Tag Archives: Buddhadeb Bhattacharjee

Buddhadeb Bhattacharjee death: বিদায় নিয়েছেন বুদ্ধদেব! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে চোখে জল ৮০ বছরের চা বিক্রেতার

বাঁকুড়া: ‘বুদ্ধবাবু আমাকে খুব ভালবাসতেন’ বললেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ, পার্টি অফিসের বাইরে চা বিক্রি করেন তিনি। যতবার বাঁকুড়া আসতেন, ততবারই তাঁর চায়ের দোকানে যেতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বংশীর চা ছাড়া একদম চলত না তার। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন শুনে চোখে জল ৮০ বছরের বংশী সেন মোদকের।

স্কুলডাঙ্গার পার্টি অফিসের পাশে বংশীবাবুর দোকান ছিল, যা এখন আর নেই। প্রায় দশ বছর আগে শারীরিক কারণে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হন বৃদ্ধ। তবে তার আগে যতবার বাঁকুড়ায় এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ততবার বংশীর চা তার সঙ্গে ছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় বংশী বলেন, “তিনি আমায় তিনি খুব ভালবাসতেন।”

আরও পড়ুন: শেষ বার আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব, শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকরা

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বহুবার এসেছেন বাঁকুড়ায়। বঙ্গ বিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু করে সতীঘাট। তাঁর সভায় ভিড় করেছে লাখ লাখ মানুষ। এক সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে থেকে বহু কাজ করেছেন অনাথ মল্ল, বর্তমানে তিনি রাজ্যের ফরওয়ার্ড ব্লকের সভাপতি। অনাথ বলেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর মতো তিনি ব্যবহার করতেন না। তাঁর ব্যবহার দেখে মনে হত তিনি একজন সাধারণ মানুষ। সবাইকে পাশে নিয়ে চলতেন। তার ব্যবহার আমরা ভুলতে পারছি না। বিধানসভা এবং লোকসভার ভোটও তিনি পরিচালনা করে গেছেন। আজও পর্যন্ত ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবরের জনসভার চেয়ে বড় জনসভা বাঁকুড়ায় কোনও দিন হয়নি”। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণ করতে করতে উঠে এল বংশীবাবুর চায়ের দোকানের কথা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কী বললেন মমতা?

সাদা চুল, সাদা পাঞ্জাবি, সাদা ধুতি। রাজ্যের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তার নখদর্পণে। বহুবার এসেছেন বাঁকুড়া, করেছেন সভাও। মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সতীঘাটে। সেই পথচলার গতি কমেছিল আগেই, এবার শেষ হল সেই পথচলা।

Buddhadeb Bhattacharjee | Exclusive: চক্ষু ও দেহদান করেছিলেন সেই কবেই! কারা ছিলেন সাক্ষী? সামনে এল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অঙ্গীকার পত্র

কলকাতা:  গত কয়েক বছর ধরেই চোখে ভাল দেখতে পেতেন না। শেষের দিকে তো দৃষ্টিশক্তি একেবারেই হারিয়েছিলেন বলা চলে। নিজে নিজে কিছু পড়া বা লেখা আর সম্ভব হয়ে উঠছিল না। নিজের লেখা শেষ বইটা তাই মুখে মুখে বলেছিলেন, লিখেছিলেন অন্যজন৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই চোখের দু’টি কর্নিয়া বর্তমানে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে দু’টি মানুষের৷ সদ্য প্রয়াত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র তাঁর চক্ষুদানই করে যাননি, তাঁর মরণোত্তর দেহ দান করে গিয়েছেন চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের গবেষণায়৷ দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন অসুস্থ৷ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে নিজের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷

তাঁর চক্ষুদানের নথি দেখে জানা যায় ২০০৬ সালের ৮ মার্চ তাঁর চক্ষু ও দেহ দানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তখন তাঁর বয়স ৬২ বছর৷

আরও পড়ুন:  দীনেশ মজুমদার ভবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ, শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকরা

অঙ্গীকারপত্রে লেখা ছিল, ‘ আমি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বয়স ৬২ পেশা রাজনীতি মানসিক দিক থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং যথার্থ৷ বিচার বিবেচনায় সক্ষম, এতদ্বারা চক্ষু/ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষাদিসহ আমার নশ্বর দেহটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে দান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম৷

