Tag Archives: Higher Education

WB HS Results 2024: উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে জয় জয়কার বীরভূমের, আনন্দের ছবি গোটা জেলায়

বীরভূম: আজ প্রকাশিত হল উচ্চমাধ্যমিক এর ফলাফল। পরীক্ষার ৬৯ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ হয়। আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে ফল প্রকাশ করেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জিব ভট্টাচার্য। এই বছর মোট ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। এবছর পাশের হার ৯০%। পাস করেছে মোট ৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ছাত্রছাত্রী। এবং প্রথম দশের মধ্যে স্থান করেছে মোট ৫৮ জন।  প্রথম স্থান অধিকার করেছে অভীক দাস তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। ১০ মে ছাত্রছাত্রীরা মার্কশিট হাতে পাবে। আর উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিন জয়জয়কার বীরভূমে।

আরও পড়ুনঃ উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত, বাড়ল পাশের হার, এ বছর পাশ ৯০ শতাংশ পড়ুয়া

৫০০ এর মধ্যে ৪৯১ পেয়ে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে রামপুরহাট জিতেন্দ্র লাল বিদ্যাভবন এর ছাত্র সৌমজিৎ নন্দী। বীরভূমে রামপুরহাট থানার অন্তর্ভুক্ত রামরামপুর শান্তি পাড়ার বাসিন্দা সৌমজিৎ। ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি গান বাজনা এবং খেলার প্রতি ভালবাসা রয়েছে তার। বাবা কাঞ্চন নন্দী আয়াশ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক এবং মা তৃপ্তি কুন্ডু সন্ধিপুর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের অদম্য সহযোগিতায় আজ সৌমজিৎ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে কোন স্থান না করলেও ৭০০ এর মধ্যে ৬৭১ নম্বর পাই।

সৌমজিৎ জানাই সারাদিন তার কোনও পড়াশোনা নির্ধারিত সময় ছিল না। যখনই সময় পেত তখনই পড়াশোনা করত সৌম্যজিত। আগামী দিনে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে সৌমজিৎ এর। পড়াশোনার প্রিয় বিষয় মধ্যে ছিল ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং বায়োলজি। ছোট থেকে গান বাজনার প্রতি ভালবাসা থাকলেও মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পড়াশোনার চাপে সেই ভাবে আর গানের রেওয়াজ করা হয়ে ওঠে না সৌমজিৎ।  তবে বাড়ির মধ্যেই খেলাধুলা করে সে।

সৌম্যজিত-এর বাবা কাঞ্চন নন্দী জানান “সৌমজিৎ ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ভেবেছিলাম ছেলে কোনও একটা স্থান অধিকার করবে তবে সেই সময় স্থান অধিকার না করলেও ভালো ফলাফল করেছিল ছেলে। আমি প্রচন্ডভাবে সহযোগিতা করেছিলাম পড়াশোনা করানোর জন্য এর পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও প্রচন্ডভাবে সহযোগিতা করেছিল।” তিনি আরও বলেন আগামীদিনে ছেলের যা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে সেই নিয়ে পড়াশোনা করাবেন ছেলেকে।

সৌভিক রায়

Success Story: বাবা মাছ ব্যবসায়ী, পূর্বস্থলীর স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করা ছাত্র গবেষণা করতে আমেরিকার পথে

বনোয়ারীলাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান: পরিবারিক বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে, পড়াশোনায় বড় সাফল্য পেলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার এক যুবক । মফস্বল থেকে তিনি পাড়ি দেবেন সোজা বিদেশের মাটিতে। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় এই যুবককে নিয়ে গেল সফলতার আরও এক ধাপে। পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী দু’নম্বর ব্লকের পারুলিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা ঋত্বিক হালদার। অতি সম্প্রতি তাঁর ডাক এসেছে সুদূর আমেরিকা থেকে। আমেরিকায় অর্গানিক কেমিস্ট্রি নিয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি  এই সুযোগ পাওয়ার জন্য স্বভাবতই খুশি কেমিস্ট্রির এই ছাত্র।

ঋত্বিক জানিয়েছেন, বিদ্যালয় স্তরের পড়াশোনা প্রথমে স্থানীয় রায়দোগাছিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন করেন ।পরবর্তীতে ঋত্বিক এক বছর পড়াশোনা করেন বেলুড় রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে। এর পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে । এই প্রসঙ্গে ঋত্বিক জানান, গত পাঁচ বছর ধরে পুণায় পড়াশোনা করছেন। কেমিস্ট্রিতে সাম্মানিক স্নাতক হয়েছেন । শেষ অক্টোবর মাসে আমেরিকায় পিএইচডি করার জন্য আবেদন করেছে। কিছুদিন আগে তাঁর অফার লেটার এসেছে এমআইটি থেকে । তিনি অর্গানিক কেমিস্ট্রির উপর পিএইচডি করতে চলেছেন।

গত অক্টোবর মাসে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করেছিলেন ঋত্বিক হালদার । দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের পর এবার সেখান থেকেই ডাক এল তার। ঋত্বিকের বাবা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। অতীতে পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিজের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। আজ সেই পড়াশোনাকে সঙ্গী করেই ঋত্বিক যাবেন আমেরিকা। স্বভাবতই ছেলের এই সাফল্যে খুশি ঋত্বিকের মা।

আরও পড়ুন : বাড়ির বাগানে বিশেষ কোণে রাখুন ফল ও ফুলের গাছ, সংসারে হু হু করে আসবে টাকা, নইলে ঘোর অনর্থ!

