Tag Archives: musician

Old Music Instrument: উত্তরবঙ্গের এই বাদ্যযন্ত্রের সুর আপনাকে মোহিত করবেই

কোচবিহার: নাটাবাড়ির রাস্তার পাশের একটি বাড়ি থেকে সারিন্দার মনমোহিনী সুর ভেসে আসে প্রায়শই। চলে দেহতত্ত্ব বিষয়ক ও ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের বিভিন্ন গান। এই গান করেন ও সারিন্দা বাজান বৃদ্ধ উপেন্দ্রনাথ বর্মন। উপেন্দ্রনাথ বর্মন তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের নাটাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বিতীয়খণ্ড বাজেজমা চিলাখানা গ্রামের বাসিন্দা। ভেলাপেটা হাইস্কুলের একেবারেই সংলগ্ন এলাকায় তাঁর বাড়ি। বেশ কয়েক বছর আগে সরকারি শংসাপত্র পেলেও আজ পর্যন্ত তিনি কোনও শিল্পী ভাতা পাননি। বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করলেও তাও মেলেনি এখনও পর্যন্ত।

সারিন্দা বাদক উপেন্দ্রনাথ বর্মন জানান, বর্তমানে তাঁর সংসার চলছে কোনও রকমে। বাড়িতে তাঁর সঙ্গে স্ত্রী থাকেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই। ছোটবেলায় তাঁর সারিন্দা বাজানোর হাতেখড়ি হয়েছিল বাবা রাজেন্দ্রনাথ বর্মনের কাছে। তাঁর বাড়িতে এখনও তিনটি সারিন্দা রয়েছে। তাঁতের কাজের সূত্রে উপেন্দ্র ফুলিয়াতে প্রায় ৩০ বছর কাটিয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সারিন্দা বাজাতেন। এইভাবে একসময় এই যন্ত্র যেন তাঁর ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে। এরপর তিনি সারিন্দা বাজিয়ে কীর্তন করতে শুরু করেন।

আর‌ও পড়ুন: মদ্যপানের পর বোতল ফেলে দেন‍? ভুলেও ওই কাজ করবেন না, বোতল দিয়ে সাজিয়ে তুলুন ঘর

এই বৃদ্ধ শিল্পী আরও জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সারিন্দা বাজিয়ে আসছেন। এখনও কীর্তন, দেহতত্ত্বমূলক গান গেয়ে থাকেন প্রায়শই। কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গে বহুকাল থেকে লোক সঙ্গীতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ দেখা যায়। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল সারিন্দা। আগে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, নিম্ন অসম ও নিম্ন নেপালে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। তবে সেভাবে না হলেও গ্রামগঞ্জের কিছু এলাকায় এখনও সারিন্দার সুর শুনতে পাওয়া যায়। সারিন্দা মূলত নিম কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। আর এর তার তৈরি করতে ব্যবহার হয় ঘোড়ার লেজের চুল।

অত্যাধুনিক যন্ত্র বের হওয়ায় পর থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা কমেছে সারিন্দার। তবে উপেন্দ্রনাথ বর্মন এখনও দীর্ঘ সময় ধরে এই বাদ্যযন্ত্রকে টিকিয়ে রেখেছেন। তবে এই বৃদ্ধ মানুষটি সরকার বা প্রশাসনের কাছ থেকে কোন‌ওরকম সাহায্য পান না। যা নিয়ে তিনি কিছুটা হতাশ।

সার্থক পণ্ডিত

West Medinipur News: নেই প্রথাগত তালিম, তবু লেখেন গান, সুরও দেন! আকাশবাণীতেও গান গেয়েছেন এই দম্পতি

পশ্চিম মেদিনীপুর: পড়াশোনা শেষ করে বেশ কিছু বছর কাটিয়েছেন মিশনে। সেখানে তিনি করতেন গানের শিক্ষকতার কাজ। সেখানেই পরিচিতার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে এবং পরে দুজন গান গেয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। গেয়েছেন আকাশবাণীতেও। বয়স ধীরে ধীরে বাড়লেও এখনও এই দম্পতি নিয়মিত গানের রেওয়াজ করেন।

আরও পড়ুন: ফের বাবা ভাঙ্গার ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী! ২০২৫-এ কী হবে? শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে

পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের প্রত্যন্ত এক গ্রামীণ এলাকা রানিসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপেন মান্ডি।বয়স তার ৭০ পেরিয়েছে। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন রেলের ওয়ার্কশপের একজন টেকনিশিয়ান। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। প্রতিদিন চলে গানের রেওয়াজ। স্বামী-স্ত্রী মিলে কখনও হারমোনিয়াম আবার কখনও কি-বোর্ড নিয়ে বসে পড়েন গানের রেওয়াজ করতে। ছেলেও পারে কি-বোর্ড বাজাতে। এভাবেই অবসর জীবন কাটে উপেন মান্ডি এবং তাঁর স্ত্রীর।

