দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সুন্দরবন বাসীদের কাছে জলের কুমির ডাঙ্গায় বাঘ কার্যত এটিই হচ্ছে সুন্দরবনের এলাকাবাসীদের রোজনামচা। কিন্তু সেই আতঙ্ক যেন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। তাজা বাঘের পায়ের ছাপকে কেন্দ্র করে রীতিমতো কাঁপছেন কুলতলী এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মঙ্গলবার, নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পায় কয়েকজন মৎস্যজীবীরা এরপর এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে গৃহবন্দী কুলতলী দেউলবাড়ী এলাকার দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজীপাড়ার বাসিন্দারা।
বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীরা তড়িঘড়ি খবর দেয় বনদফতরে। এ বিষয়ে এক বনকর্মী তিনি বলেন, আজ আমরা খবর পাই যে এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা দিয়েছে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসি এবং গোটা জঙ্গলটি আমরা জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছি যাতে বাঘ এই জালে ধরা দেয় আর এলাকাবাসীদের কোন ক্ষতি না হয়। আমরা আশা করছি বাকি আজ রাতের মধ্যেই পুনরায় তার নিজ বাসস্থান অর্থাৎ গভীর জঙ্গলে আবার ফিরে যাবে। যদিও বাঘের পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা:চলতি বছরে ফের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে সুন্দরবনে। সম্প্রতি বন দফতরের পক্ষ থেকে এমনই কথা জানানো হয়েছে। এটা যদি খুশির খবর হয় তবে চিন্তার অন্য একটি দিক আছে। গত কয়েক বছর ধরেই সুন্দরবনে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বাঘের আক্রমণে নিহত ও আহত মৎস্যজীবীর সংখ্যা। ক্রমেই সুন্দরবনে বাঘে-মানুষে সংঘাত বাড়ছে।
কয়েকদিন আগে বাঘের আক্রমণে সুন্দরবনে গুরুতর আহত হন বাবুরাম দাস। তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। গত ১১ জুলাই কুলতলির বাসিন্দা আবুর আলি মোল্লা বাঘের আক্রমণে মারা যান। বাঘ নৌকায় ঝাঁপিয়ে রাতের অন্ধকারে তাঁকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এই একের পর এক ঘটনার উদাহরণ প্রমাণ করে বিকল্প জীবিকা না থাকায় সুন্দরবনের মানুষ মাছ ধরতে বা মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে কীভাবে বারবার বাঘের আক্রমণের মুখে পড়ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনে ১০ জন বাঘে দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তারমধ্যে ৭ জনই মৃত। যদিও বন দফতরের তরফ থেকে এভাবে বারে বারে বাঘ আক্রমণে মৎস্যজীবীদের মৃত্যু যাতে না হয় তার জন্য বিভিন্ন কোর এরিয়াগুলিতে চলাচল ও বসবাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে আবার সঙ্কটে পড়েছেন সুন্দরবনের দরিদ্র মৎস্যজীবীরা। কারণ এর বাইরে অন্য কোনও বিকল্প জীবিকার সুযোগ নেই তাঁদের কাছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে চলে যাচ্ছেন। বাকিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে হামেশাই বাঘের আক্রমণের মুখে পড়ছেন।