কলকাতা: পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক নির্বাচনে রাজ্যে সিংহভাগ মহিলাই তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রেখেছেন। এবার সন্দেশখালি ইস্যুকে হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটে বাংলার মহিলাদের মন পেতে এখন মরিয়া পদ্ম শিবির বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। বুধবার বঙ্গে জোড়া কর্মসূচি করেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলাদের উদ্দেশ্যে দেন বিশেষ বার্তা। এবার তারই পাল্টা দিল তৃণমূল। বারাসত নির্বাচনী কেন্দ্রে বিজেপির তরফে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ‘মোদির গ্যারান্টি’ পেশ করে সাধারণ মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন, এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।
১. বিজেপি: বিজেপি সরকার এমন এক আইন প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে ধর্ষককে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়
তৃণমূল: বিজেপি নেতৃত্বাধীন গুজরাতের সরকার বিলকিস বানোর ধর্ষকদের সাজার মেয়াদ ফুরোনোর আগেই মুক্ত করে দেয় এবং ধর্ষকদের মুক্তির পর সংবর্ধনা দেওয়া হয়
আরও পড়ুন: দাউ দাউ করে জ্বলল জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের বিলাসবহুল আবাসন, কেমন আছেন অভিনেত্রী?
২. বিজেপি : বিজেপি সরকার নারীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করেছে
তৃণমূল: বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং বাংলায় বিজেপির অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালব্য তাঁর আইটি সেলে সেই ধর্ষকদের নিয়োগ করেছেন, যারা নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে অবস্থিত আইআইটি-বিএইচইউ গণধর্ষণ কাণ্ডে যুক্ত
৩. বিজেপি: নরেন্দ্র মোদি সর্বদা দেশের মহিলাদের পাশে থাকেন এবং তাঁদের কল্যাণার্থে কাজ করেন
তৃণমূল: কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক এবং ভিনেশ ফোগটকে রাজধানী দিল্লির রাজপথে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রাস্তার উপর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ, তাঁরা ভারতের মহিলা ক্রীড়াবিদদের উপর যৌন নির্যাতন চালানো ব্রিজভূষণ সিং শরণের শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন
৪. বিজেপি: প্রধানমন্ত্রী সারা দেশ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎখাত করবেন
তৃণমূল: নরেন্দ্র মোদি এবং তার সহযোগীরা নির্দ্বিধায় ঘুষখোর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শুভেন্দু অধিকারী এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের মতো নেতাদের প্রচার করেন। অথচ, একটা সময় এঁদেরই দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক বলে তোপ দেগেছিল বিজেপি। একবার ওদের শিবিরে নাম লেখালেই বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে অপরাধীদের সমস্ত পাপ ধুয়ে সাফ হয়ে যাবে
৫. বিজেপি: গত একদশক ধরে বিজেপি বিকশিত বাংলা তথা বিকশিত ভারতের জন্য পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করেছে
তৃণমূল: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে লজ্জার হারের পর বাংলার জন্য বরাদ্দ ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। যার ফলে চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষকে। সারা ভারতে বাংলাই হল একমাত্র রাজ্য, যারা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য বরাদ্দ ১০০ দিনের কাজের টাকা পায়নি। অথচ, গত পাঁচটি আর্থিক বছরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা থেকে করবাবদ ৪.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছে
৬. বিজেপি: নারীকে সম্মান প্রদানে প্রধানমন্ত্রী সর্বদা ব্রতী এবং এই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন
তৃণমূল: প্রবল নারীবিদ্বেষী এবং নারীবিরোধী পবন সিং, যিনি তাঁর গানের মাধ্যমে বাঙালি নারীদের অপমান করায় কুখ্যাত, সেই তাঁকে আসানসোলের প্রার্থী করেছিল বিজেপি
আরও পড়ুন: ‘কাল ভোট হলে কালই জিতব…’ ! আত্মবিশ্বাসী দিলীপ ঘোষ
৭. বিজেপি: প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যে বাংলার মাটিতে মা সারদার মতো প্রণম্য নারী জন্ম নিয়েছেন, সেই বাংলাকে তিনি অত্যন্ত সম্মান করেন
তৃণমূল: বিজেপি এই মা সারদারই কুৎসিত ব্যঙ্গচিত্র সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল। এমনকী, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ তারা সেটি মোছেনি। দলের রাজ্য নেতারা বারবার বাঙালির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙা থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অপমান, বিজেপি বারবার তার বাংলাবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছে
৮. বিজেপি: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বাংলায় ২৪ লক্ষেরও বেশি মহিলার নামে বাড়ি নথিভুক্তি করানো হয়েছে
তৃণমূল: বাংলায় আবাস যোজনার আওতায় মোদি সরকার ৮,০০০ কোটিরও বেশি টাকার বরাদ্দ আটকে রেখেছে। যার ফলে লক্ষ লক্ষ মহিলা-সহ মোট ১১.৩৬ লক্ষ যোগ্য উপভোক্তা তাঁদের ন্যায্য ছাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এর কারণ হল, তাঁরা একুশের নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন
৯. বিজেপি: লোকসভায় মহিলা জনপ্রতিনিধিদের নিশ্চিত সংরক্ষণ প্রদান এবং সেই আইন কার্যকর করা হয়েছে
তৃণমূল: যারা নারীশক্তি নিয়ে এত বড়াই করে, গত সপ্তাহেই বাংলার জন্য তাদের তরফে যে প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মাত্র ৩ জন মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় স্তরেও ছবিটা আলাদা কিছু নয়। মোট ১৯৫টি আসনে ঘোষিত প্রার্থীতালিকার মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ২৮। অর্থাৎ, বিজেপি মাত্র ১৩ শতাংশ মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস আগেই ৩৮ শতাংশ মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। যা তথাকথিত ৩৩ শতাংশের সংরক্ষণের থেকেও বেশি
১০. বিজেপি: মহিলাদের সমস্ত সমস্যা দূর করতে বিজেপি বদ্ধপরিকর
তৃণমূল: চলতি মাসের প্রথম ছ’দিনের মধ্যেই বাংলায় তিনটি সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, মণিপুরের নিগৃহীতারা এখনও নরেন্দ্র মোদীর অপেক্ষায় রয়েছেন। ১০ মাস হয়ে গেল! সেখানে জাতিদাঙ্গা চলছে তো চলছেই।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে গুরুত্ব দিতে মরিয়া দুই দল। বুধবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোদির শরীরের প্রতিটা অংশ, জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এই পরিবারের জন্য মাতৃশক্তির জন্য সমর্পিত।। ‘