রানা কর্মকার, শ্রীরামপুর: একজন তিন বারের সাংসদ, দুঁদে রাজনীতিবিদ৷ অন্যজন রাজনীতির সঙ্গে অনেক দিন যুক্ত থাকলেও বয়সে অনেক নবীন৷ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন চতুর্থবারের জন্য শ্রীরামপুরের সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন, তখন তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বাম ছাত্র রাজনীতির পরিচিত মুখ দীপ্সিতা ধরের উপরে ভরসা রেখেছে সিপিএম৷ প্রচার শুরু হতেই রীতিমতো কথার লড়াইয়ে জড়ালেন কল্যাণ এবং দীপ্সিতা৷ কল্যাণকে দীপ্সিতা কটাক্ষ করলেন ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ বলেন, পাল্টা সিপিএম প্রার্থীকে ‘মিস ইউনিভার্স’ বলে জবাব দিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ৷
দীপ্সিতা নিজেও শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রেরই বাসিন্দা৷ এ দিন শ্রীরামপুরে প্রচারে বেরিয়ে দীপ্সিতা কল্যাণকে আক্রমণ করে বলেন, ‘১৫ ধরে আমার আপনার যিনি সাংসদকে, সেই কল্যাণবাবুকে একদিনও আমার বাড়ির সামনে দেখিনি৷ এমন এমপি রেখে লাভ কী, যাঁকে চোখে দেখা যায় না৷ শুধু ভোটের সময় ছাড়া৷ ওই যে একটা সিনেমা ছিল না, মিস্টার ইন্ডিয়া৷ অনিল কপূর খালি উধাও হয়ে যেতেন৷ আমাদের কল্যাণবাবুও মিস্টার ইন্ডিয়ার মতোই৷ শুধু ওনার হাতে ঘড়িটা নেই, ওনাকে এমনিই দেখা যায় না৷’
আরও পড়ুন: ‘খোলা আছে বিজেপির দ্বার…’, ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট মহুয়ার, তিহাড় নিয়ে আশঙ্কায় তৃণমূল প্রার্থী?
দীপ্সিতার এই কটাক্ষ কল্যাণের কানে পৌঁছতে দেরি হয়নি৷ ডোমজুড়ে প্রচারে গিয়ে দীপ্সিতাকে পাল্টা জবাব দিয়ে কল্যাণ বলেন, ‘কোনও একজন নাকি আমাকে মিস্টার ইন্ডিয়া বলেছেন৷ এটা শুনে আমার একটা কবিতার লাইন মনে পড়ল৷ বহু দিন ধরে, বহু কোর্স করে, বহু অর্থ ব্যয় করে, বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু৷ দেখা হয়নি দু চোখ মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিসের উপরে একটি শিশির বিন্দু৷ সেই মিস ইউনিভার্স দেশ বিদেশ সমস্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন৷ দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়ে শেষে মিস ইউনিভার্স শ্রীরামপুরে এসে মিস্টার ইন্ডিয়াকে দেখতে পেয়েছেন৷ সারাজীবনে ঘাসের উপরে শিশির বিন্দু দেখার সৌভাগ্য মিস ইউনিভার্সের এখানে এসে হয়েছে৷’
দীপ্সিতার নাম না করেই তাঁর উদ্দেশ্যে কল্যাণ আরও বলেন, ‘২০১১ পর্যন্ত এখানে যখন আপনাদের বিধায়ক ছিল, স্বাধীনতার পর থেকে এই এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি, সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী যখন তৃণমূলকে খুন করত, গণতন্ত্রকে হত্যা করত তখন আপনার চোখে এগুলো পড়েনি?’
কল্যাণের মিস ইউনিভার্স কটাক্ষের জবাবও অবশ্য দিয়েছেন দীপ্সিতা৷ তাঁর বিদেশ যাত্রা নিয়ে কটাক্ষের জবাব সিপিএম প্রার্থী বলেন, ‘আমার বিদেশে ঘোরা নিয়ে ওনার আপত্তি থাকা স্বাভাবিক৷ কারণ আমি তো চুরি, ডাকাতির পয়সায় যাইনি, এমন কি সরকারি পয়সাতেও যাইনি৷ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে গবেষণার কাগজপত্র জমা দিতে বিদেশে গিয়েছি৷ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা তো চান না ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে দেশের নাম, রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করুক৷ ওনারা চায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা না করে ওনাদের মতো ঘুষখোর, মিথ্যেবাদী তৈরি হোক৷’
শ্রীরামপুরে লোকসভা নির্বাচনে এবার জমজমাট লড়াই৷ কারণ এই কেন্দ্রে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে কবীরশঙ্কর বসুকে৷ যিনি আবার সম্পর্কে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন জামাই৷