পথচলা শুরু বহু আগে. নিজামের রান্নাঘরেই প্রথম তৈরি হয়েছিল বিরিয়ানি। সময়টা আঠারো শতকের মাঝামাঝি। তারপর ধীরে ধীরে এই বিশেষ পদ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।
আহা! নাম শুনলেই যেন জিভে জল। চিকেন হোক বা মটন, বিরিয়ানি ভালবাসেন না এমন মানুষ কমই আছে।
ফার্সী “বিরিয়ান” শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছিল বিরিয়ানির। অনেকেই হয়তো জানেন না!
ভারতে হায়দরাবাদি বিরিয়ানি বেশ জনপ্রিয়। এটিও একপ্রকার দম বিরিয়ানি। তবে রাস্তার ধারে আলু দিয়ে তৈরি বিরিয়ানির কোনও জবাব নেই। বাংলা ছাড়া আর কোথাও কিন্তু বিরিয়ানিতে আলু থাকে না।
‘বিরিয়ান লাভার’-দের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। কলকাতা, হায়দরাবাদ থেকে লখনউ নানা ধরনের বিরিয়ানির স্বাদ নিতে চান সকল বিরিয়ানি প্রেমীরা। যাঁরা ডায়েট করেন তাঁদের কাছে চিট-ডে মানেই বিরিয়ানি খাওয়া…
আচ্ছা বলুন তো বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় কেন থাকে? অনেকেরই বিশ্বাস বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল রঙের কাপড় বাঁধা হয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। তবে এই ধারণা আদৌ সম্পূর্ণ ঠিক না।
কলকাতায় এখন বিরিয়ানি বাঙালির প্রিয় খাবার! ওয়াজেদ আলি শাহর হাত ধরেই বাংলায় বিরিয়ানির প্রবেশ! বাঙালি এখন এই খাবার ছাড়া ভাবতেই পারেন না!
মূলত রাজকীয় ও দামি খাবার বোঝাতে বিরিয়ানির হাঁড়ির গায়ে লাল কাপড় জড়িয়ে রাখার চল শুরু হয় মোঘল আমল থেকেই।
অতীত ইতিহাসের সেই আভিজাত্য এখনও বর্তমান। সাধারণ মানুষ দূর থেকে লাল কাপড় দেখেই বুঝে যান কোনখানে রয়েছে বিরিয়ানির দোকান।
কেরল: রেস্তরাঁয় বিরিয়ানি জাতীয় খাবার খেয়ে মৃত্যু মহিলার। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে কেরলে। পাশাপাশি ওই একই খাবার খেয়ে বমি, ডায়ারিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৭৮ জন। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিশূর জেলার পেরিনজানাম এলাকার একটি রেস্তরাঁয়।
দেশের সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কেরালার খাদ্যে বিষক্রিয়ার এই ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। রেস্তোরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভে দেখায় স্থানীয়রা। স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানি জাতীয় একটি খাবার খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা-সহ ১৭৮ জন। জানা গিয়েছে, ওই খাবারে ছিল মেয়োনিজ। অভিযোগ এই মেয়োনিজ থেকেই খাদ্যে বিষক্রিয়া।
আরও পড়ুন: দিনভর বৃষ্টি, আসছে বর্ষাকাল! বাইরে বেরিয়েই ভিজে চুপচুপে? সহজ টিপস্ মনে রাখুন, ভিজলেও ঠান্ডা লাগবে না
সপ্তাহান্তের দিন শনিবার ওই রেস্তোঁরাতে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর গ্রাহক। বিরিয়ানি জাতীয় ওই খাবার অর্ডারও করেছিলেন প্রচুর গ্রাহক। খাওয়ার পর থেকেই বহু মানুষ অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। বমি, পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: শিয়ালদহ ডিভিশনে দু’দিন চলবে স্পেশ্যাল ট্রেন! কোন দিন পাওয়া যাবে? ক’টায় ছাড়বে? জেনে নিন সমস্ত বিস্তারিত
দ্রুত অসুস্থ গ্রাহকদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান। এ ছাড়াও খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। কীভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া হল, তা তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে বলেই জানা গিয়েছে।
বিরিয়ানি খেতে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়। বর্তমানে বিরিয়ানি এদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু এই বিরিয়ানি ভারতীয় খাবার নয়, এটিও মুঘলদের খাবার। মনে করা হয়, এটি এসেছে ইরান থেকে। মনে করা হয় ভারতে মুঘল আমল থেকেই বিরিয়ানি খাওয়া শুরু হয়। মুঘলরা চলে গেলেও তাদের প্রসিদ্ধ বিরিয়ানি আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমান জনপ্রিয়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে খাবারের নানারকম প্রকারভেদ দেখা যায়। এত রকমারি খাবার খুব কম দেশের লোকেরাই খেয়ে থাকেন। তবে ভারতে খুবই জনপ্রিয় এমন অনেক খাবার রয়েছে যা এদেশের নয়। বিভিন্ন সূত্রে বিদেশিদের হাত ধরে এদেশে শুরু এই সকল খবারের চল। পরে তা আমরা আমরা আপন করে নিয়েছি। আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি তৈরি হয়। প্রত্যেকটির স্বাদ, বিশেষত্ব আলাদা। যেমন কলকাতা বিরিয়ানি খুবই হাল্কা স্বাদের এবং এতে অবশ্যই একটি বড় সাইজের আলু পাওয়া যায়।
হায়দরাবাদি বিরিয়ানি প্রসিদ্ধ তার দুর্দান্ত সুঘ্রাণের জন্য। দক্ষিণ ভারতীয় মশলা দিয়ে এই বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। এটি দু’ধরনের হয়। কাচ্চি ও পাক্কি বিরিয়ানি।
কাচ্চি বিরিয়ানিতে মাংসটি একবারে বিরিয়ানির চালের সঙ্গেই রান্না হয়। একবারে বিরিয়ানির চালের লেয়ারের ভিতর কাঁচা মাংস বসানো থাকে।
পাক্কি বিরিয়ানির ক্ষেত্রে মাংসটি আলাদা ভাবে পুরোপুরি রান্না করে তারপর বিরিয়ানির লেয়ারে বসিয়ে রান্না করা হয়।
আওয়াধি বা লখনউই বিরিয়ানির বিশেষত্ব হল এর সুগন্ধ ও দমে বসিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয়।
মোগলাই বিরিয়ানি খুবই বিলাসি খাবার। এটি ভেজা দেখতে, এতে বাদাম ও ড্রাই ফ্রুটস মেশানো থাকে।
দম পুখত বিরিয়ানি বানাতে সময় খানিক বেশি লাগে। ভাত ও মাংস আলাদা ভাবে রান্না হয়। হাঁড়িতে খুব কম আঁচে ধীরে ধীরে রান্না হয়। লেয়ারে মাংস ও ভাত সাজানো হয়।
বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। রোজ বিরিয়ানি খেতে মন চায়? অনেকে কিন্তু বিরিয়ানি স্বাস্থ্যকর খাবার বলে মোটেও মনে করেন না।
কিন্তু জানেন কি বিরিয়ানি খেলে শরীরে কী হয়? বিরিয়ানি কি সত্যিই অস্বাস্থ্যকর খাবার? এই বিষয়ে জানিয়েছেন নিউট্রেশনিস্ট এবং শিক্ষিকা পৌলমী সরকার।
তিনি বলছেন, বিরিয়ানিতে থাকে চাল, মাংস এবং তেল। ফলে বিরিয়ানি খেলে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি ঢোকে। যা শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
পৌলমী দেবী আরও জানিয়েছেন, বিরিয়ানিতে থাকে হলুদ, জাফরানের মতো মশলা। যেগুলি আমাদের পরিপাকতন্ত্রে হজমের সাহায্য করে। তবে বেশি মশলাদার বিরিয়ানি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলছেন, বিরিয়ানি তৈরির সময় যে সমস্ত মশলাগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত আদা, রসুন, গোলমরিচ ইত্যাদি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন করে।
Just another WordPress site