কলকাতা: প্রায় প্রতি মাসেই অর্থনৈতিক খাতে দেশের কোনও না কোনও নিয়ম বদলাতে থাকে। তবে ২০২৩ সালে একটু বেশিই যেন কড়াকড়ি হয়েছে। যদিও তা অকারণে নয়। বরং, নাগরিকের আর্থিক স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই জারি হয়েছিল নির্দেশ। এই নিয়মগুলো মানার ক্ষেত্রে কিছুর সময় অতিক্রান্ত, বাকি এখনও হাতে রয়েছে সামান্য হলেও। বছরশেষের আগেই যাতে তা সেরে ফেলা যায়, দেখে নেওয়া যাক এক এক করে।
প্যান আধার লিঙ্ক:
প্যান-আধার লিঙ্ক করার শেষ দিন ছিল গত ৩০ জুন। ফলে যাঁরা এই সময়ের মধ্যে প্যানের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করিয়ে উঠতে পারেননি, তাঁদের প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। যার জেরে নির্দিষ্ট কিছু আর্থিক কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে অনেকেই আশা করেছিলেন, সরকারের তরফে হয়তো এই সময়সীমা বাড়ানো হবে। আদতে কিন্তু তা হয়নি।
আরও পড়ুন: আজই সেরে নিন এই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, না হলে হতে পারে বিপুল টাকার ক্ষতি
২০২১-এ ফিনান্স আইনে একটি নতুন সেকশন সংযোজন করা হয়েছে। ওই আইনের আওতায় ২৩৪ এইচ ধারার অধীনে জাল প্যান সনাক্ত করার জন্য প্যান-আধার লিঙ্কিং জরুরি। ১৩৯এএ উপধারার আওতায় প্রতিটি গ্রাহককে প্যানের সঙ্গে আধারের সংযোজন করাতে হবে। নির্ধারিক সময়ে কিংবা তার আগে এই সংযোজন না করালে ১০০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
কীভাবে নিষ্ক্রিয় প্যান কার্ড অ্যাক্টিভেট করাতে হবে?
৩০ জুন, ২০২৩ তারিখের মধ্যে আধার-প্যান লিঙ্ক না করানো হলে পরে চাইলে তাঁরা লিঙ্ক করাতে পারেন। তবে সেটা করাতে গেলে অবশ্যই জরিমানা প্রদান করতে হবে। প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে সরল কয়েকটি উপায়ে সেই কার্ড ফের সক্রিয় করা সম্ভব। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত সিবিডিটি সার্কুলারে জানানো হয়েছে যে, ১০০০ টাকা ফি প্রদানের পরে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আধার তথ্য প্রদানের পরে প্যান কার্ডটি ৩০ দিনের মধ্যে সক্রিয় হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। ধরা যাক, কোনও এক জন গ্রাহক ১০ জুলাই প্যান-আধার সংযুক্তির আবেদন করলেন। এতে তাঁর প্যান কার্ডটি ৯ অগাস্ট কিংবা তার আগে সক্রিয় হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে মোট কত টাকা জমা করা যায়? অনেকেই কিন্তু জানেন না
২০০০ টাকার নোট বাতিল:
ক্লিন নোট নীতির আওতায় ১৯ মে বাজার থেকে ২ হাজার টাকার নোট প্রত্যাহারের ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিবৃতিতে আরবিআই জানায়, ‘ক্লিন নোট পলিসির আওতায় ২ হাজার টাকার নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’। এই বিবৃতিতে ব্যাঙ্কগুলোকে ২ হাজার টাকার নোট ইস্যু করতে বারণ করা হয়। পাশাপাশি আমজনতাকে ২ হাজার টাকার নোট বদল বা জমা দেওয়ার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পরে তা বাড়ানো হয় ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। পাশাপাশি, আরবিআই তাদের বিবৃতিতে এও জানিয়েছে যে ১৯টি আরবিআই ইস্যু অফিস এই কাজে নাগরিকের পাশে থাকবে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
নতুন ব্যাঙ্ক লকার চুক্তি:
লকার নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে হবে। দেশের ব্যাঙ্কগুলিকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। লকার ব্যবহার নিয়েও একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি হয়েছে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আরবিআই।
নথিপত্র, সোনা, গয়নার মতো মূল্যবান জিনিসপত্র লকারে রাখতে পারেন গ্রাহক। কিন্তু নগদ অর্থ রাখা যাবে না। অস্ত্র, বিপজ্জনক পদার্থ বা মাদকদ্রব্য রাখাও চলবে না। আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে জানিয়েছে, নতুন চুক্তিতে এগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে।
চুক্তিতে এটাও উল্লেখ করা থাকবে যে লকার ব্যবহারের অধিকার অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যাবে না। শুধু গ্রাহকই ব্যবহার করতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, লকার হোল্ডারের কাছ থেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ যখন খুশি পরিচয়ের প্রমাণ চাইতে পারে। এবং লকার হোল্ডারকে তা দেখাতে হবে। গ্রাহক যদি নিজের পরিচয় প্রমাণে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাঙ্ক লকার অ্যাক্সেস বাতিল করে দিতে পারে।
অতএব, যতাযথ লকার ব্যবহারের জন্য গ্রাহকও দায়বদ্ধ। লকারের অপব্যবহার হলে গ্রাহকও দায়ী থাকবেন। এই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের দিকে আঙুল তোলা যাবে না। তবে লকারে রাখা মূল্যবান জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হারিয়ে গেলে প্রযোজ্য নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া যাবে।
চুক্তি সম্পন্ন করতে স্ট্যাম্প পেপারের খরচ ব্যাঙ্ক দেবে। তবে এটা বিদ্যমান গ্রাহকদের সঙ্গে নতুন যুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নতুন লকার ভাড়া নিতে চাইলে স্ট্যাম্প পেপারের খরচ গ্রাহককেই দিতে হবে। চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, সময় মতো লকারের ভাড়া বা বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাঙ্ক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা কেটে নিতে পারে।
এর আগে ১ জানিয়ারি ২০২৩-এর মধ্যে গ্রাহকের সঙ্গে লকার চুক্তি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পরে সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব নিজের ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভাল- সময়সীমা এখনও অতিক্রান্ত হয়নি।