নারীরা কোনও কাজেই পুরুষের চেয়ে কম নয়। এমন কোনও ক্ষেত্র খুব কমই আছে, যেখানে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন না। আজ এমনই এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমরা, যিনি বিহারের দশরথ মাঝির চেয়ে কম নন। কর্নাটকের এই মহিলা একাই জলের সঙ্কট মেটাতে ব্যস্ত। এই মহিলা এখনও পর্যন্ত দুটি কূপ খনন করেছেন এবং এখন তৃতীয়টি খননের কাজ চলছে। লোকে তাঁকে ‘লেডি ভগীরথ’ নামে ডাকে।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, উত্তর কন্নড় জেলার গণেশ নগরের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সি এই মহিলা নিজেই একটি কূপ খনন শুরু করেছেন, যাতে অঙ্গনওয়াড়িতে আসা শিশুরা জলের কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হয়। গৌরী চন্দ্রশেখর নায়ক নামে এক মহিলা এক সপ্তাহ আগে তাঁর বাড়ির কাছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৪ ফুট চওড়া একটি কূপ খননের কাজ শুরু করেছিলেন। প্রতিদিন তিনি দেড় ফুট গভীরে খনন করেন। কোদাল, ঝুড়ি এবং দড়ির মতো সামান্য জিনিসের সাহায্যে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কয়েক ডজন ঝুড়ি মাটি টেনে আনেন। তিনি এক মাসের মধ্যে কূপটি প্রস্তুত করার লক্ষ্য স্থির করেছেন, যাতে অঙ্গনওয়াড়িগুলির জন্য জলের একটি ভাল উৎস চিহ্নিত করা যায়।

গৌরী নায়কের ছেলে বিনয় নায়ক জানান, তাঁর মা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় কাজে যান এবং দুপুর ১২টার মধ্যে ফিরে আসেন। তার পর বেলা ৩টায় চলে যান এবং সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফিরে আসেন। কূপ খননের পিছনে অনুপ্রেরণা সম্পর্কে গৌরী চন্দ্রশেখর নায়ক বলেন, গণেশ নগরে জলের অভাব রয়েছে। অঙ্গনওয়াড়িতে আসা শিশুদের পানীয় জল নেই। শিশুদের জল আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জলের এই অভাব তাঁকে কূপ খননে প্রাণিত করেছে।

আরও পড়ুন : আজ রটন্তী কালীপুজোয় সংসারের মঙ্গলকামনায় বিবাহিতারা নিবেদন করুন এই ২টি বিশেষ জিনিস! জানুন শুভ তিথি কত ক্ষণ আছে

গৌরী যে প্রথম এই কাজ করছেন তা নয়। এর আগেও তিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুটি কূপ খনন করেছিলেন। পানীয় জল নিয়ে যাতে জনগণকে দুশ্চিন্তা করতে না হয়, সে কথা চিন্তা করেই তিনি এই কাজ করেন। তিনি জানান, ফসলে সেচ দেওয়ার জন্য বাড়ির পাশে একটি ৬৫ ফুট গভীর কূপ খনন করেছেন। গৌরী জানান যে তিনি তাঁর ছোট খামারের জন্য জলের তীব্র সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই তিনি তিন মাসের মধ্যে একটি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেন এবং তা সফল হয়। মাঠের মধ্যে ৪০ ফুট গভীর আরেকটি কূপ খনন করা হয়েছে।

গৌরী জানান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ১৫টি শিশুর যত্ন নেওয়া ও শিক্ষাদান হয়। প্রতিনিয়ত জলের অভাব এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাটগার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতি দুই দিনে একবার জল সরবরাহ করে। শিশুরা পানীয় জল আনতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে যায়। তিনি বলেন, কূপ তৈরি হয়ে গেলে জলের কোনও সমস্যা হবে না।

গৌরীর ছেলে জানান, তাঁর একখণ্ড জমি আছে এবং সিরসিতে একটি অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকান আছে। ৯০ দিনে কূপের কাজ শেষ করা যাবে। প্রতিদিন মা দেড় ফুট খনন করে মই ব্যবহার করে মাটি অপসারণ করেন। যখন তিনি গর্তের ভিতরে যান, তখন মাটি সরানোর জন্য একটি চরখি এবং সুতো ব্যবহার করেন। এই কাজে তাঁর পরিবারও সাহায্য করে।