জলপাইগুড়ি: এই বাংলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল বলা হত চা-কে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এবার কি সেই দিন ফুরোল? অতি চাহিদার ফার্স্ট ফ্ল্যাশ এবার কি আদৌ হবে? আকাশের দিকে তাকিয়ে এগুলোরই উত্তর খুঁজছেন চা শ্রমিক থেকে মালিক সকলে।
শীতের রোদ গায়ে মেখে সবুজ রঙের কচি কচি পাতা যেন সদ্য আড়মোড়া ভাঙছে। বসন্তকালের শুরুতে উত্তরের চা বাগানে এতদিন এমনই ছবি দেখে এসেছে সবাই। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ণের থাবায় খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে সবকিছু। যথারীতি তার প্রভাব পড়েছে চা চাষে। স্বাদে এবং গন্ধে মরসুমের যে কোনও সময়কে পিছনে ফেলে দেয় শীতঘুম ভাঙা এই সময়ের চা পাতা। চা বাগান পত্তনকারী সাহেবরা যে পাতার নাম রেখেছিলেন ‘ফার্স্ট ফ্ল্যাশ।’
টি বোর্ডের নির্দেশে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে ফার্স্ট ফ্ল্যাশে’র চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে। এই ফার্স্ট ফ্ল্যাশের চা পাতা বলতে বোঝানো হয় দুটি পাতা, একটি কুঁড়ি। ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে রুটি-রুজির অন্যতম অবলম্বন এই চা চাষ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ফার্স্ট ফ্ল্যাশের উৎপাদন। এই সময় বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়াতেই মূলত এই অবস্থা। অক্টোবর মাস থেকে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে চলছে চা গাছে প্রয়োজনীয় জলের জোগান। সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়ছে পোকার আক্রমণ। চা গাছ বাঁচাতে ব্যবহার বাড়ছে কীটনাশকের ব্যবহার। যার ফলে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। আর এতেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না উৎপাদন খরচ।
এই বছর পরিস্থিতি বিশেষ একটা বদলাবে না বলে মন্তব্য চা বাগান মালিক গোষ্ঠীর সংগঠন ডিবিআইটি-এর সচিবের মুখেও। লাভের বদলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে উত্তরের চারটি জেলার শিল্প চা। কপালে ভাঁজ পড়েছে জলপাইগুড়ির চা চাষিদেরও।ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতে চলেছে তবুও দেখা নেই বৃষ্টির, ঘন কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে চা বাগান। এরফলে আগামী দিনে আরও বেশ কিছু চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে বিশেষ একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে আশঙ্কা শ্রমিকদের।