২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী থেকে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবারই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিনি। তারপরই মহাদেবের শহর কাশী থেকে নিউজ 18-এর জনপ্রিয় সঞ্চালক রুবিকা লিয়াকতকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মোদি বললেন, “এই নির্বাচনে মোদি লড়ছে না, ১৪০ কোটি জনগণ লড়ছে”। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও এদিন মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। আজও তাঁর অনেক সংখ্যালঘু বন্ধু রয়েছে। কিন্তু ২০০২-এর ঘটনার পর তাঁর ভাবমূর্তিতে কালি লেপে দিয়েছে বিরোধীরা। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং গোধরা নিয়েও এদিন খোলাখুলি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আপনি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, এমন ধারণা যে তৈরি করা হল, কিন্তু সেটা ভাঙতে পারলেন না কেন?
এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “প্রথম কথা হল, এই সমস্যাটা সংখ্যালঘুদের নয়। ব্যক্তিগতভাবে একজন সংখ্যালঘু যতই মোদির সঙ্গে থাকুন না কেন, একটা মতাদর্শগত প্রভাব রয়েছে, যা তাঁকে এটা করো বা ওটা করো-র মতো নির্দেশ দেয়। তার ভিত্তিতেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন। আমার বাড়ির চারপাশে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার রয়েছে। আমাদের বাড়িতেও ইদ পালন হত, অন্যান্য উৎসবও হত। ইদের দিন আমাদের বাড়িতে রান্না হত না, আশপাশের মুসলিমদের বাড়ি থেকে খাবার আসত। মহরমে তাজিয়ার নিচ দিয়ে আমরা যেতাম, এটা শেখানো হয়েছিল। আমি এই পৃথিবীতে বড় হয়েছি। আজও আমার অনেক সংখ্যালঘু বন্ধু রয়েছে”।
আরও পড়ুন – হাতে সময় মাত্র দু’ঘণ্টা! রাজ্যের তিন জেলায় আসছে বৃষ্টি, সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়ার দাপট
গোধরা নিয়ে সোজাসাপটা জবাব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়, “২০০২-এর পর আমার ভাবমূর্তি খারাপ করা হয়েছে। বিশেষ করে গোধরার পর। আমার মনে হল, বাস্তবটা জানা দরকার। আমি ৩০ জন কর্মীকে নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির চালিয়েছিলাম। কীভাবে সমীক্ষা চালাতে হয়, শিখিয়েছিলাম। তথ্যভিত্তিক সমীক্ষা নয়, কথোপকথন ভিত্তিক সমীক্ষা। আহমেদাবাদে মানিক চক নামে একটা জায়গা আছে। সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার সময় সেখানে খাওয়াদাওয়া করতে যান। সেখানকার সব ব্যবসায়ী সংখ্যালঘু আর ক্রেতা হিন্দু। এত ভিড় হয় যে হাঁটার জায়গা থাকে না। দীপাবলিতেও প্রচুর ভিড় হয়। সব ধরনের জিনিস বিক্রি হয়।
আমি বললাম, এই বাজারে সমীক্ষা করতে হবে। ছেলেদের পাঠিয়ে প্রতিদিনের রিপোর্ট দেখতাম। ওঁরা গিয়ে জিজ্ঞেস করত, দীপাবলি কেমন কাটল? উত্তর এল, হ্যাঁ, ভাল কেটেছে। ২০০২-এর কথা বলছি। তখন সমীক্ষকরা বলত, আরে মোদি বসে আছে আর দীপাবলি… তখন উত্তর আসত, এ কথা বোলো না। একজন বলেছিল, মা শুনলে তোমায় রাতে খেতে দেবে না। কেন জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, যখন মোদি ছিল না স্কুলে যেতে হত না, মোদি আসার পর স্কুলে যেতে হচ্ছে। দীপাবলির ছুটি বলে দোকানের কাজে হাত লাগিয়েছে। তাঁদের মা খুব খুশি। মোদি আসার পর তাঁর সন্তানদের জীবন বদলে গিয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ দোকানদারের উত্তর ছিল এটাই”।
আরও পড়ুন – মনোনয়ন জমা দিলেন নরেন্দ্র মোদি, গোটা বারাণসী জুড়েই সাজোসাজো রব
মুসলিম মহিলার গল্প শোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি:
”একবার এক মুসলিম মহিলা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কিছু প্রত্যাশা ছিল তাঁর। আমাকে অনেক অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, তিনি জোহাপুরী থেকে এসেছেন। সেখানে তিন থেকে চার লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোনও সমস্যায় পড়েছেন? পুলিশ বা প্রশাসন কি আপনাকে বিরক্ত করে? তিনি বললেন, না, না স্যার। আপনাকে শুধু অভিনন্দন জানাতে এসেছি। আপনি বিদ্যুতের কাজ করেছেন, এটা খুব ভাল কাজ। আমি বললাম, এটা তো খারাপ কাজ হয়েছে। ৩৫ কিমি এলাকার তার খুলে ফেলে দিয়েছি। সরকারের কেউ ওখানে যেতে পারে না। ওই মহিলা বললেন, এটাই তো ভাল কাজ। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? আমি তো তার কেটে দিয়েছি। তিনি বললেন, না স্যার, আমাদের ওখানে প্রত্যেক মহল্লায় একজন করে বিদ্যুৎমন্ত্রী আছে। তিনি বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। ওঁরা সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করে আমাদের কাছে বিক্রি করতেন। আমাদের অনেক টাকা খরচ হত। এখন নিয়মিত বিদ্যুৎ আসে। কোনও মারপিট নেই। সে জন্যই আমরা এসেছি”।
হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নয়:
সাক্ষাৎকারে মোদি আরও বলেন, “আগে আমাকে নিয়ে সংবাদপত্রে লেখা হত, মোদি জুলুম করছে। তার কেটে দিয়েছে। কিন্তু আদতে আমি ওঁদের ভালই করেছি। আমার জীবনে এরকম শত শত ঘটনা রয়েছে। আমি সেগুলো প্রকাশ্যে বলে বেড়াই না। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করি না। সবকা সাথ সবকা বিকাশে বিশ্বাস করি”। বেশি সন্তান নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘বেশি সন্তানের কথা বলে সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার করছেন কেন? আমাদের দরিদ্র পরিবারেরও একই অবস্থা। শিশুদের পড়াতে পারছেন না। যেখানে দারিদ্র্য সেখানে শিশুর সংখ্যা বেশি। আমি হিন্দু না সংখ্যালঘু বলিনি। আমি বলেছি ভাই, আপনি যতগুলো সন্তান বড় করতে পারবেন ততগুলো সন্তানই আপনার নেওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যেখানে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যেদিন জাতপাতের রাজনীতি করব, জনজীবনে থাকার যোগ্য থাকব না। তাই জাতপাতের রাজনীতি করবও না”।