কলকাতা: ফের রেল বাতিল। ব্রিগেড সমাবেশের জন্য রেল চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নিউ কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার থেকে। সেই ট্রেন বাতিল করা হল। অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের।ব্রিগেডে আয়োজিত হতে চলা, রাজনৈতিক জমায়েত ‘জনগর্জন সভা’ নিয়ে বিজেপির সাথে ফের রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ যাতে জনগর্জন সভায় যোগ দিতে সহজে কলকাতা আসতে পারেন, তার জন্য দু’টি বিশেষ ট্রেন দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু, সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনগর্জন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে হাতে আর মাত্র ৫ দিন সময় রয়েছে। তার আগে, সোমবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আসন্ন জনগর্জন সভার ট্রেলার প্রকাশ করা হয়।
রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজা বেশ কিছু নথির প্রতিলিপি সামনে এনেছেন। যা থেকে স্পষ্ট, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার থেকে কলকাতাগামী দু’টি বিশেষ ট্রেন দেওয়ার আবেদন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। ডা. শশী পাঁজা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে মানুষ যাতে সভায় যোগ দিতে আসতে পারেন, তার জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দু’টি বিশেষ ট্রেন চাওয়া হয়েছিল এবং ২২ লক্ষ টাকার ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ও করা হয়েছিল। নিয়ম অনুসারে, আমরা আইআরসিটিসি-এর গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের দু’টি ট্রেন (একটি নিউ কোচবিহার থেকে শিয়ালদহ এবং অন্যটি আলিপুরদুয়ার থেকে শিয়ালদহ) লাগবে। কিন্তু, জমিদাররা মনে করছে, ট্রেনও তাদের জমিদারির আওতায় পড়ে। তাই আমাদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।’’
![](https://images.news18.com/static-bengali/uploads/2024/03/4153349IMG20240304WA0008-2024-03-253804a9a75b00e5e22a01d933787c63.jpg)
আরও পড়ুন- মাত্র ১৯-এ অকালে সব শেষ, লাস্ট পোস্টে কী লিখেছিলেন আমিরের অনস্ক্রিন কন্যা, ভাইরাল হতেই চোখে জল ভক্তদের
তিনি আরও বলেন, ‘‘ন্যায্য অধিকারের দাবিতে মানুষের লড়াইকে পোক্ত করতেই যেহেতু জনগর্জন সভার ডাক দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁদের অংশগ্রহণ এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে রেল আমাদের আবেদন গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বহিরাগত বিজেপি এখানেও তাদের জমিদারি জাহির করল এবং রেল কর্তৃপক্ষকে আমাদের আবেদন বাতিল করতে বাধ্য করল। ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখার পাশাপাশি এবার তারা ট্রেন-সহ প্রতিবাদের সমস্ত পথও আটকে দিতে চাইছে। তবে, যত ইচ্ছা ট্রেন বাতিল করুক, ওরা ব্রিগেডে জনগর্জন সভা আটকাতে পারবে না।’’ ডা. পাঁজা আরও তুলে ধরেন, অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যখন এই ট্রেনে চড়েই কলকাতায় সভা করতে আসেন, তখন তা বাতিল করা হয় না।
আরও পড়ুন- মহাশিবরাত্রিতে বিরল কাকতালীয় যোগ! সর্বার্থ সিদ্ধি যোগে প্রসন্ন করুন শিবকে, রাতারাতি ‘ধনী’ হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না…!
মাত্র ছ’মাস আগেই ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেই বিষয়টিও দলীয় নেতৃত্বের তরফে উত্থাপিত করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির সময়েও এমন অভিযোগ এনেছিল ঘাসফুল শিবির। বাংলা থেকে প্রতিবাদীদের নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেনের দিল্লি পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু, রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে সেই ট্রেন বরাদ্দ করেও পরে তা বাতিল করে দেয়। এমনকী, যে বিমানে বাংলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ১০০ জন নেতানেত্রীর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল, সেটিও কোনও এক একেবারে শেষ মুহূর্তে বাতিল করে দেওয়া হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ব্রাত্য বসু এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘‘এমন আচরণ করে বিজেপি কেবলমাত্র নিজের দুর্বলতাগুলি প্রকাশ করে ফেলছে। ওরা তৃণমূল কংগ্রেস এবং বাংলাকে ভয় পাচ্ছে। সেই কারণেই বাংলাকে রোখার চেষ্টা করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির সময়েও বিজেপি একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই তাদের জমিদারি মানসিকতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। গত তিন-চারদশক ধরে ব্রিগেডে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা আমাদের ইতিহাসের অংশ।’’
ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘অতীতে কেউ কোনও দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকাতে পারেনি। এমনকী, যারা ৩৪ বছর ধরে শাসন করেছিল, তারাও না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে যেকোনও সভায় যোগ দিতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুত থাকেন। ট্রেন বাতিলের এই জমিদারসুলভ মানসিকতাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। তবে, এভাবে মানুষকে ব্রিগেডে আসা থেকে আটকানো যাবে না। প্রয়োজনে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করব।’’
—