ভারতীয় হেঁশেলের ডায়েট মানেই ভাত ডালের বা ডাল রুটির অমোঘ কম্বিনেশন। সঙ্গে আর কিছু থাকুক বা থাকুক, ডাল থাকলেই খিদের মুখে অমৃত ভাত ও রুটি দু’টিই। সময় ও জ্বালানি বাঁচাতে আমরা অনেকেই প্রেশার কুকারে ডাল রাঁধি। কিন্তু একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে প্রেশার কুকারে সিদ্ধ করে ডাল তৈরি করলে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। অনেকের দাবি, প্রেশার কুকারে ডাল রান্না করলে জয়েন্ট পেইন বা গাঁটের ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকের মতে, প্রেশার কুকারে ডাল রাঁধলেও এর পুষ্টিমূল্য অটুট থাকে।
এই দ্বন্দ্ব দূর করতে জানুন বিশেষজ্ঞ কৃশ অশোকের মত। তিনি জানিয়েছেন কেন এবং কীভাবে সেরা উপায়ে ডাল রাঁধা যায়। একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি জানিয়েছেন ডাল সিদ্ধ করার সময় পাতলা জলের মতো একটি সাদা আস্তরণ দেখা দেয়। তাকে বলা হয় স্যাপোনিন্স। এবং এই স্যাপোনিন্সে থাকে ইউরিক অ্যাসিড। যার থেকে জয়েন্ট পেন হতে পারে। স্যাপোনিন্স হল উদ্ভিদে থাকা একটি যৌগ। যার থেকে সাবানের ফেনার মতো আস্তরণ তৈরি হয়।
View this post on Instagram
তাছাড়া ডাল, রেড মিট, মিট অর্গান্স, অ্যালকোহলের মতো খাবারে পুরিন বেশি থাকে। তবে ডাল হাই পুরিন ফুডস-এর মধ্যেও পড়ে না। এই পুরিন ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক। প্রেশার কুকারে ডাল সিদ্ধ করলে ওই পাতলা জলের মতো আস্তরণ হাতায় করে নিয়ে ফেলা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞ কৃশের মতে, স্যাপোনিন্স ছাড়াও ওই তরলে আছে শর্করাজাতীয় এবং প্রোটিনজাতীয় উপাদান। তাছাড়া বেশি তাপমাত্রায় রাঁধার ফলে স্যাপোনিন্স অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যায়। বরং কৃশ মনে করেন, অল্প পরিমাণ স্যাপোনিন্স শরীরের জন্য ভালই। কারণ তাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে, যা কোলেস্টেরল রোধ করে।
আরও পড়ুন : ভারতে জন্মানো স্বাদেগন্ধে ১ নম্বর এই চালই পৃথিবীর সেরা! এর ভাত খেয়েছেন কখনও?
কীভাবে ডাল রাঁধবেন প্রেশার কুকারে
প্রেশার কুকারে ডাল রান্না করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। বিশেষজ্ঞের মতে, কুকারে ডাল রাঁধলে সময় ও জ্বালানি বাঁচে। বজায় থাকে পুষ্টিমূল্যও। ডাল সিদ্ধ করার সময় ২ বা ১ ফোঁটা তেল দিতে বলেন তিনি। তাতে ডাল দলা পেকে যাবে না। মসৃণ ও সুসিদ্ধ হবে। অনেকে সিদ্ধ করার সময় নুন দেন। সেটা না করে রান্নার শেষ দিকে নুন দেওয়ার জন্য বলেছেন কৃশ।
বাঙালি হেঁশেল মানেই ভাতের সঙ্গে ডাল। নানারকম ডাল খাওয়ার রীতি আছে বাঙালি বাড়িতে। ফোড়ন বিশেষে পাল্টে যায় একই ডালের স্বাদ। প্রচলিত সেরকমই একটি ডাল হল মটরডাল। ভাঙা মটর হলে হলে সেটা রান্না করা হয় ডাল হিসেবে। গোটা মটরদানায় তৈরি হয় ঘুগনি। কালোজিরে, ঘি, শুকনোলঙ্কার ফোড়নে মটরডালের স্বাদ অমৃত। শীতে এর মধ্যে পড়ে মরশুমি সবজি। স্বাদের পাশাপাশি গুণের দিকেও এই ডাল অতুলনীয়। বলছেন পুষ্টিবিদ লভনীত বাত্রা।
প্রোটিনের ভান্ডার
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে আছে এই ডালে। এক কাপ বা ২৪০ গ্রাম মটর ডালে প্রায় ১৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। শরীরের কোষ, টিস্যু, পেশির সুস্থতার জন্য প্রোটিন প্রয়োজনীয়।
