চলছে নাটকের মহড়া

Durga Puja 2024: ৫৭০ বছরের বনেদি পুজোতেও আরজি করের প্রতিবাদ! চলছে প্রস্তুতি, দেখুন

হুগলি: জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে একটি হল হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো। বনেদিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ৫৭০ বছরে পদার্পণ করেছে এই পুজো। ইংরেজ আমলে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছিল ঘোষাল বাড়ির দুর্গোৎসব।

তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকারের থেকে বিশেষ অনুদানও আসত এই পুজো করার জন্য। বনেদিবাড়ির পুজো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আরজি করের ঘটনার প্রভাব পড়েছে তাদের পুজোয়। তবে পুজো বন্ধ নয়, বরং বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ যার নাম দিয়েছেন ‘অপরাজিতা’।

আরও পড়ুন: রোদের আড়ালেই কি কালো মেঘের সঞ্চার? ফের বৃষ্টি হবে? আবহাওয়ার বড় খবর

হুগলির কোন্নগরের জমিদার হিসাবে সূচনা হয় ঘোষাল পরিবারের। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় তাঁদের জমিদারি। সেই থেকেই বাড়ির ঠাকুর দালানে আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনার সূত্রপাত। এখনও এই পুজোয় আসে ইংল্যান্ড থেকে অনুদান। ঘোষাল বাড়ির ৫৭০ বছরের দূর্গাপুজো বরাবরই শিল্পের পৃষ্ঠপোষক।

পুজোর দিনে ঠাকুর দালানে বসে নাটক,  যাত্রাপালার আসর। আগে একটা সময় দুর্গাপুজোয় এখানে এসে গান গেয়ে গিয়েছিলেন ওস্তাদ বুরদুল খান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো দিগ্বজ সঙ্গীতশিল্পীরা। এই বছর আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে নাট মন্দিরেই মঞ্চস্থ করবেন এক বিশেষ নাটক ‘অপরাজিতা’। যার প্রস্তুতিও চলছে একেবারে জোরকদমে।

আরও পড়ুন: রোজ খাবারের পাতে শসা খান? শরীরে কী হচ্ছে এর ফলে জানেন? চিকিৎসকের অবাক করা দাবি

পরিবারের বর্তমান বংশধর প্রবীর ঘোষাল জানান, তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন পরিবারের ৮ থেকে ৮০ সকলে। ইংরেজদের শাসনকালে তাঁদের পুজোর জন্য বিলেত থেকে অনুদান আসত তৎকালীন সময়ে ৭৫০ টাকা। সেই সময় এই টাকার অংক এতটাই বিপুল ছিল যে, পুরো পুজো হয়ে যাবার পরও টাকা শেষ করা যেত না। তাই ঘোড়ার গাড়ি চেপে শ্রীরামপুরের খাজাঞ্চি খানায় আবারও টাকা ফেরত পাঠাতেন বাড়ির লোকজন। সেই প্রথা এখনো চলে আসছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ভাল কিছুর সঙ্গে কিছু ভয়ানক পরিস্থিতির সাক্ষী রয়েছে তাদের দুর্গাপুজো। আগে দশমীতে নৌকায় করে মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হত। তবে একবছর সেই ঠাকুর বিসর্জন করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হন পরিবারের এক সদস্য। সেই থেকে দশমীর ভাসান তাঁদের বাড়িতে সকাল বেলাতেই হয়ে যায়।

পুজোর বিশেষত্বগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল, এই পুজোয় বাইরের দোকানের কোনও মিষ্টি ব্যবহার করা হয় না। বাড়ির মহিলারা নিজেরাই নাড়ু তৈরি করেন। সেই নাড়ু দিয়েই হয় ঠাকুর প্রসাদ। অষ্টমীর দিনে সন্ধ্যা প্রদীপ জালেন বাড়ির পুরুষরা। দশমীর দিন বাড়ির এও স্ত্রীরা ঠাকুরকে ইলিশ মাছ দিয়ে ভোগ দেন। কনকাঞ্জলি দিয়ে বরণ করে সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন বাড়ির মহিলারা।

রাহী হালদার