আমি ঘোষণা করছি যে, আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আমার চক্ষু/ দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত হবে৷

আমি আরও ঘোষণা করছি যে, আমি কোনও প্রকার ভীতি প্রদর্শন অথবা প্ররোচনা ছাড়াই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞানে এই প্রতিজ্ঞাপত্র স্বাক্ষর করছি৷

আমাপ নাম বা ঠিকানার কোনও পরিবর্তন হলে তা যথাসময়ে গণদর্পণকে জানিয়ে দেওয়া হবে৷

আমি আজ বুধবার ২০০৬ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখে এই প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করলাম৷’

অঙ্গীকারপত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঠিকানা লেখা ছিল ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, কলকাতা৷ স্বাক্ষরকালীন সাক্ষী হিসাবে অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন নিরুপম সেন এবং মদন ঘোষ৷

বৃহস্পতিবার সকাল ৮:২০ মিনিটে ইহলোক ত‍্যাগ করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। দুপুর দুটো নাগাদ বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল‍্যাট থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে শকট পৌঁছয় পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানেই শায়িত ছিলেন প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ। শুক্রবার শেষযাত্রায় প্রথমেই তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেখানেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানান বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কী বললেন মমতা?

বিধানসভা ভবনে এক ঘণ্টা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ শায়িত থাকার পরে, তাঁর দেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে৷সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দীনেশ মজুমদার ভবনে। আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতা, কর্মী সমর্থকেরা। শ্রদ্ধা জানালেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ একাধিক নেতারা। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত। আলিমুদ্দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়ানের চারঘণ্টার মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা এসে নিয়ে যান তাঁর কর্নিয়া দ্বয়। জানা গিয়েছে, গতকালই তাঁর কর্নিয়া দু’জনকে দান করা হয়েছে৷

Buddhadeb Bhattacharjee Death: ‘মতবিরোধ ছিল প্রচুর, কিন্তু আজ কিছু ভাল লাগছে না’, বুদ্ধ-প্রয়াণে শোক অসুস্থ রেজ্জাক মোল্লার

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: একসময় এই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গেই বিস্তর মতবিরোধ হয়েছিল তৎকালীন বাম নেতা তথা ‘চাষার ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লার। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন যখন তীব্র, বামেদের সংগঠন ভাঙতে শুরু করেছে তখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, ” হেলে ধরতে পারে না কেউটে ধরতে এসেছে।”

তবে মতবিরোধ হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে ভাল মানুষ ছিলেন তা আজও স্বীকার করেন রেজ্জাক মোল্লা। বর্তমানে তিনি ভীষণ অসুস্থ, শয্যাশায়ী। তবুও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবর পেয়ে যথেষ্ট মর্মাহত। তিনি বলেন, “আমার থেকে এক বছরের ছোট ছিলেন। আমি ওঁর আমলে ১০ বছর ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী ছিলাম। অনেক ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলেও সুসম্পর্ক ছিল। উনি খুব ভাল ও সৎ মানুষ ছিলেন”।

আরও পড়ুন: বুদ্ধ-বিদায়ে শোক! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঋণী বাঁকুড়ার এই কলেজ, কেন জানেন?

নিজের অসুস্থ শরীর নিয়েও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরের বাঁকড়ির বাড়ি থেকে এমন মন্তব্য করেন রেজ্জাক মোল্লা। ১৯৭২ সালে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। ওই সময়ে বুদ্ধবাবু ভোটে দাঁড়াননি। ১৯৭৭ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ দিন রোগশয্যায় একটানা কথা বলতে পারছিলেন না রেজ্জাক। তবু মুখভঙ্গি দেখে বোঝা গেল, অনেক কিছু বলতে চান।

আরও পড়ুন: বলুন তো কোন ফলের বীজ পেটে চলে গেলে আপনি মরেও যেতে পারেন? অবশ্যই জেনে রাখুন