ফাইবার সরবরাহ
মটরডালে অত্যাবশ্যকীয় ফাইবার প্রচুর পরিমাণে আছে। পরিপাক ক্রিয়া উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ফাইবার। হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ
ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৬ প্রচুর পরিমাণে আছে এই ডালে। পাশাপাশি আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং জিঙ্ক। শারীরিক বিভিন্ন কার্যকারিতার জন্য এই উপাদানগুলি প্রয়োজনীয়।
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি
মটরডালের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। মরশুমি অসুখ থেকে দেয় সুস্থতা।
হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়
এই ডালের ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম হৃদরোগের আশঙ্কা রোধ করে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
ফাইবার সমৃদ্ধ মটরডালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। পলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন : ক্যানসার প্রতিরোধী এই কমদামি বুনো পাতার গুণেই পালায় ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলও!
ওজন কমায়
ফাইবার সমৃদ্ধ মটরডাল দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভর্তি রাখে। ঘন ঘন খিদে পাওয়ার প্রবণতা রোধ করে। ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও দূর হয়।
ক্যানসারের ঝুঁকি কম
অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ভরপুর মটরডাল free radical থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কোষের ক্ষতি এবং ক্যানসারের আশঙ্কা রোধ হয় এর গুণে।
বাঙালি হেঁশেলে ভাতের মতো ডালও নিত্য রাঁধা হয়৷ তবে ডাল সেদ্ধ করার সময় উপরে একটা সাদা স্তর ভেসে ওঠে৷ প্রেশার কুকারে ডাল সেদ্ধ করলে এটা দেখা যায় না৷ কিন্তু অন্য পাত্রে সেদ্ধ করার সময় ডালের উপর ভেসে ওঠে এই হাল্কা আস্তরণ৷ দেখতে অনেকটা সাবানের ফেনার মতো৷ ডালের এই স্তরের উপাদান স্যাপোনিনস বলে মনে করা হয়৷ ডালে স্যাপোনিনস নামে গ্লাইকোসাইডস থাকে৷ জলের সংস্পর্শে এলে এই উপাদান গলে যায়৷ তার পরই সাবানের ফেনার মতো প্রলেপ তৈরি করে৷
আবার অনেকের ধারণা, সিদ্ধ করার সময় ডালের প্রোটিন অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে৷ তার সঙ্গে জলের বিক্রিয়াতেই তৈরি হয় ওই ফেনিল প্রলেপ৷ কৃষিকাজ ও কৃষিজ ফসল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ নোসওয়ার্দি জানিয়েছেন, বিক্রিয়ার পর ফেনাজাতীয় প্রলেপ তৈরি হলে গ্লাইকোসাইডস-এর আকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ যে উপাদানের স্বাভাবিক আকার ক্ষতিগ্রস্ত, সেটি কোনওমতেই খাওয়া উচিত নয়৷
আরও পড়ুন : ব্রেকফাস্টে এভাবে খান ডিম! কমবে কোলেস্টেরল, বাড়বে না ওজন
তাই ডাল রান্নার সময় হাতা দিয়ে এই ফেনাজাতীয় প্রলেপ ফেলে দিন৷ কুকারে না রেঁধে চেষ্টা করুন খোলা পাত্রে ডাল সিদ্ধ করতে৷ তাহলে রান্নার মাঝে মাঝে হাতা দিয়ে তুলে সাদা আস্তরণ ফেলে দিতে পারবেন৷ ডাল রাঁধার আগে বেশ কিছু ক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন৷ তার পর বেশ কয়েক বার জল পাল্টে ভাল করে ধুয়ে নিন৷ তাহলে এই ফেনাজাতীয় আস্তরণ বেশি তৈরি হবে না৷