আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান : আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং নজরদারির ফলে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলায় কুষ্ঠ রোগকে লো-এনডেমিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমান জেলায় চিন্তা বাড়াচ্ছেন কুষ্ঠরোগীরা। সূত্রের খবর, বিগত চার মাসে একশোর বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন ৫১ জন মহিলা। পাশাপাশি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। উপদ্রব কমে যাওয়ায় কিছুটা নজরদারি কমেছিল। আর সেই সুযোগে আবার থাবা বসাতে শুরু করেছে কুষ্ঠ রোগ। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বাড়ছে প্রাদুর্ভাব।
উল্লেখ্য, কুষ্ঠ রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিজ্ঞানসম্মত নাম মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলে এই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়েছিল। এই রোগে দেহে এক বা একাধিক দাগ দে.খা যায়। সেখানে কোন অনুভূতি থাকে না। লোম থাকে না। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হলে দেখা দেয় নার্ভের সমস্যা। প্রথমদিকে খুব বেশি সমস্যা না হওয়ায় অনেক রোগী এতে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এর ফল হতে পারে মারাত্মক। আক্রান্ত রোগী বিকলাঙ্গ হতে পারেন। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে। হঠাৎ করে কেন আবার জেলায় প্রাদুর্ভাব বাড়ছে কুষ্ঠ রোগের? যা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে নেওয়া হয়েছে নানা সিদ্ধান্ত।
স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর মানুষ জেলায় প্রবেশ করেন। তার ফলে হঠাৎ করেই আবার পশ্চিম বর্ধমান জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও আবার জেলা জুড়ে এলসিডিসি অর্থাৎ লেপ্রসি কেস ডিটেকশন ক্যাম্পেন শুরু হবে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে এডিডিএ কনফারেন্স হলে একটি বৈঠক হয়েছে। যেখানে হাজির ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনুস। তিনি বলছেন, এলসিডিসি আবার শুরু হচ্ছে। এর ফলে রোগীদের তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বেশি করে আসবে। যত দ্রুত তথ্য আসবে, তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা দেওয়া যাবে। তাদের রোগ মুক্ত করা যাবে।
প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যানে বিচারে বাংলায় কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুব বেশি উদ্বেগজনক নয়। কিন্তু পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহারে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে বলেই খবর। এমন অবস্থায় তারই প্রভাব পড়ছে পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। এমনটাই অনুমান স্বাস্থ্য দফতরের। কারণ পড়শি রাজ্যগুলি থেকে অনেকেই কাজের জন্য এই জেলায় আসেন। উল্লেখ্য, এই সংক্রমণ হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে এই তথ্য পাওয়ার পরেই স্বাস্থ্য দফতর বেশ নড়েচড়ে বসেছে। বেশি সংখ্যক রোগীর স্ক্রিনিং করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ দ্রুততার সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসা খুব জরুরি। নয়তো সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে সুস্থ করে তোলা যায় রোগীদের।