খানিক দম নিয়ে ফের বললেন, “ওঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। তবে সব কথা মনে আসছে না। অত্যন্ত সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলেন। জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন আমি চাইলে যখন-তখন দেখা করতে পারতাম। কিন্তু বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সে সুযোগ ছিল না। তবে এমনিতেই আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল। সালিম গোষ্ঠীর রাস্তা তৈরি নিয়ে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়।” সব কিছুর পরেও প্রাক্তন সহকর্মীর মৃত্যুতে তাঁর মন ভারাক্রান্ত, জানালেন রেজ্জাক। বললেন, “কিছু ভাল লাগছে না।”

সুমন সাহা

Buddhadeb Bhattacharjee death: দীনেশ মজুমদার ভবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ, শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকরা

কলকাতা: প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিধানসভা থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ আনা হল আলিমুদ্দিনে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দীনেশ মজুমদার ভবনে। আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতা, কর্মী সমর্থকেরা। শ্রদ্ধা জানালেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ একাধিক নেতারা। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত। আলিমুদ্দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন প্রচুর মানুষ।

দুপুরে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বুদ্ধবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানেই শায়িত ছিলেন প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিবিদ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এদিন শেষযাত্রায় প্রথমেই তাঁর দেহ আনা হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির বাম-তৃণমূল-বিজেপি সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলেন নেতা-কর্মীরা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কী বললেন মমতা?

তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান রাজ্য়ের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা। উপস্থিত অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায়, বিমান বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। বুদ্ধদেবকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে মুখোমুখি হলেন অভিষেক-শুভেন্দু।

মন্ত্রী ও মুখ্য়মন্ত্রী হিসেবে এই বিধানসভায় দীর্ঘ সময় কেটেছিল বামনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। এদিন সেখানেই তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানোর পালা এসে হাজির। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমস্ত নেতা-মন্ত্রীদেরও মিলিয়ে দিল এই বিদায়বেলা। বুদ্ধবাবুর মরদেহের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাম নেতা, স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন।

আরও পড়ুন: ‘সকলের প্রিয়জন’, বিধানসভায় বুদ্ধদেবের মরদেহ, শাসক-বিরোধীদের শ্রদ্ধা, পাশাপাশি অভিষেক-শুভেন্দুও

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রার সূচি:সময়সূচি মেনে সকাল সাড়ে দশটায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তায় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে রওনা হবে বুদ্ধবাবুর মরদেহ। প্রয়াত রাজনীতিবিদ, সিপিআইএম-এর প্রবীণ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিধানসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ শায়িত থাকবে সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। বিধানসভা থেকে বুদ্ধবাবুর মরদহ এরপর নিয়ে যাওয়া হবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেখানে বারোটা থেকে বেলা ৩টে ১৫ পর্যন্ত শায়িত থাকবে মরদেহ।

বেলা তিনটে বেজে তিরিশ মিনিট থেকে ৩টে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ থাকবে দীনেশ মজুমদার ভবনে। তিনটে বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ সেখান থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ যাত্রার সূচনা, যা শেষ হবে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে। বিকেল চারটেয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরণোত্তর দেহদান করা হবে এনআরএস হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়াদের গবেষণার জন্য।‌ আজ রাতভোর মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখা থাকবে পিস ওয়ার্ল্ডে।‌

Buddhadeb Bhattacharjee: বুদ্ধ-বিদায়ে শোক! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঋণী বাঁকুড়ার এই কলেজ, কেন জানেন?

বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঋণী এই কলেজ। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি করে চারদিন ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিকল্পিত অনুষ্ঠান বন্ধ করা হল বাঁকুড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।

বাঁকুড়া উন্নয়নী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছিল “ব্যাচ নেমিংয়ের” দিন। প্রতি বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে কলেজের পড়ুয়ারা। তিন চারদিন আগে থেকে করা হয় আয়োজন। তৈরি ছিল মঞ্চ, সাজানো হয়েছিল ডিপার্টমেন্ট, আনা হয়েছিল গিটার। এবারও তাই হয়েছিল কিন্তু সকালের খারাপ খবর পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিজে উদ্যোগে অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রছাত্রীরা, তাতে হয়েছে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি কিন্তু তাতে নেই কোনও অনুশোচনা।

