পুরুলিয়া: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সেই তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম পার্বণ হল মনসা পুজো। পুরুলিয়ায় মনসা পুজো বিশাল ধুমধামের সঙ্গে হয়। কোথাও কোথাও তো দুর্গাপুজোর উন্মাদনাকেও ছাপিয়ে যায় এই মনসা পুজোকে ঘিরে উন্মাদনা। পুরুলিয়া জেলাবাসীর কাছে এটি একটি বিরাট বড় পার্বণ। মনসা পুজো উপলক্ষে প্রায় একলক্ষ হাঁস বলি হয় জেলায়। সারাদিন উপোস থাকার পর গৃহস্থরা সন্ধের পর দেবীর পুজো করেন। বেশিরভাগ বাড়িতেই ঘট পুজো করে সর্প দেবীর আরাধনা করা হয়। কিছু কিছু বাড়িতে মূর্তি পুজোর চল রয়েছে।
পুরুলিয়া জেলার বেশিরভাগ বাড়িতেই এই সময় হাঁস বলি হয়ে থাকে। এই সময় মৃৎশিল্পীরা মূর্তি তৈরিতে ব্যাস্ত থাকেন। কারণ এই পুজো প্রায় ঘরে ঘরে হয়। তাই এই সময় মনসা ঠাকুরের যথেষ্ট চাহিদা থাকে। এই বিষয়ে মৃৎশিল্পীরা বলেন, বিগত বছরের থেকে এ বছর তাঁদের বরাত বেশ কিছুটা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: কাঁচা বাঁশের এই জিনিস তৈরি করে দু’হাত ভরে রোজগার করুন
এই পুজো যেহেতু ঘরে ঘরে হয় তাই প্রতিমার দাম বাবদ খুব বেশি মূল্য পান না মৃত শিল্পীরা। গোটা বছর ধরে জেলাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন এই পুজোর জন্য। যারা চাকরির সূত্রে সারা বছর বাইরে থাকেন এই মনসা পুজো উপলক্ষে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন।
শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি
কোচবিহার: জেলা কোচবিহারের রাজবংশী সমাজে আজও বেশ ঘটা করে মনসা পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে সাধারণ ভাবে মাটির মূর্তি দিয়ে এই পুজো করা হয় না। তার বদলে থাকে শোলার তৈরি মনসা প্রতিকী। এই প্রতিকীকে মন্ডুষ বলা হয়ে থেকে। দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রথা মেনেই রাজ আমলের মদন বাড়িতে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। এই মদন বাড়ির এই মন্ডুষ তৈরি করছে একটি পরিবার বংশ পরম্পরায় সেই রাজ আমল থেকে। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের সময়ে এই কাজ শুরু করেন তাঁরা।
বর্তমান শোলা শিল্পী ধীরেন্দ্র নাথ মালাকার জানান, “রাজ আমলের তাঁর ঠাকুরদা এই কাজ শুরু করেন। তারপর তাঁর বাবা এই কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি এই কাজ করছেন। রাজ আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। বংশ পরম্পরায় মন্ডুষ তৈরি করে আসছেন তাঁরা। এই মন্ডুষটিতে চাঁদ সওদাগরের কাহিনী, বেহুলা-লখীন্দরের কাহিনী-সহ বিভিন্ন দেব-দেবতাদের ছবি তুলে ধরা হয়। আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ দিনের মতন সময় লাগে এই মন্ডুষ সম্পূর্ণ তৈরি করতে। এতে ব্যবহার করা হয় শোলা, সাদা কাগজ, আঠা ও রঙ।”
আরও পড়ুন – Weight Gain Over Night: রাতারাতি ওজন বেড়ে যেতে পারে? ভিনেশের সঙ্গে কী হয়েছিল, বুঝিয়ে দিলেন কুস্তি কোচ
তিনি আরও জানান, “বর্তমানে ভাল মানের শোলা কোচবিহারে আর পাওয়া যায় না। তাইতো বাইরে থেকে আনাতে হয় এই শোলা। এতে খরচ পড়ে অনেকটাই বেশি। তবে রাজ আমলের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে ভাল মানের জিনিস দিয়েই করা হয় এই কাজ। তাঁর বয়স এখন ৬৫ বছর। তাই অনেকটাই অসুবিধা হয় এই কাজ করতে। তাই তাঁর এই কাজে তাঁর পরিবার তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করে। এরপর তাঁর পরর্বতী সময়ে তাঁর ছেলেকে তিনি এই কাজের দায়িত্ব দেবেন। তাই সেজন্য তাঁকে শেখাচ্ছেন ও তিনি। তবে সে এখনোও দক্ষ হয়ে ওঠেনি সম্পূর্ণ।”
দীর্ঘ সময়ের প্রথা মেনে আজও এই কাজ করেন এই শিল্পীর পরিবার উৎসাহের সঙ্গে। আগামী দিনেও এই কাজ তাঁরাই করবেন এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। কারণ, রাজ ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানে একপ্রকার জড়িয়ে পড়েছেন এই শিল্পী ও4 তাঁর পরিবার। তবে এই মনসা পুজোর মন্ডুষ বহু মানুষের নজর আকর্ষণ করে এটুকু নিশ্চিত। এর সৌন্দর্য বহু মানুষের মধ্যে কৌতুহল জাগিয়ে তোলে।
Sarthak Pandit