শিলিগুড়ি: তখন বিকেল তিনটে বাজে, এক হাতে লাঠি এবং এক হাতে ধুপকাঠি নিয়ে এক যুবক শহরের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। তপ্ত দুপুরে শিলিগুড়ি শহরে সবাই তখন যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখনই ওই যুবককে দেখেই এক সহৃদয় ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে অনেকগুলি ধূপকাঠি কিনে তাকে টাকা দিয়ে চলেও গেলেন। তার কাছে গিয়ে জানা গেল যে সে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। ছোটবেলা থেকেই চোখে দেখতে পায় না সে। কিন্তু জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলার অদম্য ইচ্ছে বিধাননগরের বিশ্বদীপ সোরেনের। বিধান নগরের ব্লাইন্ড স্কুল থেকে রোজ শিলিগুড়ি শহরে ধূপকাঠি বিক্রি করতে আসেন।
তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, এভাবে কীভাবে তিনি ধুপকাঠি বিক্রি করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমার লাঠিই আমার সবকিছু। লাঠির সাহায্যে আমি বিধাননগর থেকে শিলিগুড়িতে ধুপকাঠি বিক্রি করতে আসি। প্রথমে সামান্য কিছু অসুবিধে হত, তবে এখন সবটাই শিখে গিয়েছি। বাড়িতে কি কেউ নেই? কেন এই পথ বেছে নিলেন? জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, পরিবারের বোঝা নয়, পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে চলাই লক্ষ্য। আট বছর বয়স থেকেই তিনি ব্লাইন্ড স্কুলে থাকেন। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণি অব্দি পড়াশোনাও করেছেন। তারপরে বাবা-মা বাড়ি ফেরার কথা বললেও তিনি আর ফেরেননি।
আরও পড়ুন: অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েও হার মানেননি, লড়াইয়ের শেষে রইল সাফল্যের কাহিনী
তাঁর কথায়, আমাকে গোটা পথ একাই চলতে হবে। আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আর যদি নিজের কাজ নিজে করি তবেই পরবর্তী জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলার যে অদম্য ইচ্ছে রয়েছে তা বিধাননগরের বিশ্বদীপ সোরেনকে বা দেখলে বিশ্বাস হবে না। শিলিগুড়ির রাস্তায় ধুপকাঠি বিক্রি করে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগোচ্ছে তিনি। রোজ চার ডজন ধূপকাঠি বিক্রি করে তারপর তিনি বিধাননগরে ফিরে যান। যখন তাকে প্রশ্ন করা হল দৃষ্টিহীনতার সুবিধা নিয়ে কেউ তার সঙ্গে ছল করেনি? তার উত্তরে তিনি বলেন, সবটাই বিশ্বাসের উপর। আমি মানুষকে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসের উপরেই আমার জীবন চলছে।
অনির্বাণ রায়