সুজিত বাবু 

Teachers Day 2024: বয়সের ভারে অবশেষে বন্ধ বর্ধমানের ২ টাকার পাঠশালা!

পূর্ব বর্ধমান: একসময় ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে গমগম করা উঠোন আজ নীরব। বয়সের অনিবার্য প্রভাবে স্তব্ধ সদাই ফকিরের পাঠশালা। মন খারাপ দু’টাকার মাষ্টারমশাইয়ের। পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা এই শিক্ষকের কর্মজীবন রীতিমত অবাক করার মত।

জেলার আউশগ্রামের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা বছর আশির সুজিত চট্টোপাধ্যায়। যিনি পেশায় একজন অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। বছরের পর বছর ধরে এই ব্যক্তি যুক্ত থেকেছেন শিক্ষকতায়। দীর্ঘ চল্লিশ বছর শিক্ষকতা করেছেন রামনগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৪ সালে অবসর নেন তিনি। কিন্তু অবসর নিলেও ছেদ পড়েনি তাঁর শিক্ষকতায়। কেবল মাত্র ছাত্রদের কথা ভেবে শুরু করেন টিউশনি পড়ানো। সরকারি বিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পরেও চলতে থাকে ছাত্রদরদী এই শিক্ষকের শিক্ষকতা।

আরও পড়ুন: ফুটবল খেলে ফেরা হল না বাড়ি, হাতির আক্রমণে রাস্তাতেই মৃত্যু যুবকের

সদাই ফকিরের পাঠশালা নামে একটি পাঠশালা খুলে ছাত্র পড়ানো শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যুক্ত ছিলেন সেই কাজে। কিন্তু বয়সের ভারে আজ বন্ধ সেই পাঠশালা। ইচ্ছা থাকলেও বয়স আর সঙ্গ দেয় না। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে তাঁকে বন্ধ করতে হয়েছে পাঠশালা। অথচ এক সময়ে কার্যত সারাদিন বাড়ির উঠোনে পড়ুয়াদের আনাগোনা লেগেই থাকত। কিন্তু সেই উঠোন আজ ফাঁকা। সুজিত বাবুর কথায়, ওদের কষ্ট হয় বুঝতে পারি। কিন্তু আমার আর কিছু করার নেই।

এই প্রসঙ্গে অশীতিপর প্রবীণ শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, গত বছর অবধি পড়িয়েছি। কিন্তু এই বছর থেকে পড়ানো বন্ধ করেছি। শরীর ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে লাগল। বাড়ির লোকেরাও বারণ করল। সেই জন্য আমি পড়ানো বন্ধ করেছি। তবে এখনও অনেকেই খবর নিতে আসে। পড়ানোর জন্য বলতে আসে। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে আমি আর পড়াতে পারি না। আমারও খারাপ লাগে।

আগে সকাল, দুপুর এবং রাত মিলিয়ে প্রায় হাজারের কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী পড়তে আসত এই পাঠশালায়। গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করে তাঁর পাঠশালার বাৎসরিক বেতন ছিল মাত্র ২ টাকা! এই কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার।

২০২১ সালে তাঁর হাতে পদ্মশ্রী পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।আসলে সুজিতবাবুর কাছে শিক্ষকতা কেবল তাঁর পেশা নয়, এটি তার নেশাও বটে। শিক্ষকতার পাশাপাশি সুজিত বাবু অবদান রেখেছেন সামাজিক অন্যান্য কাজেও। মূলত পেনশনের টাকা থেকেই সামাজিক নানান কাজকর্ম করেছেন সুজিত চট্টোপাধ্যায়।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী