নদিয়া: রিমলের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নদিয়ায়। আখ ও কলা চাষে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ভয়াবহ ক্ষতির মুখে এখানকার চাষিরা। নষ্ট হয়ে গেছে বিঘের পর বিঘে জমিতে চাষ করা আখ ও কলাগাছ। ঘূর্ণিঝড় রিমলের তাণ্ডবে যথেষ্টই প্রভাব পড়েছে।
রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত অনবরত ঝড়ো হাওয়া হয়ে গিয়েছে জেলার উপর দিয়ে। সঙ্গে ভারী বৃষ্টি। আর তাতেই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হল নদিয়ার কলা এবং আখ চাষিদের। একটানা ঝোড়ো হাওয়ার কারণে মাটিতে শুয়ে পড়েছে কলা গাছগুলি। এছাড়াও শুয়ে পড়েছে বিঘা বিঘা জমিতে চাষ করা আখ। এই ক্ষতির ধাক্কা কিভাবে সামলে উঠবেন বুঝতে পারছেন না কৃষকরা।
আরও পড়ুন: পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা শিলিগুড়িতে
এই আখ ও কলা চাষের উপরে নির্ভর করেই চলে সারা বছরের সংসার। কিন্তু এই প্রবল ঝড়ে ক্ষতি হওয়ায় এখন মাথায় হাত পড়ার জোগাড়। অনেকেই ধারদেনা করে চাষ করেছিলেন। তাঁরা কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় রিমলের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলির মধ্যে নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান-এও ক্ষতির মাত্রা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
মৈনাক দেবনাথ
সুমন সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : বিভিন্ন জাতের কলা এখন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হতে দেখা যাচ্ছে। আর কলা চাষ করে প্রচুর টাকা লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। এখন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জয়নগর কুলতলি ক্যানিং মন্দির বাজার এবং সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় কৃষকরা অন্যান্য চাষের তুলনায় প্রচুর পরিমাণে কলা গাছ চাষ করছে। যেহেতু খরচ অনেকটাই কম এবং লাভবান হওয়ার উপায়, তাই অল্প খরচ করে কলা চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে কৃষকরা।
তবে আপনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেশ কিছু এলাকায় এই কলাবাগান গুলিতে আসলে আপনার চোখে পড়বে যে কলা গাছের যে কলা হয়ে আছে সেই গলাতে প্লাস্টিক বা চটের ব্যাগ দিয়ে মুড়ে রাখা হয়। আপনি কি জানেন কলার কাঁদিকেন এই চটের বা প্লাস্টিক দেয়া হয়, না জানা থাকলে জেনে নিন। কলাচাষিদের কথা অনুযায়ী কলার কাঁদি যদি গাছের ঝুলিয়ে রাখা যায় তাহলে কলার পচন ধরে না এবং গাছে থেকে কলা কেটে রাখলে ধীরে ধীরে পাকতে থাকে।
আরও পড়ুন : একগাদা টাকা দিয়েও পাতিলেবু কিনে ঠকছেন? দোকানির ঝুড়িতে রসে টইটম্বুর পাতিলেবু চেনার টিপস জানুন
গাছে ঝুলিয়ে রাখলে কলার গায়ে কোনও দাগ আসে না। আর যদি গাছে এ গলা ঝুলে থাকে তাহলে অন্য কোনও পশু পাখি থেকে আটকানো যেতে পারে। তাই এই কলা গাছের কাঁদি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনারাও কোনও প্লাস্টিকের চটের বস্তা দিয়ে কলার কাণ্ড থেকে গোড়া পর্যন্ত মুড়ে রাখেন তাহলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এবং কলার কাঁদি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাই কলা গাছের কাণ্ড থেকে গোড়া পর্যন্ত প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে মুড়ে রাখা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বেশ কিছু কৃষকেরা সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন। এই সমস্ত এলাকার কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে। তবে প্রথাগত চাষের পরিবর্তে বিকল্প চাষ করে তাঁরা আরও অধিক পরিমাণে লাভের মুখ দেখছেন। প্রথাগত উপায়ে ধান, আলু বা সবজি নয় বরং কলা চাষ করে লক্ষীলাভ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা কৃষকরা।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গের মাথায় নয়া পালক! তিন-তিনটে শাড়ি পেল জিআই ট্যাগ! জানুন কোনগুলি?
আর সেই সমস্ত জমি ও বাগানের উপরে কলার বাগান তৈরি করছেন। আর এই বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির কলা গাছ রোপণ করেছেন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভিন্ন বাজারে এই ধরনের প্রজাতির কলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই কলা চাষের মাধ্যমে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন। যা অন্য ধরনের ফসল চাষ করে উপার্জন করতে পারেনা বলে জানাচ্ছেন এই কলা চাষ কলা চাষিরা। কার্যত এই কারণেই এই বিকল্প চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কলা চাষীরা।
এ প্রসঙ্গে এক কৃষকের কথা অনুযায়ী কলা এক বছরের ফসল। এক বিঘে জমিতি ৩৫০-৪০০ কলাগাছ লাগানো যায়। তিন বছর পরপর ফল পাওয়া যায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলির নির্দিষ্ট জীবিকার ব্যবস্থা করা যায়। তাঁরা নিজেরাই চাষ করে নিয়মিত আয় করবে, এমনই আমরা আশা করছি। রাজ্যের কলা উৎপাদনের অনেকটাই হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। জেলায় দেশি পদ্ধতিতে যে কলা চাষ হয়, তাতে প্রতি কাঁদিতে ২০ কেজি মতো ফলন হয়। কিন্তু টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি জি-৯ প্রজাতির কলায় উৎপাদন হয় কাঁদি প্রতি প্রায় ৩৫ কেজি। হলুদ রঙের বড় আকারের এই কলার কাঁদির উপর থেকে নীচ পর্যন্ত প্রতিটিই আকারে এক রকম। ফলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। এখন বিভিন্ন শপিং মলেও এখন এই কলা বিক্রি হচ্ছে।
সুমন সাহা
Just another WordPress site