আরও পড়ুন: চিরবিদায় বুদ্ধদেব, মন কাঁদছে রানাঘাটের! নদিয়ার এই জনপদে কী এমন করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৎকালীন বাম সরকার প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত উন্নয়নী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সার্বিক উন্নয়নে। সেই কারণেই ভারাক্রান্ত এই খবর পেয়ে শোকের ছায়া নামে কলেজে। বাঁকুড়া উন্নয়নীতে রয়েছে ১২০০ ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে খুব কম জনকে হয়তো বই কিনতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পুরো কোর্স এক প্রকার বই ছাড়াই লাইব্রেরি থেকে পড়াশোনা করে পূরণ করেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

আরও পড়ুন: ‘তাঁকে দেখেই প্রধান শিক্ষক চেয়ার ছেড়ে দেন, কিন্তু…’, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণায় শৈলেন্দ্র-স্কুল

এছাড়াও রয়েছে ৭টি অত্যাধুনিক ল্যাব। উন্নয়নীর এই উন্নয়নের প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানালেন, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। শশাঙ্ক দত্ত বলেন, “বুদ্ধদেব বাবুর সরকার যখন ছিল, একটা প্রজেক্টের টাকা পেয়েছিলাম যার অর্থ মূল্য ১৫ কোটি টাকা। জ্যোতি বসু তৎকালীন সময়ে উদ্বোধন করলেও, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার অনুমোদিত ফান্ড না পেলে হয়তো উন্নয়নী বড় আকার ধারণ করত না। আমরা তাঁর কাছে সত্যিই ঋণী।”

সাদা চুল,সাদা পাঞ্জাবি,সাদা ধুতি। রাজ্যের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। বহুবার এসেছেন বাঁকুড়া। করেছেন সভা। মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সতীঘাটে। কিন্তু সব ভাল জিনিসের একটা শেষ থাকে। সব ভাল মানুষকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মনে রেখেছে বাঁকুড়ার উন্নয়নী।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী

Birbhum News: প্রয়াত বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী! বুদ্ধবাবুর শোক সামলাতে পারছেন না বীরভূমের প্রাণকৃষ্ণ

বীরভূম: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার তাঁর শেষযাত্রা। দুপুরে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বুদ্ধবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বীরভূমের প্রাণকৃষ্ণ সিমলান্দী। রামপুরহাটের বাসিন্দা প্রাণকৃষ্ণ নিজের কর্মদক্ষতায় মসুর ডাল,  খেজুরের বীজের মধ্যে মনীষী,  রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি এঁকে উপহার দিয়েছেন। সেই মতোই তিনি উপহার দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে।

প্রাণকৃষ্ণবাবু  জানান, সামান্য একটি মসুর ডালের মধ্যে সাদা পাঞ্জাবি ও কালো বোতাম দিয়ে ছবি এঁকেছিলেন বুদ্ধদেববাবুর। ছবি আঁকার পর তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর তত্ত্বাবধানে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে পৌঁছন। নিজের হাতে তুলে দেন উপহার।  বুদ্ধবাবুর মৃত্যুর খবর পেতেই কার্যত শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে যখন তিনি বুদ্ধবাবুকে সেই উপহার দিতে গিয়েছিলেন তখন ৩৫ মিনিট কথা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: WB06 0002-আর উঠবেন না বুদ্ধদেব, অন্তিম যাত্রাতেও শববাহী শকটের পিছনে চলল সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর

সময়সূচি মেনে সকাল সাড়ে দশটায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তায় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে রওনা হবে বুদ্ধবাবুর মরদেহ। প্রয়াত রাজনীতিবিদ, সিপিআইএম-এর প্রবীণ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিধানসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ শায়িত থাকবে সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। বিধানসভা থেকে বুদ্ধবাবুর মরদহ এরপর নিয়ে যাওয়া হবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেখানে বারোটা থেকে বেলা ৩টে ১৫ পর্যন্ত শায়িত থাকবে মরদেহ।

Buddhadeb Bhattacharjee: চিরবিদায় বুদ্ধদেব, মন কাঁদছে রানাঘাটের! নদিয়ার এই জনপদে কী এমন করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?

