পুরুলিয়া:বাঙালির অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রথযাত্রা অন্যতম। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে আপামর বঙ্গবাসী। গোটা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রা উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা পুরুলিয়াও তার মধ্যে ব্যতিক্রম নয়। পুরুলিয়া শহরের চকবাজারের দত্ত পরিবারের রথ যাত্রা খুবই জনপ্রিয়। ১২১২ সাল থেকে এই রথযাত্রার সূচনা হয়। ১১৩ বছরে পদার্পণ করল এবছরের এই রথযাত্রা।
বাঁকুড়া জেলার কারিগর আশুতোষ কর্মকারের কারিগরি দক্ষতায় লোহা ও পিতলের সংমিশ্রণে নির্মিত হয়েছিল এই রথটি। এই রথের প্রতিষ্ঠা করেন এক ধর্মপ্রাণা বাইজি মনমোহিনী বৈষ্ণবী তথা মনি বাই। তিনি চকবাজারে প্রথমে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধাগোবিন্দ জিউর মন্দির। ওই মন্দিরের রাখা বিগ্রহ রথেরদিন রথের উপর অধিষ্ঠিত হয়। এবং সেই রথ শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। পুরুলিয়া চক বাজারে বাসিন্দা নন্দলাল দত্ত কয়াল পরিবার ১৯২২ সাল থেকে বংশ পরম্পরায় এই মন্দির ও রথের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বভার পালন করে আসছেন।
এ বিষয়ে দত্ত পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরী শচী দুলাল দত্ত জানান, তাঁরা বংশ পরম্পরায় এই রথযাত্রা পালন করে আসছেন এ বছর এই রথযাত্রা ১১৩ তম বর্ষে পদার্পণ করল। প্রতিবছরের মত এ বছরও ধুমধাম এর সঙ্গে রথযাত্রা পালিত হবে। এখন থেকেই রথে রং ও সাজানোর কাজ চলছে। এই রথ তাঁদের কাছে খুবই ঐতিহ্যপূর্ণ।
মনি বাইয়ের হাতে এই রথের সূচনা হয়েছিল। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর। কিন্তু আজও পুরুলিয়ার চকবাজারের এই রথ নিজের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। রথের দিন দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষের সমাগম হয় এই এলাকায়। একপ্রকার মেলার আয়োজন হয়। পুরুলিয়াবাসীর আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে এই রথযাত্রা।
শিলিগুড়ি: একমাস বাদে রথযাত্রা। তার আগেভাগেই রথযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু শিলিগুড়ির ইসকন মন্দিরে। এদিন সকালে ভগবান জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর পুজো করা হয়। এরপরই আজ থেকে শুরু হল রথ তৈরির কাজ। এদিন রথের চাকা থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেন মন্দিরের কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রথ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রং করার কাজও শুরু করা হয়েছে।
করোনার কারণে কয়েকবছর রথযাত্রায় ইসকন রথযাত্রা সেভাবে করে উঠতে পারেনি। তবে গত বছর আলাদা করে মাসির বাড়ি তৈরি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল ইসকন। জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার রথ মাসির বাড়িতে গিয়ে ছিল কয়েকদিন। এবারে একটু অন্য রকম চিন্তাভাবনা করছেন ইসকন কর্তৃপক্ষ।
আগামী জুলাই মাসের ৭ তারিখ রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এবছর কোনওরকম খামতি রাখতে চাইছে না ইসকন কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরের মতো এবছরও ধুমধাম করে রথযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
এদিন ইসকন মন্দিরের তরফে জনসংযোগ আধিকারিক নামকৃষ্ণ দাস বলেন, “আজকে আমাদের রথযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের সূচনা হল। আগামী ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত রথযাত্রার জন্য আজ থেকে শিলিগুড়িতে রথ তৈরির কাজ শুরু হল। ইসকন মন্দিরের পুরোহিতরা আজ রথযাত্রা নির্মাণ কাজ পুজো আর্চার মাধ্যমে শুরু করলেন। পূজার পাশাপাশি নারকেল ভেঙে রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এছাড়া কীর্তন হয়। রথের দিন প্রতি বছরের মতো এবছরও তিনটি রথ বের করা হবে। এবার আবার শিলিগুড়িবাসী শহরের রাস্তায় রথযাত্রা দেখতে পারবেন।