সেবক দেবশর্মা, মালদহ-ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে স্লিপ দিলেও দেওয়া হতো না রেশন সামগ্রী। দীর্ঘ দুই থেকে তিন মাস ধরে চলছিল এই বেনিয়ম। রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেন এলাকাবাসী। এরপরেই তদন্তের ভিত্তিতে রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ। এক লক্ষ টাকা জরিমানা। প্রশাসনিক তৎপরতায় খুশি উপভোক্তারা। যদিও বকেয়া দুইমাসের রেশন সামগ্রী এখনও মেলেনি। দ্রুত বকেয়া রেশন সামগ্রীও পেয়ে যাবেন উপভোক্তারা আশ্বাস প্রশাসনের।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর- ১ নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষণপুর এলাকার রেশন ডিলার শ্যামানন্দ সিংহ। ওই এলাকার উপভোক্তাদের অভিযোগ ছিল, তিনি দুই মাস ধরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নিচ্ছেন। নিয়ে স্লিপ দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু, রেশন সামগ্রী দিচ্ছেন না। দুয়ারে রেশন প্রকল্পও সঠিকভাবে রূপায়িত হচ্ছে না। বারবার বলার পরেও কোন সুরাহা হয়নি। এরপরেই হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌমেন মন্ডলের কাছে গণ ডেপুটেশন দেন উপভোক্তারা। এরপরেই বিডিও- র নির্দেশে তদন্তে নামে খাদ্য দফতর। এলাকায় গিয়ে উপভোক্তাদের অভিযোগ শোনেন তদন্তকারীরা। এরপরেই প্রথমের শোকজ এরপর ব্যক্তিগত শুনানি এবং শেষে উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় ডিলারের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হল। এক লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত রেশন ডিলার শ্যামানন্দ সিংহকে।
উল্লেখ্য, এর আগেও একবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই জরিমানা মেটালেও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বলে প্রশাসনিক তদন্তে উঠে এসেছে। এদিকে, ওই রেশন দোকানের উপভোক্তাদের বর্তমানে অন্য দোকান থেকে মালপত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এই মুহূর্তে অন্য ডিলারের কাছ থেকে নিয়ম মেনেই পাচ্ছেন রেশন সামগ্রী। কিন্তু, বকেয়া দুই মাসের সামগ্রী এখনও পাননি। প্রশাসনের পদক্ষেপে খুশি হলেও উপভোক্তাদের দাবি, তাঁদের অধিকারের বকেয়া সামগ্রী দ্রুত দিতে হবে। বকেয়া সামগ্রী উপভোক্তারা দ্রুত পেয়ে যাবেন আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ডিজিটাল ব্যবস্থা কেড়ে নিয়েছে ৬২ বছরের প্রবীণ এক নাগরিকের রেশন ব্যবস্থা। তবে, শেষ বয়সে এসে রেশন কার্ড পেয়ে খুশি প্রবীণ নাগরিক তফুরান মোল্লা। জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা তফুরান মোল্লা। বয়স ৬২ বছর। স্বামী ও ছেলে তাঁকে দেখে না, এক টুকরো জায়গার ওপর প্লাস্টিক ঘিরে বসবাস করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ পুরানো রেশন কার্ড থেকে যখন ডিজিটাল কার্ড তৈরি প্রক্রিয়া চলছিল সেই সময় তাঁর নাম বাদ পড়ে যায়।
তাঁর বয়সী নাগরিকরা যখন খাদ্য সুরক্ষা যোজনার কার্ডে সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তিনি ওই কার্ড হাতে না পাওয়ায় সমস্ত রকম সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এরপর তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে আরম্ভ করে পৌরপ্রধানের কাছে একাধিকবার গিয়েও কোন সুরাহা হয়নি তাঁর। কীভাবে সংসার চালাবে তা নিয়েও তিনি বারে বারে চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন। সেভাবে তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা ও ছিল না যদি কোনোভাবেই এই রেশনের সামগ্রী টা পেত তাহলে হয়তো কোনওভাবে তাঁর দুবেলা দু’মুঠো খাওয়ার অন্ন জুটে যেত। যদিও কোনভাবেই চলতো তাঁর সংসার।
২০২২ এ জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার পৌর বোর্ড পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে পরিবর্তন হয় সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও। এরপর জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার কাছে গত দুমাস আগে ওই মহিলা তাঁর খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ড এখনও পায়নি বলে অভিযোগ করেন। নিজের ওয়ার্ডের প্রবীণ ওই মহিলার কথা গুরুত্ব দিয়ে কাউন্সিলার রেশন কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং মাত্র দু মাসের ব্যবধানে ওই মহিলার নামে খাদ্য সুরক্ষা যোজনার নতুন কার্ড তৈরি করে তুলে দিলেন তার ওয়ার্ডের প্রবীণ মহিলা নাগরিকের হাতে।