নদিয়া: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্যই নদিয়া পেয়েছিল নন্দনকে। কলকাতা রবীন্দ্র সদন সাংস্কৃতিক মঞ্চের মতোই আজ রানাঘাটেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্যই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে গীতাঞ্জলি সিনেমা হলের নতুন সংস্করণ তথা রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। রানাঘাটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। এর কারণ হিসেবে জানা যায় রানাঘাটে এক সময় ছিল গীতাঞ্জলি সিনেমা হল।

আরও পড়ুন: মমতার সরকারের গান স্যালুট হচ্ছে না বুদ্ধদেবের শেষযাত্রায়! কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের মানুষজনেরা রানাঘাটবাসীকে চেয়েছিলেন কলকাতার নন্দনের মতো একটি সাংস্কৃতিক শিল্পের আখড়ার উপহার দিতে। যেখানে বিভিন্ন শিল্পীরা এসে নিদর্শন দেখাতে পারবে তাঁদের শিল্পকলার। আর সেই মতোই তৎকালীন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রমা বিশ্বাস এবং প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাসের উদ্যোগে রানাঘাটের গীতাঞ্জলি সিনেমা হলটি অধিগ্রহণ করে জেলা পরিষদ।

আরও পড়ুন: ‘সকলের প্রিয়জন’, বিধানসভায় বুদ্ধদেবের মরদেহ, শাসক-বিরোধীদের শ্রদ্ধা, পাশাপাশি অভিষেক-শুভেন্দুও

পরবর্তীকালে তথ্য সংস্কৃতি দফতর সেটিকে অধিগ্রহণ করেই রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ মঞ্চ হিসেবে রানাঘাটের গীতাঞ্জলি সিনেমা হলকে মানুষের কাছে তুলে দেন তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে। তারপর থেকে আজও রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ মঞ্চ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ চলে আসছে।

Mainak Debnath

Buddhadeb Bhattacharjee Last Rites: মমতার সরকারের গান স্যালুট হচ্ছে না বুদ্ধদেবের শেষযাত্রায়! কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

কলকাতা: বিদায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার কমরেডের শেষযাত্রা। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর জীবনাবসান হয়, এদিন তাঁর দেহদানের মধ্যে দিয়ে পূর্ণ হবে শেষযাত্রা। প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গান স্যালুট কি দেওয়া হবে?

সিপিআইএম নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, গান স্যালুট হবে না। দলের যুক্তি, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর সরকারি সাহায্য নেননি। তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিন দেব শুক্রবার বলেন, ‘আমরা বিষয়টা জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আমাদের সঙ্গে বিধানসভার স্পিকারেরও কথা হয়েছে। আমরা বললাম, এ ক্ষেত্রে গান স্যালুট দেওয়া যায় না। কারণ, গান স্যালুট একেবারে লাস্ট স্টেজ। সেটার পর আর কিছু করা যায় না।’

আরও পড়ুন: ‘সকলের প্রিয়জন’, বিধানসভায় বুদ্ধদেবের মরদেহ, শাসক-বিরোধীদের শ্রদ্ধা, পাশাপাশি অভিষেক-শুভেন্দুও

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন যাচ্ছি বিধানসভায়। এর পর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেখানে তিন ঘণ্টা দেহ থাকবে। তার পর একটা মিছিল হবে। দীনেশ মজুমদার ভবনে, যেখানে যুব ফেডারেশনের অফিস, সেখানে যাবে দেহ। তার পর এনআরএসে বডি দান করা হবে। আর এনআরএসে তো গান স্যালুট দেওয়ার কোনও প্রভিশন নেই।’

আরও পড়ুন: ‘তাঁকে দেখেই প্রধান শিক্ষক চেয়ার ছেড়ে দেন, কিন্তু…’, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণায় শৈলেন্দ্র-স্কুল

জ্যোতি বসু অবশ্য গান স্যালুট পেয়েছিলেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে লাল পতাকায় ছেয়ে যাওয়া রেড রোডে জ্যোতিবাবুর মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দেওয়া হয়েছিল। তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে তা হবে না। ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত তা পরিষ্কার হচ্ছ না। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধবাবু।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা বেজে ২০ মিনিটে প্রয়াত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুক্রবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে দেহদান করা হবে বামনেতার।

