হুগলি: কালী পুজোর রাতে অলকেশী রূপে পূজিত হয় মা হংসেশ্বরী। কয়েক ঘণ্টার জন্য মা হংসেশ্বরীকে সাজানো হয় কালী রূপে। প্রখ্যাত কবি পিনাকী ঠাকুর এবং নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে হুগলীর বাঁশবেড়িয়ার ইতিহাস আর পুরাতত্ত্বের এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ এই জায়গা। সাহিত্য প্রেমীদের সঙ্গে ভ্রমণপিপাসুদেরও আকৃষ্ট করে। বাঁশবেড়িয়ার বলতেই যে নামটা সবচেয়ে আগে মনে আসে তা হল মা হংসেশ্বরী মন্দির। ৭০ ফুট উচ্চতার এই ছ’তলা মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি।
২০৯ বছরের পুজো মা হংসেশ্বরীর। কালীপুজোয় এখানকার রাজকীয় আয়োজন আলাদা করে বলার কিছু নেই। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তেরা ছুটে আসেন মা হংসেশ্বরীকে দেখবেন বলে। ভক্তদের কাছে তিনি বিপত্তারিণী। পুজোপাঠ হয় তন্ত্র মতে। গত বছর থেকে ব্যতিক্রম হয় শতাব্দী প্রাচীন বলিপ্রথায়। পুজোর দায়িত্বে থাকা রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা নাকি গত বছর থেকে বলিপ্রথা পাকাপাকিভাবে তুলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্কুল ছুটির পর ঝাল ঝাল কয়েত বেল মাখা কে না খেয়েছে! এবার খুব সহজে বাড়িতে বানান এই মাখা! জানুন রেসিপি
রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রপৌত্র নৃসিংহদেব রায় বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দির নির্মাণকার্য শুরু করেন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে নৃসিংহদেব মারা যান। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রানি শঙ্করী অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করেন। মন্দিরটি তৈরির জন্য উত্তর প্রদেশের চুনার থেকে পাথর এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে কারিগরদের নিয়ে আসা হয়।
মন্দিরের বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত গঠনরীতি গবেষকদেরও আগ্রহের বিষয়। ১৩টি চূড়া, তিনতলায় কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ, গর্ভগৃহে পাথরের বেদির উপর খোদাই করে সহস্রদল ও অষ্টদল পদ্ম। তার উপরে শায়িত শিব। তাঁর হৃদয় থেকে উত্থিত পদ্মাসনে অধিষ্ঠান করছেন মা হংসেশ্বরী।গত বছরও রীতি মেনে পুজোয় দু’টি ছাগ বলি দেওয়া হয়েছিল। এবার তা আর হবে না। মন্দিরের পুরোহিত বলেছেন মা এখানে বিপত্তারিনী। এই মন্দির ঘিরে অনেক অলৌকিক কাহিনী আছে। মা এখানে করুণাময়ী, তাই পশুবলি প্রথা বন্ধ করে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাহী হালদার