নদিয়া:একদিকে অনাবৃষ্টি অন্যদিকে ক্রমশ কমে আসছে খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়। ফলে বাংলার অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল পাট চাষ ঘিরে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে। তবে এর সমাধান হিসেবে বাজারে এসে গিয়েছে বিকল্প এক ধরনের পাউডার। যার সাহায্যে সহজেই পাট জাঁক দেওয়া বা পচানো সম্ভব হচ্ছে।
পাট পচানোর বিকল্প পদ্ধতি বার করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছে। তার ফসল হিসেবেই এই পাউডার বাজারে এসেছে। এর নাম NINFET সাথী পাউডার। নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের বাবলা পঞ্চায়েতের মোল্লাবেড় গ্রামে একটি সারপ্রস্তুতকারক সংস্থার উদ্যোগে পাট চাষিদের বিনামূল্যে এই NINFET সাথী পাউডার বিতরণ করা হয়। এই পাউডারের সাহায্যে পাটের ভালভাবে পচনের পাশাপাশি পাটের তন্তুর সোনালি রঙ ভালভাবে বজায় থাকে। ফলে এই পাউডার ব্যবহার করে পাট চাষিরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির আকাল দেখা যাচ্ছে। যার ফলে পাট পচাতে রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। চলতি বছরেও একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে এই পাউডার ব্যবহার করার ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় কম জলৈই পাট পচাতে পারছেন চাষিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: নিমপীট কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে তৈরি হচ্ছে জীবাণু সার, অর্থাৎ বায়োফার্টিলাইজার। যা কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারে। কারণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষবাসের ফলে দীর্ঘ মেয়াদে লাভের বদলে ক্ষতি বেশি হয়। কারণ গাছ তার নিজের খাবার প্রাকৃতিক উপায়ে বাতাস ও মাটিতে যে খনিজ আছে সেগুলি বিভিন্ন জীবাণুর মাধ্যমে সংগ্রহ করে। ফলে বায়োফার্টিলাইজার সফলভাবে তৈরি হলে তা কৃষিকাজকে অনেক বেশি জৈবিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করবে।
বায়োফার্টিলাইজার হল এক ধরনের জীবাণু। যে জীবাণু মাটিতে ফিরে গিয়ে প্রকৃতিতে যে খাবারগুলি রয়েছে তা আবারও গাছের কাছে পৌঁছে দেয়। এই বায়োফার্টিলাইজার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন রাইজোবিয়াম। যারা ডাল জাতীয় চাষের ক্ষেত্রে বা সর্ষে চাষে গাছের শিকড়ে এক ধরনের গুটি তৈরি করে এবং সেখানে তারা বসবাস করে গাছ থেকে শর্করা জাতীয় খাবার নেয়। এছাড়াও বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ রেখে বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করে গাছকে সরবরাহ করে। অর্থাৎ রাইজোবিয়াম দিয়ে ডাল জাতীয় শস্য ভালভাবে চাষ করতে পারবেন কৃষকরা, তার জন্য আর রাসায়নিক সারের দরকার পড়বে না।
জিন সলিউশন ব্যাকটেরিয়া, পটাশিয়াম ব্যাকটেরিয়া, সিলিকন ব্যাকটেরিয়া এই ধরনের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বায়োফার্টিলাইজার আকারে বাজারে পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। সেই মত নিমপীঠ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে বায়োফার্টিলাইজার গবেষণাগার তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের যোজনার অন্তর্গত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই গবেষণা হচ্ছে। যার লক্ষ্য বছরে প্রায় ৫০ হাজার লিটার বায়োফার্টিলাইজার তৈরি করা। বর্তমানে নিমপিঠ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষণা কেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লিটার তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের জীবাণু সার যদি চাষিরা ব্যবহার করেন তাহলে রাসায়নিক সারের উপর তাঁদের নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।