কলকাতা: তাঁর মধ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছায়া দেখেছেন খোদ বিমান বসু৷ সর্বসমক্ষে বলেওছেন সে কথা৷ মধ্য তিরিশের আপাদমস্তক আটপৌড়ে মেয়েটার মেঠো উচ্চারণে বক্তৃতা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে চোখ টেনেছিল সকলেরই৷ ‘হট সিট’ নন্দীগ্রামের মমতা-শুভেন্দুর দ্বৈরথের মাঝখানে আলাদা করে রাজ্যজুড়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়৷ যা বড় একটা কম কথা নয়৷ এখন মূলত, সেই মীনাক্ষীর কাঁধে ভর করেই এবছরের ব্রিগেড৷ ঘরে-বাইরে তাঁকেই ‘ক্যাপ্টেন’ বলে তুলে ধরছে সিপিএম৷ ব্যানারে, কাটআউটে তাঁর উপস্থিতি সুস্পষ্ট৷
এবারের ব্রিগেডের আগে মীনাক্ষীকে ক্যাপ্টেন বলে ডাকছেন খোদ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সাফ বলছেন, ‘‘প্রজেক্ট মীনাক্ষী নয়, ক্যাপ্টেন মীনাক্ষী। ওই তো আসল ক্য়াপ্টেন এখন। প্রচার তো হবেই।’’ তুলনা টেনেছেন একেবারে ইলা মিত্রের সঙ্গেও।
তবে, নিজেকে অবশ্য এখনই ‘ক্যাপ্টেন’ মনে করতে নারাজ মীনাক্ষী৷ কোনও রাখঢাক না রেখেই বললেন, “আমি তো ক্যাপ্টেন নই। আমাদের ক্যাপ্টেন আমাদের গঠনতন্ত্র, আমাদের আদর্শ, আমাদের নীতি।” যদিও বিমানের যুক্তি, “স্বাধীনতার সময়ে একটু ডাকাবুকোদের তো ক্যাপ্টেন বলে সম্বোধন করত মানুষ। তাই তো ক্যাপ্টেনের প্রচার হচ্ছে। আগে তো ডিওয়াইএফআইয়ের কোনও মহিলা সেক্রেটারি ছিল না। সে কারণেই হয়ত এখন প্রচার বেশি হচ্ছে।”
এদিনের সমাবেশ প্রসঙ্গে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভানেত্রী জানিয়েছেন, ‘‘অপেক্ষায় তো আছি, গোটা রাজ্যের সাধারণ মানুষ যেভাবে ইনসাফ সভা ও ইনসাফ যাত্রাতে নিজেদের দাবিতে, বেঁচে থাকার দাবিতে রুটিরুজির তাগিদে যেভাবে প্রতিটা দিন আমাদের পাশে ছিলেন, ব্রিগেডের সমাবেশেও রাজ্যকে বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গের সংগ্রামী জনতা থাকবে৷ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কোনওদিন লড়াই ছাড়া থাকেনি৷ ’’
আরও পড়ুন: কুয়াশায় আর হবে না ট্রেন লেট! এবার নতুন ডিভাইস ব্যবহার করতে শুরু করছে রেল, এল খবর
২০০৮ সালের পর ২০২৪। ১৬ বছর পর ফের ডিওয়াইএফআইয়ের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ হতে চলেছে কলকাতায়। এই কিছুদিন আগেই জেলায় জেলায় ৫০ দিনের টানা ইনসাফ যাত্রা শেষ করেছে বাম ছাত্র যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই৷ তারপরেই ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি৷ এই সবকিছুতেই যেন মীনাক্ষীকেই দেখা গিয়েছে হোতার ভূমিকায়৷
ব্রিগেড সমাবেশের আগে গত শনিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে হাজির হয়েছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ কয়েকজন ডিওয়াইএফআই নেতা৷ সেখানেই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশ খুব সফল হবে, বড় হবে, ভাল হবে৷’’
একুশের নির্বাচনের আগে এই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গেই মীনাক্ষীর তুলনা টানতে দেখা গিয়েছিল বিমান বসুকে৷ সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘মিনাক্ষী যে ভাবে এগোচ্ছে বুদ্ধ ঠিক এ ভাবেই এগিয়েছিল। সেই সময়ে স্কুল শিক্ষকের চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়ে পার্টির সর্ব ক্ষণের কর্মী হয়েছিল। বামপন্থী রাজনীতিতে মিনাক্ষীর এই অধ্যাবসায় দেখে সত্যিই আমরা খুশি।’’
প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেব ছয়ের দশকে ছাত্রাবস্থা থেকেই সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয় দিয়ে শুরু করে পৌঁছেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ পর্যন্ত। অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মীনাক্ষীও কুলটি কলেজের অস্থায়ী কর্মীর চাকরি করতেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল। সেই সূত্রেই জড়িয়ে পড়েছিলেন এসএফআইয়ের সঙ্গে। ২০১৮ সালে ডানকুনিতে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সভানেত্রী মনোনীত হয়েছিলেন মীনাক্ষী। তার কিছু দিন আগেই চাকরি ছেড়ে পার্টির সর্ব ক্ষণের কর্মী হন।
আরও পড়ুন: ট্রেনে ঘুমোচ্ছিলেন তরুণী…তার মুখের উপরেই…ছি ছি!! চরম অশ্লীল কাণ্ড ঘটালেন সহযাত্রী প্রৌঢ়
চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার এই বিষয়টিতে বুদ্ধদেবের সঙ্গে মীনাক্ষীর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন বিমান বসু৷ বলেছিলেন, ‘‘ওঁর বক্তৃতা সব ধরনের মানুষ বুঝতে পারছেন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মীনাক্ষীর মিশে যাওয়ার বিষয়টিও ওর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।’’
একুশের সময়কাল থেকেই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কেই বামেদের অন্যতম ‘মুখ’ করে তুলতে চাইছে সিপিএম৷ তবে সেই উদ্দেশ্যে একুশের নির্বাচনের পরে ঠিক যতটা সফল হওয়ার কথা ছিল বামেরা তা হয়নি৷