দক্ষিণ দিনাজপুর: অযোধ্যার সরযূ নদীর পাড়ে ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে দেশ জুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। এই দিনই বালুরঘাটের পুন্যতোয়া আত্রেয়ী নদীর পাড়ে লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনায় মেতে উঠেছেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ওই এলাকায় ৩০ ফুট উচ্চতার শ্রী রামচন্দ্রের কাটআউটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২১ জন পুরোহিত দ্বারা সন্ধ্যা আরতি আত্রেয়ী নদী পাড়ে করা হয়। ৩০ জন ঢাকি ঢাক বাজালেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠান ঝলমলে করে তুলতে সাংসদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাম মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে সকাল থেকেই চলছে উৎসবের মেজাজ। কোথাও অযোধ্যায় রাম মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে রাম মন্দির, কোথাও আবার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আর এই রাম মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করেই বালুরঘাট শহরের কল্যাণী সদরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে এক লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
আরও পড়ুন: রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হতেই সেজে উঠল সরযূর পাড়, ঝলমল করছে লক্ষ প্রদীপ, দেখুন সেই ছবিগুলি
আর এই লক্ষাদিক প্রদীপ জ্বালানোয় সাক্ষী থাকতে বালুরঘাট শহর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ, যাঁরা সদরঘাটে উপস্থিত হয়েছে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করার পর আত্রেয়ী নদীর আরতিতে অংশগ্রহণ করেন বালুরঘাটের সাংসদ। পাশাপাশি এদিন উপস্থিত ছিলেন বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ি-সহ অন্যান্য কার্যকর্তা।
সুকান্তবাবু বললেন, ”সারাদিন জেলা রামময়, অলিগলি থেকে রাজপথ সর্বত্র রামের আরাধনা করেছে সাধারণ মানুষ। যা অনেকটাই জানা ছিল না।অনেকেই নিজের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছেন। আজ আত্রেয়ী নদীর ঘাটে এত লোকের সমাগম! প্রশাসনিক ভাবে কোনও সাহায্য করা হয়নি, তা সত্ত্বেও মানুষ নিজের দায়িত্বে এসেছেন এবং সুশৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েই অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করেছে। এই জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
জানা গিয়েছে, অন্ততপক্ষে হাজার দশেক মানুষের সমাগম হয়েছিল আত্রেয়ীর তীরে। এত বিপুল সংখ্যক ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে কোনওরকম পুলিশি ব্যবস্থা আয়োজন করেনি জেলা প্রশাসন। এমনকি নদীতেও সেভাবে সিভিল ডিফেন্স বা বিপর্যয় মোকাবিলার কাউকে দেখা যায়নি।
সুস্মিতা গোস্বামী
রাম মন্দিরের উদ্বোধন। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা দিবস। সরযূ নদীর পাড়ে সেজে উঠেছে অযোধ্যা নগরী। দেশ তথা সারা বিশ্বে যত রাম ভক্তরা আছে প্রত্যেকেই প্রবল উৎসাহী আজ। পিছিয়ে নেই শিলিগুড়িও। রাম লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা দিবসে অত্যন্ত উৎসাহী শিলিগুড়ির এক দোসা বিক্রেতা রাহুল প্রসাদ। তাই আজ শহরবাসীকে বিনামূল্যে দোসা খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি । বিনামূল্যে দোসা খেতে চলে আসতে হবে শিলিগুড়ির এস এফ রোডের এই দোসা সেন্টারে। এল আই সি বিল্ডিংয়ের বিপরীতেই এই দোকানে আজ বিকেল ৪ টে থেকে মিলবে ফ্রি দোসা।
অযোধ্যা: রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে হাজির বলিউডের বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী। রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, ভিকি কৌশল, ক্যাটরিনা কাইফ, রোহিত শেঠি, আয়ুষ্মান খুরানা, মাধুরী দীক্ষিত– এই তালিকা বেশ লম্বা। রামলালার পাশাপাশি তাঁদের দিকেও যেন কোটি কোটি চোখ। আর সেই অগুন্তি নেটিজনদের চোখেই পড়ল একটি বিরল দৃশ্য।
পরিচালক সুভাষ ঘাই রাম মন্দির থেকে একটি ভিডিও করে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই নেটদুনিয়া তোলপাড়। দেখা যাচ্ছে, তিনি নিজে ছাড়াও চারপাশে একাধিক বলি তারকা। কেউ বসে রয়েছেন, কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। রাম মন্দিরের সামনে অতিথি আসন পাতা রয়েছে।
View this post on Instagram
সেই ভিডিওতে দেখা গেল, আলিয়া পাশে কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁর অন্য পাশে স্বামী রণবীর বসে। আর তাঁর পিছনে ক্যাটরিনা আর ভিকি। দেখা গেল, রণবীর হঠাৎ ফোন তাক করলেন। হাত উপরে মেলে ধরলেন নায়ক। সম্ভবত তিনি সেলফি বা সেলফি ভিডিও তোলার চেষ্টা করছেন। পিছনেই ক্যাটরিনা কইফ। দেখা গেল, নায়িকাও একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। পাশ থেকে আলিয়া একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
আর সেই ভিডিও দেখেই গুনগুন শুরু নেটপাড়ায়। তবে কি প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যাটরিনার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলেন রণবীর? নাকি কেবলই সেই অনুষ্ঠানের মুহূর্তগুলির সঙ্গে নিজেদের এক ফ্রেমে ধরার জন্যই ফোন তাক করেছিলেন নায়ক?
