দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঝড়ের মধ্যেও স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখতে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিশেষ ব্যবস্থা নিল প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় হাসপাতালে বাড়ল বেড। যথেষ্ট ওষুধ, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব হেলথ সেন্টারেই থাকছে জেনারেটর। সরকারি হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ১ হাজার ২২৪ জন প্রসূতি রয়েছেন। তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করে শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন আশাকর্মীরা।
ইতিমধ্যে অন্তঃসত্ত্বাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। সাগর ব্লকের ৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বাকে বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরিয়ে সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বাঙ্গুর ও বারুইপুর জেলা হাসপাতালেও বিশেষ বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
৩৩ জন ডাক্তারের দল পৌঁছেছে সুন্দরবনে। ২২টি অ্যাম্বুল্যান্স ক্যানিং হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুন্দরবন কোস্টাল থানায় ৪টি বোট অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছে। এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে অতিরিক্ত ৬০টি শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী ঝড়গুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আর কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না প্রশাসন। ফলে আগে থেকেই সব ব্যবস্থা সেরে রেখেছে প্রশাসন। ঝড়ের সময় যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেই দিকটিই এখন দেখছে প্রশাসন।
নবাব মল্লিক
মুর্শিদাবাদ: দানার প্রভাব পড়ল মুর্শিদাবাদে। ইতিমধ্যেই, সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ জেলাতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে, ভর সন্ধ্যায় ঘটে গেল মাঝিদের নৌকাডুবি।
স্থানীয় মৎস্যজীবী জাব্বার সেখ জানান, ইলিশ মাছ ধরার এই মরশুমে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কায় ভয়াবহ নৌকা ডুবি হয়। বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ভয়ানক ঝড়ে উল্টে যায় বেশ কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা। সেগুলো ছিল ডিঙি এবং মাছ ধরার নৌকা।
আরও পড়ুনঃ বড় খবর! শক্তি হারাচ্ছে ‘দানা’…বর্তমানে সাগর থেকে ৩৫০ কিমি দূরে! জেনে নিন ল্যান্ডফলের সঠিক সময়?
মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, সামসেরগঞ্জের লোহরপুর, সিকদারপুর, এবং ধুলিয়ান পৌরসভার ১ নম্বর ঘাটে ডিঙি ও নৌকা উল্টে যায়। পাশাপাশি, ফারাক্কার অর্জুনপুর গঙ্গাঘাটে তলিয়ে যায় নৌকা। দুই ব্লকে প্রায় ১০ জনেরও উপর মানুষ গঙ্গায় তলিয়ে যায়। যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই সাঁতরে ডাঙায় উঠে আসেন।
অনেকেই আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনও রকমে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এখনও পর্যন্ত অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা, তবে আপাতত তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। গঙ্গাঘাট গুলোতে রয়েছে পুলিশের কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বহু জেলের মাছ ধরার সময় ঝড়ে নৌকা উল্টে যাওয়ায় নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছেন। এদিকে তলিয়ে যাওয়াদের উদ্ধার করে অনুপনগর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালে সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। গঙ্গার ধারে ও কান্নাকাটি করছেন অনেকেই।
কৌশিক অধিকারী
কলকাতা: যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই একাধিক ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব রেলওয়ে। হাওড়া থেকে বাতিল থাকবে ২৫ লোকাল ট্রেন, ব্যান্ডেল থেকে বাতিল থাকবে ১২টি লোকাল ট্রেন, বর্ধমান থেকে বাতিল থাকবে ৫টি লোকাল ট্রেন, শেওড়াফুলি থেকে বাতিল থাকবে ৬টি লোকাল ট্রেন। এছাড়া, শ্রীরামপুর থেকে ২টি, কাটোয়া থেকে ২টি, মেমারি থেকে একটি এবং আরামবাগ, গোঘাট, তারকেশ্বর, বারুইপাড়া, চন্দনপুর, পান্ডুয়া, গুরাপ, মশাগ্রাম, সিঙ্গুর, বেলুড়মঠ থেকে ১৫টি লোকাল বাতিল থাকবে।
হাওড়া-বর্ধমান লোকাল: ভোর ৪টে
বর্ধমান লোকাল: ভোর ৪.১৫
গোঘাট লোকাল: ভোর ৪.২২
ব্যান্ডেল লোকাল: ভোর ৪.৪৭
তারকেশ্বর লোকাল: ভোর ৪.৫৫
গুরাপ লোকাল: ভোর ৫.০৫
ব্যান্ডেল লোকাল: ভোর ৫.১৪
সিঙ্গুর লোকাল: ভোর ৫.৩২
মসাগ্রাম লোকাল: ভোর ৫.৪৫
তারকেশ্বর লোকাল: ভোর ৫.৫৫
ব্যান্ডেল লোকাল: ৬.২৬
ব্যান্ডেল লোকাল: সকাল ৭.০৫
শ্যাওড়াফুলি লোকাল: সকাল সাড়ে ৭টা
বেলুড়মঠ লোকাল: সকাল ৭.৪০
শ্রীরামপুর লোকাল: সকাল ৭.৪৫
শ্যাওড়াফুলি লোকাল : সকাল ৮.১২
ব্যান্ডেল লোকাল: সকাল ৮.২০
মেমারি লোকাল: সকাল ৮.৩৫
চন্দনপুর লোকাল: সকাল ৮.৪৯
শ্যাওড়াফুলি লোকাল: সকাল ৮.৫০
