সুন্দরবনের বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন 

Sundarban: সুন্দরবনের ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্তদের পাশে শান্তিপুরের মানুষ

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঘূর্ণিঝড় রিমেলের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবনবাসীদের পাশে এসে দাঁড়াল শান্তিপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রায় চার ঘণ্টা জলপথে পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের কুমারীমারি দ্বীপে পৌঁছন ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সেখানে তাঁরা ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্তদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন।

এর আগে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত সুন্দরবনের গ্রামবাসীদের পাশেও দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তারপর থেকেই সারা বছর জুড়ে সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের বিভিন্ন দরকারে পাশে থাকার চেষ্টা করে নদিয়ার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের উদ্যোগে প্রতিবছর পালন করা হয়ে থাকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস ‘শিকড়ের টানে’। উদ্দেশ্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্প-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো। ইতিমধ্যেই কুমারীমারি দ্বীপে হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছে তাঁরা। প্লাস্টিক মুক্ত দ্বীপ, এই স্লোগান তুলে মানুষকে সজাগ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আর‌ও পড়ুন: চা খেতে মাটির ভাঁড়ের চাহিদা আবার বাড়ছে, তবুও হতাশ কুমোররা

সুন্দরবনের কুমারীমারি দ্বীপে হাজারের বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। সুন্দরবনের এই আদিবাসীদের নিজ রাজ্য ছেড়ে এখানে আসার এক ঐতিহাসিক কাহিনী আছে, যার সূত্রপাত হয়েছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকারের হাত ধরে। জানা যায় সুন্দরবনের আদিবাসীদের আনা হয়েছিল ভূমি সংস্কারের বিভিন্ন কাজে। ভাবতে অবাক লাগে যারাই ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বাঘের পেটে গিয়ে গভীর জঙ্গলকে জনবসতিতে পরিণত করেছিলেন তাঁরাই আজ তাঁদের ভূমি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। এই সমস্ত মানুষদের মূলত চাষাবাদ আর মাছ ধরাই প্রধান জীবিকা হয়ে ওঠে।

সুন্দরবনে প্রতিবছর নানান ধরনের দুর্যোগ লেগেই থাকে। এই কারণে কলতানের একটি শাখা দ্বীপে স্থাপিত করা হয়। যেখানে আদিবাসী শিশুদের শিল্প, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখা যায়। শিশুরা ধামসা, মাদলের মত বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে ঝুমুর গানের শিক্ষা নেয় এই বিদ্যালয় থেকেই। যদিও বর্তমানে সেখানে আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিশুদের‌ও ভিড় জমতে শুরু করেছে। দিশারী সংস্থার প্রচেষ্টায় এখানকার আদিবাসী শিল্পীদের আজ ভারত সরকারের সেন্ট্রাল বিওডো অফ কমিউনিকেশনের অন্তর্গত সং অ্যান্ড ড্রামা ডিভিশনে শিল্পী হিসেবে নাম নথিভুক্ত হয়েছে।

এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জানান, কুমারীমারি দ্বীপের সঙ্গে তাঁদের এক মজবুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ফলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলছেন। এদিন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নানান সাহায্য তুলে দেওয়া হয়। ছাদবিহীন ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়িগুলোতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন শুকনো খাবার, মশারি, মহিলাদের শাড়ি, শিশুদের জন্য ঔষধপত্র ও পড়াশোনা সামগ্রীর পাশাপাশি বেশ কিছু ত্রিপল তুলে দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।

সুমন সাহা ও মৈনাক দেবনাথ