তিনি বলেন, “এর আগেও ঋত্বিক তিন,চার জায়গায় পি এইচ ডি করার সুযোগ পেয়েছে । কিন্তু এ বার এখানে যাবে । আমি চাই ঋত্বিক আরও বড় হোক এবং দেশের জন্য কাজ করুক । ছোট থেকেই ঋত্বিক বলত- আমি অনেক পড়াশোনা করব, আজ ও বড় জায়গায় পৌঁছেছে আমি খুব খুশি ।”

কেমিস্ট্রি নিয়ে এই গবেষণা আগামী দিনে মানুষের কল্যাণে দরকার হবে বলে মত পূর্বস্থলীর ঋত্বিক হালদারের। তার স্বপ্ন আগামী দিনে বিজ্ঞানী বা অধ্যাপক হওয়ার। আর সেই ইচ্ছে নিয়েই এবার আমেরিকা পাড়ি দেবেন পূর্বস্থলীর ঋত্বিক হালদার।

Success Story: ত্রিপল ছাউনির কুঁড়েঘরে শয্যাশায়ী বাবা, মা বাঁধেন বিড়ি, হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী তরুণ IIT হয়ে গবেষণার জন্য এ বার DRDO-তে

সৈকত শী, পাঁশকুড়া: স্বপ্নপূরণ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরেই দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রটি। মাথার উপর ছাদ নেই তবুও স্বপ্ন পূরণের অদম্য জেদ আর লড়াই একে একে সমস্ত ধাপ পূরণ করে মিলল ছোটবেলার দেখা সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ। ঘর বলতে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া কুঁড়ে। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। ফলে সংসার চালাতে মা বাঁধেন বিড়ি। এবার সেই পরিবারের ছেলে ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন থেকে ডাক পেলেন। দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রের এই সাফল্যে খুশি, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে এলাকাবাসী।

দেশের সুরক্ষায় নিজেকে শামিল করার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সেই স্বপ্নই এখন সফল। পাঁশকুড়ার সুদীপ মাইতি সুযোগ পেয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও-তে। পাঁশকুড়া ব্লকের পুরুষোত্তমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মহাম্মদ মুরাদ মাইতি পাড়া এলাকার বাসিন্দা সুদীপ। বৃদ্ধ বাবা গোবিন্দ মাইতি। পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। তাই, জীবনভর একের পর এক অট্টালিকা নির্মাণের কাজে যুক্ত থাকলেও অভাবের তাড়নায় নিজের একখান ঘর তৈরি করা হয়ে ওঠেনি গোবিন্দবাবুর।

তবে কঠিন এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী নীলিমাদেবী। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর খরচ মেটাতে তিনিও বিড়ি বাঁধেন। এভাবেই দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। জোটেনি সরকারি আবাস যোজনার বাড়িও। তাই শতচ্ছিন্ন ত্রিপল ঘেরা বাড়িতেই সপরিবারে বসবাস। তাদেরই একমাত্র ছেলে সুদীপ আজ স্বপ্নের উড়ানের পথে।

আরও পড়ুন : ভিক্ষাজীবী থেকে হন ট্যাক্সিচালক, যাত্রীদের অর্থ সাহায্যে নিজের গ্রামে স্কুল, অনাথাশ্রম তৈরি করেছেন এই স্কুলছুট

চক দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রামের স্কুলেই তাঁর হাতেখড়ি। তবে ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন সুদীপ। বিজ্ঞান নিয়ে পূর্বচিলকা লালচাঁদ হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশের পর শিয়ালদহের পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা। এর পর কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি টেক। বর্তমানে আইআইটি গুয়াহাটিতে এম টেক-এ পাঠরত।

তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই। দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে ডিআরডিও-তে যোগদান করা। অবশেষে মিলল সেই সুযোগ মিলল সুদীপের। ত্রিপল ঘেরা পাঁশকুড়ার এই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেটি চলতি বছরের শুরুতেই ডিআরডিও দেহরাদুন থেকে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য ডাক পান। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই খুশির হওয়া আত্মীয় পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে।

সুদীপ জানান, “গত বছর আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোমর ভেঙে অসুস্থ বাবা আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চালাতে মা এখনও বিড়ি বাঁধেন। মাথার উপর ছাদটুকুও নেই। তবুও স্বপ্ন ছিল দেশের সুরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। আর সেই লক্ষ্যে এখন অনেকটাই সফল হতে পেরে খুশি।”

সুদীপের এই কঠিন লড়াইয়ে বেশ খানিকটা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আগেই এগিয়ে এসেছিলেন চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুলের শিক্ষক শান্তনু চক্রবর্তী-সহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। অবশেষে সব প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে ডিআরডিও-র মতো জায়গায় সুযোগ পেয়েছে! অভাবকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই অবশেষে সাফল্যের পথ দেখলেন তিনি।