ব্যান্ডেল লোকাল: সকাল ৯.১০
শ্যাওড়াফুলি লোকাল: সকাল ৯.১৫
শ্রীরামপুর লোকাল: সকাল ৯.২০
বারুইপাড়া লোকাল: সকাল ৯.৪০
এ ছাড়া, ব্যান্ডেল থেকে হাওড়াগামী ভোর ৩টে ৭ মিনিট, ৩টে ৫০ মিনিট, ৪টে ৪৫ মিনিট, সকাল ৫টা ৪০ মিনিট, সাড়ে ৬টা এবং ৭টা ১৫ মিনিটের ট্রেনগুলি বাতিল করা হয়েছে। কাটোয়া, বর্ধমানগামী ভোরের কয়েকটি ট্রেনও বাতিল থাকবে শুক্রবার। বাতিল থাকবে বর্ধমান থেকে ব্যান্ডেলগামী কিছু ট্রেন।
কলকাতা: নবান্নে সর্বক্ষণের হেল্পলাইন চালু থাকছে। নবান্নের হেল্পলাইন নম্বর (০৩৩) ২২১৪৩৫২৬ এবং ১০৭০। পাশাপাশি জেলাগুলিতেও চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন। বৃহস্পতিবার রাতে নবান্নেই থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে নিজের দফতর থেকেই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে বলেন, “মানুষের জীবন হল সব চেয়ে দামি। মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। স্কুলগুলি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই কারণেই। আমি আজ রাতে নবান্নেই থাকব। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সকলে কাজ করবেন।”
কলকাতা: মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় দানা তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে (সিভিআর সাইক্লোনিক স্টর্ম)। আজ, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আগামিকাল, শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই ওড়িশা উপকূলে ল্যান্ডফল করবে। ওড়িশার ভিতরকণিকা ও ধামারার কাছে ল্যান্ডফল করার প্রবল সম্ভাবনা। এর প্রভাব থাকবে পুরী থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত। ল্যান্ডফলের সময় এর গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
হাওয়া অফিসের শেষ বুলেটিন অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ‘দানা’। ওড়িশার ধামারা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পারাদ্বীপ থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়।
আজ, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ‘দানা’ স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারার মধ্যে হবে ‘ল্যান্ডফল’।
দিঘা: কালী পুজোর প্রস্তুতিতে কাঁটা বঙ্গোপসাগরের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা! সাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা। হাওয়া অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে ওড়িশার ধামড়া ও ভিতরকণিকার মধ্যবর্তী এলাকায়। আছড়ে পড়ার সময় এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার। অর্থাৎ আছড়ে পড়ার সময় এটির সুপার সাইক্লোনিক রূপ থাকবে। দানা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা সহ সর্বত্রই মেঘলা আকাশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাতে ধীরে ধীরে উত্তাল হয়ে উঠছে সমুদ্র। সতর্ক রয়েছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মতই বুধবার দুপুরের পর বৃষ্টি শুরু হয় দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। যদিও সেই বৃষ্টি থেমে যায়। কিন্তু মেঘলা রয়েছে আকাশ। দানার বিপর্যয় থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোটেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সমুদ্র সৈকত জুড়ে চলছে এন ডি আর এফ-র নজরদারি এবং পুলিশের টহলদারি। সেদিন বিকেলের পর ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা সৈকত জুড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন পুলিশ আধিকারিকদের টহলদারি দিতে দেখা যায়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন দানার তাণ্ডবে বিপর্যয় এড়াতে আগামী হওয়ার কথা হিসেবে একাধিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় এসেছে তিনটি এনডিআরএফ টিম ও দুটি এসডিআরএফ টিম। প্রাথমিকভাবে উপকূলবর্তী এলাকার দেড় থেকে দুই লক্ষ মানুষকে আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। সেদিন সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা সহ বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত ও উপকূলবর্তী এলাকায় প্রশাসনের কড়া নজরদারি চলছে।
আরও পড়ুনঃ পর্যটক টানতে বিরাট উদ্যোগ! নতুন সাজে সাজছে জনপ্রিয় এই বিশাল পার্ক, দেখুন তো চেনেন কিনা…
সন্ধ্যার পর দিঘা সমুদ্র সৈকত ধীরে ধীরে উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করেও বেশ কিছু পর্যটক দিঘায় রয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় সন্ধের সময় পর্যটকদের সমুদ্র সৈকতের ঘুরে বেড়াতে লক্ষ্য করা যায়। তবে পর্যটকদের গার্ডওয়াল এর কাছাকাছি যাওয়া বা সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে পড়তে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড ওয়াল বরাবর দড়ির ব্যারিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। সন্ধ্যার পর পর্যটকদের দিঘা সমুদ্র সৈকত সরণীতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে প্রশাসন।
সৈকত শী