Tag Archives: Painter

Poila Baishakh: শিল্পের দুরন্ত বাণিজ্যিকরণ, হাতে আঁকা জামা নতুন ট্রেন্ড নববর্ষে

হুগলি: বয়স যখন আট বছর তখন থেকেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন রং-তুলি। ছবি আঁকা প্রথম জীবনে ছিল ছিল ভাললাগা। ভাললাগা থেকে ভালবাসায় যখন পৌঁছায় তখন তিনি ছবি আঁকতেন ক্যানভাসে। সেই ছবি আঁকাকেই রোজগারের পথ হিসেবে বেছে দেওয়ার জন্য ক্যানভাস বদলে হয়েছে জামা কাপড়। এখানেই ছবি আঁকছেন সন্তু, যা বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে দেশীয় এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে।

উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বাসিন্দা সন্তু দে। চুঁচুড়ার সোনাঝুরি মেলায় প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসে জামা-কাপড়ে ছবি আঁকেন। শিল্পের এই অভিনব বাণিজ্যিকরণ মন কেড়েছে ক্রেতাদেরও। শুধুমাত্র হুগলি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন মেলায় দেখতে পাওয়া যায় সন্তুর মত অনেককেই। যারা জামা, পাঞ্জাবি, টিশার্ট সবকিছুর উপর নিজের হাতেই ছবি আঁকেন। অনেক ক্ষেত্রে খরিদ্দারের পছন্দ মত নকশাও এঁকে দেন।

আর‌ও পড়ুন: ভোটের মরশুমে ‘ওরা’ ফের দলবেঁধে জঙ্গলমহলের গ্রামে

একদিনে সর্বোচ্চ ৫ টি কাপড়ে সম্পূর্ণ ছবি আঁকেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি কাপড় সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে দুই দিনও। এটি পুরোটাই কি ধরনের ছবি আঁকা হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে। তাঁর কাছে যে কাপড়গুলি রয়েছে তার মূল্য শুরু হচ্ছে হাজার টাকা থেকে। পাঞ্জাবির শুরু হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকা থেকে। তাঁর এই শিল্পের চাহিদা বর্তমান বাজারে এতটাই বেড়েছে যে তা জেলা, রাজ্য এমনকি দেশ পেরিয়েও পারি দিচ্ছে বিদেশে। নববর্ষ ও ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে তাঁর বেশ কিছু হাতে আঁকা পাঞ্জাবি পাড়ি দিয়েছছ আমেরিকাতেও।

রাহী হালদার

Lok Sabha Election 2024: ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ের দাপটে ভোটের বাজারেও কাজ নেই দেওয়াল লেখকদের

শিলিগুড়ি: শিয়রে লোকসভা ভোট। প্রচার চলছে তুঙ্গে। তবে এই প্রচারের একটা বিশেষ অঙ্গ হল পোস্টার, হোর্ডিং। এখন যেদিকেই চোখ যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিত্যনতুন ডিজাইনের হোর্ডিং, ফ্লেক্স ছেয়ে গিয়েছে। অথচ একসময় দেওয়াল লিখন‌ই ছিল ভোট প্রচারের অন্যতম কৌশল। ফলে দেওয়াল চিত্রশিল্পীদের ছাড়া ভাবাই যেত না ভোট প্রচারের কথা।

শুধু তাই নয়, পুজোর প্যান্ডেলে হোক বা যেকোন‌ও বিজ্ঞাপন, একসময় সবটাই হত চিত্রশিল্পীদের হাত দিয়ে। বিশেষ করে ভোটের সময় তাঁদের নাগাল পাওয়া মুশকিল ছিল। তখন সকাল হলেই রং-তুলি নিয়ে শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় হাজির হয়ে যেতেন এই চিত্র শিল্পীরা। তবে ডিজিটাল যুগে আর কদর নেই সেই শিল্পীদের। কারণ এখন ফ্লেক্সের মাধ্যমেই বেশিরভাগ প্রচার সারছে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলি। ডিজিটাল প্রিন্টিং ব্যবস্থা এসে যাওয়ায় এই প্রচার পদ্ধতি আরও দ্রুতগামী এবং সুসংহত হয়েছে।

