মালদহ: তাঁরা ভারতীয়, পরিচয় পত্র থেকে সমস্ত নথি রয়েছে। ভারতীয় জনগণ হয়েও সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাস করলেও তাঁরা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও পরাধীনতার জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের বাসস্থান কাঁটাতার বেড়ার ওপারে। ভারতীয় ভূখণ্ডে তাদের বসবাস কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া তাদের সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রেখেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আদরি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের সবেতেই সমস্যা। কাঁটাতার বেড়ার ওপার রয়েছে আমরা। কর্মসংস্থান থেকে সমস্ত কিছুর জন্য আমাদের বিএসএফের উপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের খোঁজ কেউ রাখে না।’’
মালদহের কালিয়াচক থানারঅন্তর্গত ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে কাঁটা তারে ঘেরা। এই এলাকার চরি অনন্তপুর পঞ্চায়েতের হাজিনগর, দুইশতবিঘি ও মহাবাতপুর গ্রাম কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে। সেখানে রয়েছে কয়েকশো ভোটার। তাঁরা প্রতিটি ভোটে অংশ গ্রহণ করে।
কিন্তু কখনও তাঁরা প্রার্থী বা জন প্রতিনিধিদের দেখেননি। যে তাদের কাছে ভোট প্রচার বা তাদের সঙ্গে কথা বলতে। তারা কখনও তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা তুলে ধরতে পারেনি কারও কাছে। দক্ষিণ মালদার বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, কাঁটাতার বেড়ার উপরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ন্যূনতম পরিষেবা পাওয়ার দরকার। কিন্তু তারা পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্প রয়েছে সেগুলি থেকেও তারা বঞ্চিত। জনপ্রতিনিধিরা কোন কাজ করেনি এই এলাকায়।
আরও পড়ুন: লাল-নীল না সবুজ হলুদ!…এবারের দোলে কোন রঙের চাহিদা তুঙ্গে, বলুন তো!
প্রতিদিন বিএসএফ গেট খুললে এপারে এসে পানীয় জল,রুজি রোজগার করেন তাঁরা। কাঁটাতারে ওপারে গ্রামগুলির বাসিন্দারা আজও নিজ ভুমিতে পরবাসী হয়ে রয়েছেন। স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও দুই দেশের সীমান্ত কাঁটাতার প্রায় ৩০০টি পরিবারকে পরাধীন করে রেখেছে।কার্যত বন্দি জীবনযাপন করছেন সীমান্ত কাঁটাতারের ওপারে ৩০০টি পরিবার। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘যিনি বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। তিনিও একজন জনপ্রতিনিধি বর্তমানে। বিধায়ক রয়েছেন। তার এলাকায় তিনি কত কাজ করেছেন?’’
আরও পড়ুন: গুঁড়ো লঙ্কা ঝাল করতে মেশানো হচ্ছে রাসায়নিক! বাজারে ছেয়ে গিয়েছে ভেজাল মশলা…শরীরে যা প্রভাব পড়ছে ভাবতেও পারবেন না
গ্রামে একসময় বসবাস করতেন প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার পর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবার এপারে চলে এসেছেন। কিন্তু আজও আর্থিক ভাবে দুর্বল প্রায় ৩০০টি পরিবার রয়ে গেছে কাঁটাতারের ওপারে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মমতো খোলা হয় সীমান্তের দরজা। আর বন্ধও হয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মে।দিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই এলাকার বসবাসকারীদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়। সেই সময়ে বাড়িতে খাওয়ার জলটুকুও নিতে হয়।
হরষিত সিংহ