Tag Archives: Rath Yatra
Rath Yatra: “রথ দেখা কলা বেচা”, কেন বলেন জানেন এই কথা? মানে জানতে আসুন মহেশে
হুগলি: বাংলায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো “রথ দেখা কলা বেচা”। যার অর্থ করলে দাঁড়ায়, একটি কাজ করতে এসে দুই কাজ করে নেওয়া। তবে এই প্রবাদটির উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে সে বিষয়ে কি কেউ জানেন ! যেহেতু নামের সঙ্গে রথ জড়িয়ে রয়েছে তাই রথের সঙ্গে নিশ্চয়ই কোন সম্পর্ক রয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে ঠিকই তবে আক্ষরিকভাবে রথ দেখা ও কলা বেচা কি জিনিস তা খুঁজে পেতে গেলে আসতে হয় মহেশের রথযাত্রা উৎসবে।
মাহেশের রথযাত্রার দিন বহু মানুষ আসেন শুধুমাত্র এখানে চিনি কাঁঠালি কলা বিক্রি করতে। যে সমস্ত ভক্ত সমাগম এখানে থাকে তারা সেই কলা কিনে রথের দিকে ছোড়েন। এটাই নাকি প্রাচীন প্রথা। তবে কেন জগন্নাথ দেবকে কলা দেওয়া হয় !
এই বিষয়ে জানিয়েছেন মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত তমাল অধিকারী। তিনি বলেন, জগন্নাথ দেব যখন মাসির বাড়িতে রথে চরে ঘুরতে যান সেই সময় তাকে কলা, জিলিপ এই গুলি দেওয়া হয়। তাঁর কারণ জগন্নাথ দেব সাধারণ মানুষের মতই অভাসী। আমরা যেমন কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় সঙ্গে খাবার-দাবার নিয়ে রাখি যাত্রা পথে পেট ভরানোর জন্য। ঠিক সেই রকমই রথে চড়ে জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ির উদ্দেশে যখন রওনা হন তখন তাকে কলা দেওয়া হয় যাত্রাপথের খিদে মেটানোর জন্য। সেই থেকেই এই রীতি তৈরি হয়েছে যেখানে ভক্তরা রথের দিকে কলা ছোড়েন। এতে ভক্তদের বিশ্বাস ভগবান জগন্নাথ তিনি এই প্রসাদ গ্রহণ করেন তাদের পূর্ণ হয় ভক্তদের।
রবিবার মাহেশের রথযাত্রা উপলক্ষে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতন। লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থীদের ভিড়ে ভরে উঠেছিল রাস্তার দুই ধারে। সেখানে দেখা যায় কিছু মানুষ তারা ছোট ছোট কাঁঠালি কলা ঝুড়ি করে নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন। সেই কলা পুণ্যার্থীরা কিনছে ঠাকুরের কাছে দেওয়ার জন্য। এইরকমই একজন বিক্রেতা হলেন জ্যোতি চক্রবর্তী।
কলা বিক্রেতা জ্যোতি বলেন, তার আঠারো বছর বয়স থেকে মাহেশে আসছেন কলা বিক্রি করতে। এখন তার বয়স ৫২। ১০ টাকায় তিনটি করে কলা বিক্রি তিনি। সেই টাকা দিয়ে তার যা উপার্জন হয় সেই দিয়ে তাদের রথের মেলা দেখা হয়ে যায় উপরন্তু কিছু লাভের টাকাও থাকে। জ্যোতি চক্রবর্তী মতন এরকম অনেকেই মহেশের রথের মেলায় কলা বিক্রি করতে।
রাহী হালদার
Ratha Yatra 2024: অঘোরীদের দখলে রথতলার রাজপথ! রথযাত্রায় বিরাট চমক, ছবি দেখলে আঁতকে উঠবেন
East Bardhaman News: রাত পোহালেই রথযাত্রা, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি হল কোনারকের সূর্য মন্দির, চমকে গেলেন সকলে