আর‌ও পড়ুন: ভোট প্রচারে বেরিয়ে সত্যাগ্রহ বিজেপি প্রার্থীর! কারণ জানলে অবাক হবেন

অতীতে দেওয়াল শিল্পীরা একদিনে ৮ থেকে ১০ টি অর্ডারের কাজ করে যথেষ্ট উপার্জন করতেন। তাতে দিব্যি সংসার চলে যেত। কিন্তু এখন ডিজিটাল প্রিন্টিং এসে যাওয়ায় এবং ফ্লেক্সের রমরমা বাড়ায় তাঁদের চাহিদা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির স্থানীয় চিত্র শিল্পী রমেন রায় বলেন, আগে আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা ছিল তা আর এখন নেই‌। হকার্স কর্নার চিত্র শিল্পীদের দোকানে ভর্তি ছিল। এখন খোঁজ করলে গুনে গুনে দুটি দোকান পাবেন। কারণ পেটের টানে বাকিরা পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। আরেকজন শিল্পী খোকন দাস বলেন, ভোট এলে আগে দিনে ১০ টা কাজ থাকত। এখন ১০ দিনে একটা কাজ মেলাও দুষ্কর। এই অবস্থায় দেওয়াল চিত্রশিল্পীরা চান না তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম এই শিল্পকলার সঙ্গে জড়িয়ে হোক।

অনির্বাণ রায়

Risk at Work: প্রতিদিন দোলনায় ঝুলে সংসার চালান এঁরা! জীবন বাজি রেখেই চলে কাজ

উত্তর ২৪ পরগনা: জীবন বাজি রেখে উঁচু বিল্ডিংয়ের দোলনায় ঝুলে রং করেই চলে সংসার। আর এভাবেই দিনের পর দিন বালির বস্তায় বাধা দড়িতে ঝোলানো দোলনায় বসে কখনও পাঁচতলা, কখনও সাততলা, কখনও বা ১২, ১৫ তলা বিল্ডিংয়ে রঙের কাজ করে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই রংমিস্ত্রিরা।

আর‌ও পড়ুন: মরশুমের শেষ ট্রিপে ক্ষতির মুখে মৎস্যজীবীরা

এইভাবেই প্রবল ঝুঁকি নিয়ে দড়িতে ঝুলে চলছে প্রতিটা দিন। ভয় ও ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে সংসার চালাতে এই পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা। উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে বালির বস্তায় দড়ি বেঁধে, দড়ির অপর প্রান্ত কাঠের একটি পাটাতনে বেঁধে রঙের বালতি ও তুলি নিয়ে ঝুলে পড়েন এই রংয়ের মিস্ত্রিরা। দৈনিক স্বল্প পারিশ্রমিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোজ এভাবেই কাজ করতে হয়।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

কখনও হাবড়া, কখনও অশোকনগর আবার কখনূ বারাসাত-মধ্যমগ্রাম সহ কলকাতার নানা প্রান্তে সুউচ্চ বিল্ডিং রং করার জন্য ডাক পড়ে এই শ্রমিকদের। সংসারের দায়িত্ব, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, বাবা-মা’র ওষুধের কথা মনে এলে, ভয় ও জীবনের ঝুঁকির কথা ভুলে যান বলে জানান তাঁরা। একটু ভুল হলেই নেমে আসতে পারে চরম বিপদ। তাই প্রতিদিন ভয় ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করতে হয় কাজ। কারণ পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা।

রুদ্রনারায়ণ রায়

Nadia News: বাবা কারখানার কর্মচারী! মেয়ের আঁকা শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকায়

রানাঘাট: নেট দুনিয়ায় ভর করে গ্রিলের কারখানার কর্মচারীর মেয়ের নিজের হাতে আঁকা শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকায়। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমের জেরে প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিভাবান ব্যক্তিও উঠে আসেন সংবাদ শিরোনামে। ভাইরাল হওয়ার পরে খুলে যায় তাদের ভাগ্য।

