বর্ধমান: বসন্ত উৎসবের আর ৪৮ ঘণ্টা বাকি। এই উৎসব বাঙালির অন্যতম আনন্দের উৎসব। রঙের এই উৎসবে মেতে উঠবে গোটা রাজ্য। কিন্তু রং কিংবা আবীর নিয়ে জনসাধারণের একটু হলেও দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। যার অন্যতম কারণ, তাতে মেশানো কেমিক্যাল। কিন্তু সেই আবীর যদি হয় ভেষজ, তাহলে দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে অনেকটাই। কারণ এই আবীর তৈরি হয় ভেষজ নানান উপাদান দিয়ে। অন্যদিকে, বাজারের আবীরে মেশানো হয় একাধিক কেমিক্যাল। যা বহু জনের নানান শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
তবে ভেষজ আবীর ব্যবহার করলে সেই সমস্যা হয় না বললেই মনে করেন অনেকে। যে কারণে গত কয়েক বছর ধরে চাহিদা বাড়ছে ভেষজ আবীরের। তাই এবার ভেষজ আবির তৈরির উদ্যোগ নিল পূর্ব বর্ধমানের এক এনজিও। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ফুল এবং বিভিন্ন সবজি ব্যবহার করে ভেষজ আবির তৈরি করছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মিলিত প্রয়াস নামের এই এনজিও।
আরও পড়ুনঃ দোলেও চলবে ঘ্যানঘ্যানে নাগাড়ে বৃষ্টি? ধেয়ে আসবে কালবৈশাখী? জানিয়ে দিল হাওয়া অফিস
এ প্রসঙ্গে সংস্থার সম্পাদক প্রতনু রক্ষিত জানিয়েছেন, “দোলের সময় বাজার থেকে যে আবীর পাওয়া যায়, তার মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। যা আমাদের ত্বকের জন্য, শরীরের জন্য খারাপ। তাই আমরা কিছু জৈব পদার্থ দিয়ে ভেষজ আবির প্রস্তুত করছি।”
প্রকৃতিক নানা উপাদান ব্যাবহার করে আবির প্রস্তুত করেছে তারা। পালং শাক থেকে তৈরি হচ্ছে সবুজ আবির, গাজর থেকে কমলা, গাঁদা ফুলের পাপড়ি ও হলুদ দিয়ে হলুদ আবীর, গোলাপি আবিরের জন্য জবা ফুল ও বিট এবং অপরাজিতা বা নীলকন্ঠ ফুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে নীল আবির। এমনই ফুল এবং সবজি দিয়ে দোলের আবীর তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগাচ্ছেন মিলিত প্রয়াস সংস্থার কর্মকর্তারা।
অনেকেই রাসায়নিক যুক্ত আবীরে ভয় পায়। কারণ তা থেকে ত্বকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। ফলে দোলের দিন অনেকেই আবীর মাখা থেকে নিজেদের বিরত রাখে। সেই জায়গায় ভেষজ আবীর গায়ে মাখলে কোনও রকম সংক্রমণ ঘটবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। বর্তমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে, এই ভেষজ আবীর তৈরি করে অনেকেই নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের সদরঘাট চাষীমানা এলাকায় শেখানো হচ্ছে ভেষজ আবীর তৈরির পদ্ধতি।
যে আবীর তৈরি করা হচ্ছে , সেই আবীর বাজারজাত করা হবে এবং সেখান থেকে যে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে তা এখানকার চাষীমানা এলাকার মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যাতে তারাও একটু একটু করে স্বনির্ভর হতে পারে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে, প্রশিক্ষণ নিতে আসা মহিলার ছাড়াও, আবীর তৈরি দেখতে ভিড় জমিয়েছিল অনেক শিশু। আবীর তৈরি দেখতে তাদের মনে উচ্ছ্বাস উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী