মাথাভাঙা: লোকসভা নির্বাচন গোটা দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে।পশ্চিমবঙ্গের জেলা কোচবিহার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা। ফলে জেলার বহু এলাকায় সীমান্ত এলাকা চোখে পড়ে। নির্বাচনের সময় আর পাঁচটা সাধারণ এলাকার মতন পরিস্থিতি থাকেনা এই সীমান্ত এলাকা গুলিতে। নির্বাচন কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটার সকলের জন্য সমস্যা থাকে প্রচুর। তবুও নির্বাচন হয় এই এলাকা গুলিতে।

কোচবিহারের এমনই এক এলাকা হল মহিষমুড়ি গ্রামের ৫/১৩৬ নং বুথ শালবাড়ি। এলাকাটি শীতলকুচি ব্লকের খলিসামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এই গ্রামের মোট ১৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে শাল বাগান। মূলত এই কারণেই গ্রামটির এই নামকরণ হয়েছে। গ্রামটির তিনদিকে ঘিরে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও গ্রামটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ধরলা নদী। এখানে যেতে হলে সচিত্র পরিচয় প্রমাণপত্র ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে দেখাতে হয়।

আরও পড়ুনঃ মাঝরাস্তায় আচমকা উল্টে গেল বাস! পুরুলিয়ায় ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনায় আহত অনেক, হাহাকার বরাবাজারে

সীমান্তের ১০০ মিটার দূরে কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর নিয়ম। তবে সেই নিয়ম মানা হলে হয়তো এই এলাকায় বসবাস করার জায়গাটুকু থাকবে না। তাই আজও এলাকাটি সীমান্তের কাটা তাঁদের বেড়াবিহীন হয়েই রয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে এক ভোটকর্মী নয়ন বর্মন জানান, “এই এলাকায় প্রবেশ করা যথেষ্ট অসুবিধা হয়। সঠিক প্রমাণ না রেখে এলাকায় প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ফলে এই এলাকায় মানুষেরা নিজেদের এলাকায় বন্দী।”

নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার নারায়ণ সরকার ও দ্বিতীয় পোলিং অবিনাশ বর্মন জানান, “এই এলাকায় বিষয়ে আগে শুনেছি। তবে এলাম প্রথম। জেলার এই এলাকায় ভোটে কোনও অশান্তি হয় না। ভোটগ্রহণ পর্ব নির্বিঘ্নেই হয়। এখানে ভোট গ্রহণের সময় সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নেই ভোট দেন। ভোটারের সংখ্যা খুব একটা বেশি না, মাত্র ৭৪০ জন। যেখানে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৪১১ জন এবং মহিলা ভোটার ৩২৯ জন।” তবে এই এলাকাটি ভারতের ভূখণ্ড হলেও আজও বন্দী এই এলাকায় মানুষরা কার্যত বন্দী। যেখানে সব এলাকায় ভোটের উত্তাপ রয়েছে কোচবিহার কেন্দ্রে। সেখানে এখানের ভোট কতটা শান্তিপূর্ণ হয় সেটাই এখন দেখার।

Sarthak Pandit

কোচবিহার: ১৯ এপ্রিল নির্বাচনের প্রথম দফায় কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন সম্পন্ন হবে। মূলত এই কারণেই আগামিকাল ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কর্মীরা বিভিন্ন বুথের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। ডিসিআরসি সেন্টার থেকে ইভিএম মেশিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে তারা রওনা হচ্ছেন ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। তবে তারই মাঝে দুটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা সামনে এসেছে কোচবিহার থেকে।

LIVE | লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ প্রথম দফার ভোট

একদিকে দিনহাটা ডিসিআরসি সেন্টারের সামনে আচমকাই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ভোটগ্রহণ কর্মীরা। অপরদিকে, মাথাভাঙা কলেজ মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন বহু ভোটকর্মী। দিনহাটার কলেজের ময়দানে স্থাপন করা হয়েছে দিনহাটা ও সিতাই বিধানসভার ডিসিআরসি সেন্টার। এই ডিসিআরসি সেন্টারে বেশ কিছু ভোট গ্রহণ কর্মী আচমকাই বিক্ষোভ শুরু করেন কলেজের গেটের সামনে। তাঁদের দাবি, “এপ্রিলের ১৪ তারিখ জানানো হয়েছিল যাঁরা ভোটের ডিউটি করবেন, তাঁদের ১৫ তারিখের মধ্যে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। তবে এখনও তাঁদের টাকা না দেওয়ায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।”

আরও পড়ুনঃ চরম গরমে ফুটছে বাংলা! দক্ষিণের জেলায় জেলায় তাপপ্রবাহ, কলকাতায় ফের কবে নামবে বৃষ্টি? জানুন পূর্বাভাস

কর্মীরা জানান, “টাকা না দিলে ভোট নিতে যাবেন না ভোট কর্মীরা।” ঘটনায় মুহূর্তে যানজট সৃষ্টি হয় এলাকায়। বিক্ষুব্ধ ভোট কর্মীদের শান্ত করতে ছুটে আসে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনের কর্তব্যরত আধিকারিকদের আশ্বাসে তাঁরা বিক্ষোভ থামিয়ে দেন।

অপরদিকে মাথাভাঙা কলেজ মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন ভোটকর্মীরা। তাঁদের দাবি, “ভোটগ্রহণ কর্মীদের ডিসিআরসি সেন্টার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনওরকম গাড়ি দেওয়া হয়নি। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ বেসরকারি এবং সরকারি গাড়ি ভোটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই রাস্তায় গাড়ি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভোটকর্মীদের। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করলেও কোন গাড়ি না পেয়ে অবশেষে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন সকলে।”

LIVE : West Bengal Lok Sabha Election 2024 Phase one Voting in Cooch Behar, Alipurduar and Jalpaiguri

যদিও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে এবং হস্তক্ষেপে তাঁরা বিক্ষোভ উঠিয়ে নেন। তবে ভোট পর্ব শুরু না হতেই জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত এই ঘটনা ভোটের উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলেছে অনেকটাই। যদিও ভোটকর্মীরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে শুরু করেছেন আবারও। এখন দেখার বিষয় এটাই আগামীকাল প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচন কতটা সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয় কোচবিহারে।

Sarthak Pandit