তবে এক্ষেত্রে অন্য। রানাঘাট কুপার্স কুমার শটপুর মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা পৌলমী দাস ছোটবেলা থেকেই আঁকার প্রতি ভালবাসা জন্মে গিয়েছিল তার। আঁকার প্রতি তার ভালবাসা এবং আগ্রহ দেখে তার বাবা ভর্তি করিয়ে দেন অঙ্কন প্রশিক্ষণের জন্য রানাঘাটে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী সঞ্জু কুন্ডুর কাছে। সেই থেকেই তার পথ চলা শুরু। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি একের পর এক অসাধারণ ছবি আঁকতে শুরু করে সে।

শুধু খাতাতেই নয় সে ছবি আঁকতো মাটির বিভিন্ন সামগ্রীতে এবং বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্রের উপরেও। সেই সমস্ত ছবিগুলি সে তার নিজের সোশ্যাল মাধ্যমে দেওয়ার পর থেকেই অফুরন্ত ভালোবাসা পায় সে। তার হাতে আঁকা বেশকিছু শৌখিন জিনিসপত্র ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করেন তিনি। তবে এই অনলাইন কেনাবেচা মূলত করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয় বলে জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: খুব সাবধান, প্রৌঢ়রাই হচ্ছেন টার্গেট ! এক ফোনেই গায়েব লাখ লাখ টাকা

তবে এবার আমেরিকা প্রবাসী সুমন রায় এবং তার স্ত্রী লিপিকা মজুমদার রায় পৌলোমী দাসের আঁকা ছবি সোশ্যাল মাধ্যমে দেখে যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। তাঁরা বরাত দেন, শাড়ির ওপরে পৌলমির হাতে আঁকা চিত্রের। কথাবার্তার পরে জানা যায় ওই আমেরিকা প্রবাসী দম্পতির বাড়ি রানাঘাটের স্থানীয় এলাকাতেই। আলাপচারিতার পরে কাপড়ের জন্য অগ্রিম টাকা নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি বলেই জানায় পৌলোমী।

শাড়ির উপরে ফুটিয়ে তুলেছে সে ফ্লোরাল আর্ট। রয়েছে ফ্লোরাল আর্টের একাধিক নিদর্শন। যা দেখে অভিভূত হয়ে যাবেন যে কেউ। অত্যাধুনিক মানের এই রং শাড়ি থেকে উঠে যাবে না কখনোই বলে দাবি পৌলমীর। শাড়িটি তৈরি করে আমেরিকায় পাঠাতে সম্পূর্ণ খরচ পারিশ্রমিক সহ আনুমানিক ১০ হাজার টাকার মতো ধার্য করেছে সে।

ইতিমধ্যেই শাড়িটির অর্ডার দেওয়া সেই দম্পতি একাধিকবার ভিডিও কলের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানায় সে। বাবা প্রশান্ত দাস একজন সাধারন গ্রিল কারখানার কর্মচারী। তিনি চান তার মেয়ে ছবি আকার মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হোক এবং নিজের পায়ে দাঁড়াক। আপাতত মেয়ের হাতে আঁকা শাড়ি আমেরিকায় পাড়ি দেওয়াতে খুশি তাদের গোটা পরিবার।

অন্যদিকে, চাকদহ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্রী পৌলমী জানিয়েছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যা চাকরি-বাকরির পরিস্থিতি তাতে আগেভাগেই একটা আয়ের রাস্তা দেখে রাখা উচিত, আর তা অবশ্যই নিজ নিজ পছন্দের। এ ব্যাপারে প্রথম অনুপ্রাণিত হয়েছিল আঁকার স্যার সঞ্জু কুন্ডুকে দেখে কারণ তার তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম নেট দুনিয়ায় বিক্রি হয়, সেই শিক্ষকও এই শাড়ি আঁকার ক্ষেত্রে অনেক ভুল ভ্রান্তি শুধরে দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে হলুদ সাদা বেগুনি রানী সবুজ নানান ধরনের ফেব্রিক রং ব্যবহার করা হয়েছে যা পিওর মুর্শিদাবাদ সিল্কের উপর অত্যন্ত উজ্জল অথচ ক্ষণস্থায়ী নয়। শাড়ির মধ্যে ফ্লোরাল কুইন, গোলাপ প্রজাপতি এ ধরনের নানা বিষয় রংয়ের ছটায় আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তবে এভাবে আরওকিছু অর্ডার পেলে পৌলমি তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি বাণিজ্যিক ওয়ার্কশপ খুলবে বলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

Mainak Debnath