Tag Archives: blind

Madhyamik Result 2024: রাইটার নিয়ে পরীক্ষায় বসে মাধ্যমিকে ৮০% নম্বর দৃষ্টিহীন আফরিদার

মালদহ: দু’চোখেই দেখতে পায় না। রাইটার নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল আফরিদা পারভীন।‌ চমকে দেওয়ার মত ফল করে সকলের মধ্যমণি এখন দৃষ্টিহীন এই মেয়ে। তার এই সাফল্যের সকলেই উচ্ছ্বসিত।

দৃষ্টিহীন হলেও কোন‌ও ব্লাইন্ড স্কুলে পড়েনি আফরিদা পারভীন। সাধারণ স্কুলে আর পাঁচটা পড়ুয়ার সঙ্গে বসেই ক্লাস করেছে সে। সেখান থেকেই মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে আফরিদা। যদিও এই নম্বরে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় আফরিদা। তার বক্তব্য, আরও ভাল পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে প্রত্যাশার থেকে কম নম্বর পেয়েছে। মোট দুজন রাইটারের সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: জল উঠছে নদী বাঁধের কাছে, আতঙ্কে সুন্দরবন

মালদহের ইংরেজবাজারের শোভানগর পঞ্চায়েতের মাদিয়া বাধাগাছ এলাকায় বাড়ি আফরিদার। বাবার নাম মহম্মদ পিয়ার আলি। আফরিদা জন্ম থেকেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তিহীন। দু’চোখেই দেখতে পায় না। তার কাছে গোটা জগৎটাই অন্ধকারময়। তাই চোখের অন্ধকার দূর করতে শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে ওঠার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে সে অধ্যাপিকা হতে চায়। যার প্রথম ধাপ হিসেবে এবছর শোভানগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস বলেন, আমাদের স্কুলের গর্ব আফরিদা। শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন নয়, অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদেরও অনুপ্রেরণা। পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল আবৃত্তি করে। বাবা মা তাকে স্কুলে দিয়ে যেত নিয়মিত।

দুজন রাইটারের সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। আফরিদা নজরকাড়া ফল করে। তার ঝুলিতে আসে ৫৬৪ নম্বর। আফরিদা ছোট বেলায় মঙ্গলবাড়ি আর পি রায় মেমোরিয়াল ব্লাইন্ড স্কুল থেকে পড়াশোনা করে। তারপর শোভানগর হাই স্কুল ভর্তি হয়। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।স্বভাবতই আফরিদার এই ফলাফলে বেজায় খুশি তার পরিবার‌ সহ স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

হরষিত সিংহ

Madhyamik Result 2024: চোখে না দেখেও মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর

বীরভূম: প্রতিবন্ধী একটা শব্দ মাত্র। মনে জোর থাকলে সব অসম্ভব‌ই যে সম্ভব হতে পারে তা প্রমাণ করল তিন ছাত্র। দৃষ্টিহীন এই তিন ছাত্র এবার মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে দুই ছাত্র আবার তাদের পরিবারের প্রথম প্রজন্ম যারা মাধ্যমিক পাস করল।

বীরভূমের বাবুল মাহার ৬২৫ নম্বর ও পাঁচড়া গ্রামের আব্দুল মিয়ান ৫৯৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মুসতাসিন ওয়াশি ৬১৩ নম্বর পেয়েছে। তিনজনই সিউড়ি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র।

আর‌ও পড়ুন: বসিরহাটের এক‌ই মাদ্রাসা থেকে ফাজিলের মেধাতালিকায় প্রথম দুই

এই তিন দৃষ্টিহী পড়ুয়ার ইচ্ছে ছিল, মাধ্যমিকে ভাল ফল করে তারা শিক্ষকতার পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু এই সাফল্যের পর আর শিক্ষকতার কথা ভাবছে না। বিশেষ করে এই তিন দৃষ্টিহীন ছাত্রের পরিবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষকদের বর্তমান পরিণতি দেখে কিছুটা শঙ্কিত। তাঁরা চাইছেন ছেলেরা অন্য পথে এগোক।

সিউড়ির শ্রী অরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেসের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাস জানান, এরা তিনজনই আবাসিক ছাত্র হিসাবে স্কুলে থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ভাল ফল করেছে। আপাতত তাদের কলা বিভাগে কলকাতায় ভর্তি করে দেওয়া হবে। তাদের পাশে স্কুল ও সরকার সবসময় আছে।

সৌভিক রায়

Success Story: বোঝা নয়, চান পরিবারের অবলম্বন হতে… বিশ্বদীপের কাণ্ড দেখলে চমকে যাবেন

শিলিগুড়ি: তখন বিকেল তিনটে বাজে, এক হাতে লাঠি এবং এক হাতে ধুপকাঠি নিয়ে এক যুবক শহরের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। তপ্ত দুপুরে শিলিগুড়ি শহরে সবাই তখন যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখনই ওই যুবককে দেখেই এক সহৃদয় ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে অনেকগুলি ধূপকাঠি কিনে তাকে টাকা দিয়ে চলেও গেলেন। তার কাছে গিয়ে জানা গেল যে সে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। ছোটবেলা থেকেই চোখে দেখতে পায় না সে। কিন্তু জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলার অদম্য ইচ্ছে বিধাননগরের বিশ্বদীপ সোরেনের। বিধান নগরের ব্লাইন্ড স্কুল থেকে রোজ শিলিগুড়ি শহরে ধূপকাঠি বিক্রি করতে আসেন।

তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, এভাবে কীভাবে তিনি ধুপকাঠি বিক্রি করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমার লাঠিই আমার সবকিছু। লাঠির সাহায্যে আমি বিধাননগর থেকে শিলিগুড়িতে ধুপকাঠি বিক্রি করতে আসি। প্রথমে সামান্য কিছু অসুবিধে হত, তবে এখন সবটাই শিখে গিয়েছি। বাড়িতে কি কেউ নেই? কেন এই পথ বেছে নিলেন? জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, পরিবারের বোঝা নয়, পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে চলাই লক্ষ্য। আট বছর বয়স থেকেই তিনি ব্লাইন্ড স্কুলে থাকেন। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণি অব্দি পড়াশোনাও করেছেন। তারপরে বাবা-মা বাড়ি ফেরার কথা বললেও তিনি আর ফেরেননি।

আর‌ও পড়ুন: অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েও হার মানেননি, লড়াইয়ের শেষে রইল সাফল্যের কাহিনী

তাঁর কথায়, আমাকে গোটা পথ একাই চলতে হবে। আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আর যদি নিজের কাজ নিজে করি তবেই পরবর্তী জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলার যে অদম্য ইচ্ছে রয়েছে তা বিধাননগরের বিশ্বদীপ সোরেনকে বা দেখলে বিশ্বাস হবে না। শিলিগুড়ির রাস্তায় ধুপকাঠি বিক্রি করে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগোচ্ছে তিনি। রোজ চার ডজন ধূপকাঠি বিক্রি করে তারপর তিনি বিধাননগরে ফিরে যান। যখন তাকে প্রশ্ন করা হল দৃষ্টিহীনতার সুবিধা নিয়ে কেউ তার সঙ্গে ছল করেনি? তার উত্তরে তিনি বলেন, সবটাই বিশ্বাসের উপর। আমি মানুষকে বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসের উপরেই আমার জীবন চলছে।

অনির্বাণ রায়