ঘটনার পরে সিভিক ভলেন্টিয়ারকে সম্মানিত করছেন রানাঘাট পুলিশ সুপার

Civic Volunteer: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাত ধরেও ব্রাত্য থেকে গেলেন সিভিক ভলেন্টিয়ার

নদিয়া: প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালন করার পরেও যোগ্য সম্মান পেলেন না সিভিক ভলেন্টিয়ার। আরজি কর কাণ্ডে যখন এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের দিকে আঙুল উঠছে, ঠিক তখনই রানাঘাটের এই সিভিক ভলেন্টিয়ারের জন্যই আজ কুখ্যাত ডাকাতদের কারাগারে ঠাঁই হয়েছে। ধরা পড়েছে লুঠের সমস্ত টাকা-পয়সা, গয়নাগাটি।

গত বছরের ২৯ অগস্ট রানাঘাটের একটি অভিজাত সোনার দোকানে ভয়াবহ এক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রানাঘাট থানার তৎকালীন আইসি সঞ্জীব সেনাপতির নেতৃত্বে এএস আই রতন রায়, এসআই জয়ন্ত ঠাকুর, এসআই মলয় সাহা ও এসআই আলতাফ হোসেন তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডাকাতদের সঙ্গে মোকাবিলা করেন ও পাঁচজন ডাকাত ধরা পড়ে। তবে সেদিন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে ডাকাতদের ধরার কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন সিভিক ভলেন্টিয়ার গোপাল।

নিয়মমাফিক ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাছে কোনও অস্ত্র ছিল। তা সত্ত্বেও নিজের প্রাণের মায়া না করে পালানোর সময় সশস্ত্র ডাকাতদের ধাওয়া করে। ডাকাতরা যখন রেললাইন পার করতে যায় তৎক্ষণাৎ রেল লাইনের পাথর কুড়িয়ে নিয়ে তাদের লক্ষ্য করে ছুঁড়তে থাকে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার। সেই পাথরের আঘাতে ঘায়েল হয় বেশ কয়েকজন ডাকাত। দুইজন ডাকাতকে নিজেই ধরে ফেলেন গোপাল।

আর‌ও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের পরদিন‌ই পথে ‘ফ্ল্যাগ ম্যান’! তাঁকে অনুসরণ করে রাজ্য জুড়ে চলছে এই কাজ

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মস্থলে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য সম্মান প্রাপকদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনজন পুলিশ কর্মীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত রানাঘাট থানার প্রাক্তন পুলিশকর্মী। বর্তমানে তাঁদের মধ্যে দু’জন অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেলেও তালিকায় থাকা একজন পুলিশকর্তা আলতাফ হোসেন বর্তমানে চাকদহ থানায় কর্মরত।

বুধবার পুলিশ আধিকারিকদের সম্মান প্রাপকের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ঘটনার দিন তৎকালীন ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে ওই পুলিশ কর্মীদের নাম ও তাঁদের কাজের প্রশংসা করেন। পরে রানাঘাট পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে ওই চার পুলিশ কর্মী সহ রানাঘাট থানার আইসি সঞ্জীব সেনাপতি এবং সেই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে সম্মানিত করা হয়। কিন্তু বুধবার যখন সাহসিকতার জন্য পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করে রাজ্য সরকার তখন দেখা যায় সেই তালিকায় এএসআই রতন রায় ও এসআই আলতাফ হোসেন ও রানাঘাট থানার তৎকালীন আইসি সঞ্জীব সেনাপতির নাম থাকলেও বাদ পড়েছে সেদিনের ঘটনায় জীবন বাজিয়ে রেখে লড়াই করা এসআই মলয় সাহা, এসআই জয়ন্ত ঠাকুর আর সিভিক ভলেন্টিয়ার গোপাল।

এর পর থেকেই এই তালিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ঘটনাস্থলে নিজেদের জীবন বাজি রেখে প্রত্যেকে নিজেদের কর্তব্য পালন করলেও সাহসিকতার পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন বিভাজন করা হল? বিশেষ করে সিভিক ভলেন্টিয়ার গোপাল যেভাবে নিজের জীবন জীবনের মায়া না করে ডাকাত ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাতে তাঁর অবশ্যই পদক পাওয়া উচিত ছিল বলে অনেকে মনে করছেন।

মৈনাক দেবনাথ