Buddhadeb Bhattacharjee Passes Away: ‘বুড়ি তুই…? এখানে কী করছিস?’ ব্লক E, ফ্ল্যাট 6! শ্যাওলা দেওয়ালে মুখ গুঁজে স্মৃতি হাতড়াচ্ছে ট্যাংরা হাউজিং এস্টেট

কলকাতা: ট্যাংরা হাউজিং এস্টেট৷ এ থেকে জেড বিশালাকার জমির মাঝে দাঁড়িয়ে একাধিক অট্টালিকা৷ তখন অবশ্য কমপ্লেক্স বলার সময় আসেনি৷ রাজ্য আবাসন দফতরের হাউজিং এস্টেট। সেখানেই নানা পেশার, নানা রাজনৈতিক দলের নানা মহলের মানুষ থাকতেন।

এই হাইজিং এস্টেটের E বিল্ডিংয়ের ৬ ফ্ল্যাটে থাকতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন বুদ্ধবাবু৷ ততদিনে তিনি ডিওয়াইএফআইয়ের অন্যতম নেতা৷ আবার তিনি দমদমের একটি স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। তবে রাজনীতির পাঠকে দূরে সরিয়ে রেখেই তিনি ছিলেন ট্যাংরা হাউজিং এস্টেটে।

আরও পড়ুন: শুক্রবার শেষ যাত্রায় বুদ্ধবাবু, পিস ওয়ার্ল্ড থেকে NRS মেডিক্যাল কলেজ, একনজরে কমরেডের ‘অন্তিম’ সফরসূচি

E ব্লকের ৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অবশ্য অন্য পরিবার থাকে এখন৷ তবে ৫ নম্বর ফ্ল্যাটে যাঁরা থাকতেন তাঁরা এখনও আছেন। পেশায় পূর্ত দফতরের ঠিকাদার সোমনাথ সাহা বলছেন, “ওঁর নাম যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমরা তাই জানতাম না। খুব একটা মেলামেশা করতেন না। একদিন ওঁর মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ছেলে কী করেন? তাতে ওঁর মা আমাকে নিয়ে গেলেন ওনাদের ঘরে। গিয়ে দেখি মেঝে ভর্তি ছড়ানো বই, খাতা। সেই আলাপ। এর পরেও যে প্রতিদিন কথা হত এমন নয়। তবে দেখা হলেই স্মিত হাসি দিয়ে জানতে চাইতেন ভাল আছি কিনা।”

স্মৃতি কথায় উঠে এল, প্রথমবার ভোটে যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লড়াই করছেন কাশীপুর আসন থেকে সেইসময়। তখন তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন৷ সোমনাথ বাবু বলছেন, “সকালে ভোটের রেজাল্ট বেরনোর দিন আমরা তো টিভি দেখে অবাক৷ আমাদের দেখা সেই  ছেলে ভোটে জিতে গিয়েছে। রাজ্য মন্ত্রীসভায় প্রথম যখন তিনি সদস্য হন, তখনও সেই ফ্ল্যাট নম্বর ছয়। এরপর অবশ্য লোকজনের আনাগোনা বাড়ল৷ বাড়ল মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ব্যস্ততা। ট্যাংরা হাউজিং এস্টেটের দুই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে এন্টালি হয়ে রাজভবন৷ সেখান থেকে পাম অ্যাভিনিউয়ে চলে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে অবশ্য দেখা করার সুযোগ হয়েছে সোমনাথ বাবুর। এমনকি মীরা ভট্টাচার্য খোঁজ রাখতেন এই এস্টেটের। এদিন স্মৃতি কথা ভিড় করে আসছে এই সরকারি আবাসনে।

আরও পড়ুন: ‘হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা…’ ইউনুসকে শুভেচ্ছা বার্তায় ‘কর্তব্য’ মনে করালেন মোদি