আরও পড়ুন: ‘মানুষের জনাদেশ বিজেপির বিরুদ্ধে, সারা দেশেই ভরাডুবি!’ দলকেও বার্তা দিলেন মমতা

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে আসা হলদিয়াতে। সেখানে বাড়ি করে শুরু বসবাস। উপেন মান্ডির বাবা এবং মা দু’জনেই গান করতেন। পারিবারিকভাবে সেই গানের ধারাকে জিইয়ে রেখে তিনি। তবে উপেন বাবুর স্ত্রী লতিকা মান্ডির গানও এলাকায় বেশ প্রশংসিত। তাঁরও পারিবারিকভাবে ছিল গানের চর্চা। স্কুলজীবন থেকে নানা সামাজিক বিষয়, চোখের সামনে দেখা বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গান লিখতেন উপেন মান্ডি। সেই গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতেন তারা। মিশন জীবন এমনকি কর্মজীবনেও লিখেছেন প্রার্থনাসঙ্গীত, গণসঙ্গীত-সহ নানা সচেতনতামুলক গান। তিনি প্রায় শতাধিক গান লিখেছেন। এখনও সময় পেলে লেখেন গান।

পরে স্বামী ও স্ত্রী মিলে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় গান পরিবেশন করেছেন এই দম্পতি। বিনিময়ে পেয়েছেন পারিশ্রমিকও। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকবার আকাশবাণীতেও গান পরিবেশন করেছেন তারা। উপেন বাবু এখনও লেখেন গান, সুরও দেন নিজে। প্রথাগতভাবে তালিম না থাকলেও গানের গলা শুনলে মোহিত হতে হয়। বাংলা এমনকী সাঁওতালি ভাষাতেও লিখেছেন গান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের।

 

Musical Family: চিলেকোঠার জীবনে সঙ্গীত আঁকড়ে বাস মা-বাবা ও ছেলের! চোখ বন্ধ করে গান শুনুন

পশ্চিম মেদিনীপুর: চিলেকোঠায় সঙ্গীত সাধনা। বাবা, মা ও ছেলের অভাবের সংসারের সবটুকু জুড়ে আছে সঙ্গীত। প্রান্তিক গ্রামের ছোট্ট একচালা বাড়ি, চারিদিক টিন দিয়ে ঘেরা। তারই চিলেকোঠায় তিনজনে মিলে সুর তোলেন। বাবা, মা, ছেলে মিলে সকালে হোক কিংবা বিকেলে, বসে পড়েন গানের চর্চা করতে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার প্রত্যন্ত জামনা গ্রামে হাজির হলে এমনই মন ভাল করা অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারবেন আপনি। এক টুকরো চিলেকোঠায় কখনও গুনগুনিয়ে ওঠে সুর, আবার কখনও সেতার ও তবলার শব্দে মোহিত হন গ্রামের মানুষজন।

আরও পড়ুন: বাঁকুড়ায় ড্রোন দিয়ে কৃষি কাজ? আর যা যা হবে

ছেলেকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে রেওয়াজে বসেন বাবা-মা। গলায় যেন সরস্বতীর বাস। শুধু তাই নয়, নামকরা কোনও গিটারিস্টের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে কোনও গানে আঙুলের ছোঁয়াতে বেজে ওঠে ধুন। এভাবেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন জামনার যুবক সুব্রত মণ্ডল। ছোট থেকেই গানের প্রতি ভালবাসা এবং বাবা-মায়ের প্রেরণা তাঁকে ধীরে ধীরে পরিণত একজন শিল্পী হিসেবে তৈরি করেছে। এই গান শেখার অনুপ্রেরণা ও শিক্ষাগুরু তাঁর মা। মায়ের কাছেই প্রথম গানের পাঠ নেওয়া। সুব্রতর মা দারুন সেতার বাজাতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাঁর বাবা যেকোনও তাল তোলেন তবলাতে।

সুব্রত জানিয়েছেন, বাড়িতে প্রথম থেকেই গানের একটা পরিবেশ ছিল। মা গানের রেওয়াজ করতেন। তাঁর গানের শিক্ষাগুরু মা। এরপর সে গিটার শেখে।গিটারে সমস্ত টিউন যে কোনও গানেই অতি সহজে তুলতে পারে সুর। সংসার চালাতে ভরসা সুব্রতর ছোট গিটার তৈরির কারখানা। মাসে যে কটা গিটার বিক্রি হয় তা দিয়েই চলে তিনজনের সংসার। এছাড়াও কয়েকজনকে শেখান গিটার।

