মালদহ: ঘরে ঘরে জ্বলছে টিমটিম করে প্রদীপের আলো। সেই আলোতে ভাল করে অন্ধকার দূর হয় না। ফলে সন্ধে হলেই গাঢ় অন্ধকার ঢেকে যায় গোটা এলাকা। এই আধুনিক সভ্যতার যুগেও এখনও প্রদীপের টিমটিমে আলোই ভরসা ইংরেজবাজারের কাজলদিঘি বাগানপাড়া গ্রামের মানুষের।
মালদহ জেলার সদর ব্লকের একটি গ্রামের এমন অবস্থার কথা সকলকে বিস্মিত করতে বাধ্য। আজও ছোট্ট এই গ্রামটিতে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। ফলে উন্নয়ন ও আধুনিকতা থেকে একেবারে বঞ্চিত ইংরেজবাজার ব্লকের এই গ্রাম। এই এলাকায় মোট ১৯ টি পরিবার বসবাস করে। বিদ্যুতের খুঁটি দীর্ঘদিন আগে পোঁতা হলেও আজও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে অন্ধকারেই থেকে গিয়েছে গ্রামটি। স্থানীয়রা বহুবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, কিন্তু ফল মেলেনি। গ্রামের বাসিন্দা প্রমিলা পাহাড়ি বলেন, দশ বছর ধরে আমরা বসবাস করছি। বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। বিদ্যুৎ অফিসে আমরা টাকা জমা দিয়েছি। তারপরও এখনও বিদ্যুৎ এল না। ফলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বর্ষার বৃষ্টিই ভরসা পাহাড়ের মানুষের, এখানে কীভাবে চাষাবাদ হয় জানেন?
মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের কোতোয়ালি পঞ্চায়েতের কাজলদিঘি বাগানপাড়া গ্রামের এই বেহাল অবস্থা। গ্রামটিতে মোট ১৯ টি দুঃস্থ পরিবার রয়েছে। বিদ্যুৎ না পৌঁছনোয় সন্ধে হলেই গ্রামে নেমে আসে অন্ধকার। ঘরে ঘরে টিমটিম করে জ্বলে প্রদীপের আলো। সেই আলোতেই খুদেদের পড়াশোনা থেকে অন্যান্য কাজ করছেন গ্রামের বাসিন্দারা। অন্ধকারে পড়াশোনা করতে গিয়ে বইয়ের অক্ষর চিনতে সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারা।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অসীম বারুই বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার বিদ্যুৎ দফতরে গিয়েছি, পঞ্চায়েত অফিসে জানিয়েছি বিষয়টি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ইলেকট্রিক পোল পোঁতা হয়েছে। তারপর আর কাজ এগোয়নি। কোনও অজানা কারণে থমকে গিয়েছে। যদিও বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, জমি জটের কারণে কাজে এগানো সম্ভব হয়নি। গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়ার জন্য জমি দিলেই গ্রামে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ।
জেলা বিদ্যুৎ দফতরের ম্যানেজার শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য বলেন, গ্রামে ইলেকট্রিক পোল পোঁতা হয়েছে। কিন্তু কয়েকজন জমির মালিক ইলেকট্রিক তার নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ায় থমকে রয়েছে কাজ। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যদিও গ্রামবাসীদের পাল্টা দাবি, কোনও সমস্যাই নেই। জমি দিতে রাজি রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
* নিউজ ১৮ বাংলায় এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডব্লুবিএসইডিসিএল-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা সহ যাবতীয় কাজ ইতিমধ্যেই সারা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এক আমবাগান মালিকের বাধায় বিদ্যুতের লাইন টানা যাচ্ছে না। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় স্টেশন ম্যানেজার কোতওয়ালি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে চলেছেন।
হরষিত সিংহ