এখানেই থাকেন সুলতা সমাজদার। পানিহাটি পুরসভার বাম কাউন্সিলর ছিলেন দীর্ঘ পনেরো বছর। সুলতা দেবী ‘বুদ্ধদার’ স্মৃতিশক্তির গল্প করছিলেন। তিনি বলেন, “খড়দহ ফুলমেলার এক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ থেকে নামছেন। কিছুটা এগিয়েই আবার পিছন ফিরে তাকিয়ে ডেকে উঠলেন, “বুড়ি তুই? এখানে কি করছিস? ওহ তুই তো আমাদের কাউন্সিলর। ভাল থাকিস।” সুলতাদেবীর চোখের কোণে জল। পলেস্তারা খসে পড়া। শ্যাওলা জমা আবাসনের দেওয়াল জুড়ে নানা গল্প ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষক থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর।

Buddhadeb Bhattacharjee: নাটক থেকে ক্রিকেট, বন্ধুদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল ‘বাচ্চু’; স্মৃতিতে ডুব দিয়েছে রামধন মিত্র লেন

আবীর ঘোষাল, কলকাতা: উত্তর কলকাতার রামধন মিত্র লেন। হলদে নোনা ধরা বাড়ির দেওয়ালে, কলকাতা পুরসভার দেওয়া নম্বর বলছে ১১ডি। গলি দিয়ে হেঁটে গেলেও চট করে কারও চোখে পড়ার মতো নয়। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের দেওয়াল লিখন এখনও জ্বলজ্বল করছে। এই বাড়ির পাশে অবশ্য প্রশস্ত খিলান দেওয়া, কাঠের সিঁড়ি লাগানো এক বাড়ি রয়েছে ৷ প্রতি বছর মহালয়ার আগে সেই বাড়ির সামনে ভিড় জমে। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ি ৷ অনেকেই জানেন না ঠিক তার গা লাগোয়া এই বাড়িতেই বেড়ে উঠেছিলেন ‘বাচ্চু’। বাচ্চু হ্যাঁ পাড়ার বন্ধু গৌর ভদ্র এই নামেই পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে।

আরও পড়ুন- সোনা হাতছাড়া ! ইতিহাস লিখে নীরজের সোনা ছিনিয়ে নিলেন বন্ধু আর্শাদ নাদিম

বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের পরে নানা স্মৃতি কথা মাথায় ভিড় করে আসছে এই পাড়ার বাসিন্দাদের। গৌরবাবু জানাচ্ছিলেন, ‘‘বুদ্ধ দারুণ ক্রিকেট খেলত। লাহিড়ী পাড়ার মাঠ হোক বা গলি ক্রিকেট চুটিয়ে খেলেছে সে।’’ তবে শুধু ক্রিকেট নয়, পুজোর সময়ে মাস্টারমশাই নাটকে অভিনয় করা তাও আবার মুখ্য চরিত্রে। আরও দুটো নাটকে নির্দেশনা পর্যন্ত দিয়েছেন ৷

আরও পড়ুন- ভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গে, বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের ৭টি জেলায়

সিনিয়র গৌরবাবু বলছেন, কমরেড কিন্তু ছোট থেকেই নীতি-আদর্শ মেনে চলতে ভালবাসতেন। সেই নীতি আদর্শে কোনওদিন আঁচ পড়েনি। হলদে বাড়ির তিনতলায় থাকতেন। সেই ঘর, বাড়ির চেহারায় বদল এসেছে ৷ বারো ঘর ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে মামলা চলছে বাড়ি মালিকদের। তবু এই সেই বাড়ি যেখানে থাকতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১১সি-তে থাকেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ৷ মধ্যবয়স্ক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, তিনি অনেকবার এই বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখেছেন। ছোট বেলায় অবশ্য এ বাড়ি ও বাড়ির যাতায়াত ছিল। পুজোর সময় মিষ্টি দেওয়া নেওয়াও চলত। ব্যাস ওই অবধিই। ধীরে ধীরে সেই যোগাযোগ আরও ফিকে হয়েছে ৷ তবে শ্যামবাজার হোক বা লাহিড়ী পাড়ার মাঠে সভা করতে আসলে এই পাড়ার প্রতিবেশীরা অনেক সময় দেখে এসেছেন তাদের প্রিয়  বাচ্চুকে। উত্তর কলকাতায় বেড়ে ওঠা। অলিগলি তাঁর চেনা। উত্তর থেকেই প্রথম বিধায়ক।