চোখ বন্ধ করে শুনুন গান।

রঞ্জন চন্দ

Poor Artist: নজরুলের সামনে তবলা বাজিয়ে তারিফ পেয়েছিলেন, দুরাবস্থায় জীবন কাটছে বিখ্যাত তবলিয়ার

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: এক সময় কাজী নজরুল ইসলামের সামনে বসে তবলা বাজিয়েছিলেন। সঙ্গীতশিল্পী সুপ্রভা সরকার থেকে শুরু করে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, আরতী মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে‌ও তবলায় সঙ্গত দিয়েছিলেন জয়নগরের কানাইলাল ভট্টাচার্য। তাঁর বয়স এখন ৮২ বছর। জয়নগর-মজিলপুরের ভূমিপুত্র বিপ্লবী কালাচাঁদ ভট্টাচার্যের ভাইপো তিনি। দরমার বেড়া আর অ্যাসবেস্টাসের ছাউনির ঘরে কোনরকমে জীবনযাপন করেন এই প্রবীণ তবলিয়া।

সরকারি বার্ধক্য ভাতা ও খুদে শিক্ষার্থীদের তবলা শেখানোর সামান্য পারিশ্রামিক‌ই এই শেষ জীবনে ভরসা কানাইবাবুর। সারা জীবনে এত বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছেন, কিন্তু শেষ জীবনে এসে এইভাবে কাটাতে হওয়ায় স্বভাবতই মুষড়ে থাকেন। নিজের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে তাঁর। জানান, আবাস যোজনার ঘরের জন্য আবেদন করলেও তাঁর নাম তালিকায় ওঠেনি। বৃষ্টি এলেই এই ভাঙা ঘরের ছাউনি চুঁইয়ে জল পড়ে।

আর‌ও পড়ুন: পানের জন্য দুর্গন্ধযুক্ত জল সরবরাহ হচ্ছে! ক্ষেপে গিয়ে রাস্তায় বসে পড়ল বসিরহাটের মানুষ

জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কানাইলাল ভট্টাচার্য। তাঁর ছোট ঘরে কাকা কালাচাঁদ ভট্টাচার্যের মূর্তি আছে। বাবা শশধর ভট্টাচার্যের ছবি শোভা পাচ্ছে ঘরের দেওয়ালে। এঁরা ছিলেন পাঁচালি গানের শ্রষ্টা। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কানাইবাবুর পাওয়া বিভিন্ন মানপত্র। বহু গুনীজনের সঙ্গে তাঁর ছবি দেওয়াল ভর্তি। এক কোণে সযত্নে রাখা তিনটি তবলা। বয়স থাবা বসিয়েছে কানাইবাবুর শরীরে। চোখেও কম দেখেন। কিন্তু তবলার সঠিক তাল এখনও চিনতে ভুল হয় না। সকাল থেকেই চলে তাঁর তবলার কসরত।

জয়নগরের অজিত ভট্টাচার্যের কাছে ১৩ বছর বয়সে তবলার হাতেখড়ি হয়েছিল কানাইবাবুর। এরপর বেনারসের বিষ্ণুসেবক মিশ্র, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, কানাই দত্তদের মত প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের কাছে তবলায় তালিম নিয়েছিলেন। টানা ২২ বছর তবলা শেখেন। সঙ্গীত জগতের বড়দি সুপ্রভা সরকারের গানের সঙ্গে তবলা বাজাতেন।তিনি কাজী নজরুল ইসলামের ছাত্রী ছিলেন। সেই সুত্রেই কাজী নজরুল ইসলামকে চোখের দেখা দেখেছিলেন। তাঁর সামনে বসে তবলা বাজানোর সুযোগ‌ও হয়।

পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী বন্ধুর মত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কানাইবাবু। কানাইবাবু বলেন, মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা যথেষ্ট সন্মান করে। তাঁদের দেওয়া সামান্য পারিশ্রামিকে ও বার্ধক্যভাতার এক হাজার টাকাই আপাতত ভরসা। তবে এই বর্ষাকালকে বড় ভয় পান। কারণ ভাঙাচোরা ঘরে বর্ষাকালে অবিরত জল পড়তে থাকে। তাঁর সবচেয়ে বড় ভয় সাধের তবলাদের ঘিরে। বৃষ্টির জল একবার লাগলে শেষ বয়সের সঙ্গী তবলাগুলো যে নষ্ট হয়ে যাবে!

সুমন সাহা