ক্যাটরিনা এবং রণবীর ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় সাত বছর প্রেম করেছেন। তবে সে সম্পর্ক তিক্ততা নিয়েই শেষ হয়েছিল। ক্যাটরিনা এখন ভিকিকে বিয়ে করে সুখী, অন্যদিকে রণবীর এবং আলিয়া তাঁদের কন্যা রাহা কাপুরকে নিয়ে আনন্দে সংসার করছেন।
সামনে এল রামলালার মূর্তি৷ দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেই মূর্তি দেখতে পেলেন ভক্তরা৷ এরপর সকলের জন্য খুলে যাবে অযোধ্যার রাম মন্দির৷ সবাই দর্শন পাবেন নবনির্মিত রামলালার মূর্তির৷ মূর্তিটি তৈরি করেছেন ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ৷ মূর্তিটি তৈরি করতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় ছয় মাস।
রামমন্দিরের পবিত্র গর্ভগৃহে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠার’ পর মন্দিরের বাইরে এসে কার্যত আবেগে ভাসলেন ‘প্রধান যজমান’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রভু রাম এলেন৷ অনেক ত্যাগ, সংগ্রামের পর আজ উপস্থিত ভগবান শ্রীরাম। কত কিছু বলার আছে। কিন্তু কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে। আমার শরীর এখনও কাঁপছে। আমাদের রামলালা ‘টেন্টে’ থাকবে না। আমাদের রামলালা এবার মন্দিরে থাকবেন।”
অযোধ্যা: রাম জন্মভূমি ট্রাস্টে মোট ২.৫১ কোটি টাকা দান করল আম্বানি পরিবার৷ এ দিন অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় মুকেশ আম্বানি-সহ উপস্থিত ছিলেন নীতা আম্বানিও৷ অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় এ দিন সবক্ষেত্রের নক্ষত্ররা উপস্থিত ছিলেন৷ বিটাউনের তারকা থেকে শুরু করে প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও এদিন উপস্থিত ছিলেন মন্দিরে৷
মুকেশ আম্বানির সঙ্গে নীতা আম্বানির উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল রাম মন্দিরে৷ রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে মুকেশ আম্বানি বলেন, ‘আজকে প্রভু রাম আসছেন, ২২ জানুয়ারি গোটা দেশের জন্য রাম দিওয়ালি পালিত হতে চলেছে৷’ রিলায়েন্স জিও চেয়ারম্যান আকাশ আম্বানিও স্ত্রী শ্লোকা মেহেতার সঙ্গে এ দিন উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের পাতায় এই দিনটি লেখা থাকবে৷ আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে এখানে উপস্থিত হয়ে৷’
এ দিন মন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনন্ত আম্বানি, রাধিকা মার্চেন্ট৷ রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে আম্বানি পরিবারের সঙ্গে আলাপ চারিতায় ব্যস্ত হতে দেখা যায় প্রাক্তন ক্রিকেটার শচিন তেন্ডুলকরকেও৷
দক্ষিণ দিনাজপুর: অভাব নিত্য সঙ্গী। ঠিক মতো কথা বলতে পারেন না। বিয়েও করেননি৷ কিন্তু মন জুড়ে আবেগে ভরপুর। তাই তিনি স্থির করেছিলেন, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় যখন রাম মন্দিরের উদ্বোধন করা হবে, সেদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনামূল্যে চা বিস্কুট খাওয়াবেন বালুরঘাট এলাকার ক্ষুদ্র চা ব্যবসায়ী মলয় সরকার (৫৮)। সেই মতো শনিবার সকালেই বিনামূল্যে চা খাওয়ানোর ব্যানার দোকানে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। যাতে সকলে সেদিন চা খেতে আসেন৷
রামমন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে খুবই আবেগপ্রবণ ভক্তরা। উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই তাঁদের মধ্যে। এই রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনই এক বড় উদ্যোগ নিলেন চা বিক্রেতা মলয় সরকার।
আরও পড়ুন : ৯.১৪ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ সামগ্রী উদ্ধার, গ্রেফতার ৬, দূরপাল্লার ট্রেনে কড়া নজরদারি
বাড়িতে বর্তমানে ভাই, ভাইঝি ও ভাইয়ের বউ আছে৷ বিয়ে করেননি। বাড়ি শহরের নাইন জুয়েলস ক্লাব সংলগ্ন এলাকায়। শারীরিক সমস্যার কারণে ঠিক মতো কথা বলতে পারেন না তিনি। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে বালুরঘাট শহরের সত্যজিৎ সিনেমা হল সংলগ্ন ডি মোড়ে চায়ের দোকান চালিয়ে আসছেন। চা দোকান করে যা আয় হয় তাতে সংসার খরচ ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান মলয়বাবু৷
এই বিষয়ে চা বিক্রেতা মলয়বাবু জানান, সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী হলেও ভগবান রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিন সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে চা ও বিস্কুট খাওয়াবেন। তার প্রস্তুতি চলছে গত দু’দিন আগে থেকেই। দোকানের সামনে লাগানো ফ্লেক্সেও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সবাই আসুন, চা খেয়ে যান, কোনও টাকা নেব না।’
অনেক ভবঘুর ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে চা বিস্কুট খাওয়ান৷ দীর্ঘদিন ধরে শুনছেন রাম মন্দির হচ্ছে। অবশেষে এদিন তারই শুভ উদ্ধোধন। তাই ভগবান রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষদের বিনামূল্যে চা ও বিস্কুট খাওয়ালেন। সকালে দোকান খোলা থেকে রাতে দোকান বন্ধ পর্যন্ত যতক্ষণ দোকান খোলা থাকবে, বিনামূল্যে চা এবং বিস্কুট খাওয়ালেন৷
কারও কাছ থেকে নিলেন না টাকা। মুখে ঘোষণা নয়, রীতিমতো ফ্লেক্স করে দোকানের সামনে তা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। মলয় সরকার ওরফে বিশু’র এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চা প্রেমী থেকে স্থানীয়রা।
সুস্মিতা গোস্বামী