পূর্ব বর্ধমান: রাত পোহালেই রথযাত্রা। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠবে আপামর বাঙালি। রাজ্যজুড়ে যেন সাজো সাজো রব। রথযাত্রার আগে বিভিন্ন জায়গায় জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি। সেরকমই রথযাত্রার প্রাক্কালে আবারও এক নতুন চমক দিলেন পূর্ব বর্ধমানের তপন বাবু। রথযাত্রার পূর্বে আবারও পূর্ব বর্ধমানে দেখা গেল এক অসাধারণ ছবি। ফেলে দেওয়া বাতিল বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে কোনারকের সূর্য মন্দির তৈরি করে, তাক লাগিয়ে দিলেন পেশায় শিক্ষক তপন দাস।
এই প্রসঙ্গে তপন বাবু বলেন, “আমি পুরীর কোনারক সূর্য মন্দির তৈরি করেছি। রথযাত্রা উদ্দেশ্য করে আমি এই মন্দির বানিয়েছি। গুসকরা শহরের স্থানীয় বাজার থেকে বিভিন্ন ওয়েস্ট মেটেরিয়াল সংগ্রহ করে এই মন্দির তৈরি করেছি। এটাই প্রথম নয় এর আগেও আমি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছি ওয়েস্ট মেটেরিয়াল দিয়ে। গত বছর রথযাত্রার আগে পুরীর জগন্নাথ মন্দির তৈরি করেছিলাম।”
পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরের বাসিন্দা তপন দাস। তপনবাবু গুসকরার রায় রামচন্দ্রপুর এন বি বিদ্যাপীঠ-এর শিক্ষক। জানা গিয়েছে, শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে তপনবাবুর সাহিত্য, সৃজনী, শিল্প, খেলাধুলো এই সমস্ত বিষয়গুলির উপর এক আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এর আগেও তপনবাবু বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানিয়ে সকলকে অবাক করেছিলেন। সেরকমই এবার রথযাত্রার প্রাক্কালে তাঁর নতুন চমক কোনারকের সূর্য মন্দির। এই প্রসঙ্গে তপন বাবু আরও বলেন , “এপ্রিল মাস থেকে আমি এই কাজ করতে শুরু করেছিলাম। আমার টার্গেট ছিল রথযাত্রার এক সপ্তাহ আগেই এই কাজ আমি শেষ করব। এত কঠিন কাজ মাঝখানে এসে মনেও হয়েছিল যে হয়তো আমি সম্পূর্ণ করতে পারবো না। কিন্তু সারা দিনে আমি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে এবং গ্রীষ্মের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে এই মন্দির সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। রথযাত্রার আগে জনসম্মুখে এই মন্দির আনতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।”
তপন বাবু যে মন্দির তৈরি করেছেন তা সত্যিই নজরকাড়া। খবরের কাগজ, জেরক্স পেপার,কার্ডবোর্ড, সুতো সহ আরও বেশ কিছু বাতিল সামগ্রী দিয়ে তৈরি, এই মন্দির দেখলে মুগ্ধ হবেন অনেকেই। দীর্ঘ পরিশ্রমের দ্বারা সৃষ্টি এই মন্দির সত্যিই অসাধারণ। পেশায় শিক্ষক পূর্ব বর্ধমানের তপন বাবুর হাতের জাদুতে যেন অন্য রূপ পেয়েছে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। সবমিলিয়ে রথযাত্রার প্রাক্কালে কোনারকের সূর্য মন্দির তৈরি করে আবারও নতুন চমক দিলেন পূর্ব বর্ধমানের তপন দাস।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী
Jagannath Rath Yatra 2024: এবার ১ নয়, টানা ২ দিন ধরে চলবে রথযাত্রা উৎসব, ৫৩ বছর পর দুর্লভ কাকতালীয় ঘটনা! জগন্নাথ দেবের কৃপায় বিরল যোগে সৌভাগ্যের দরজা খুলবে
Madan Mohan Temple Rath: নতুন চাকায় রথ ছুটবে মদনমোহন দেবের মাসির বাড়ি, দূর-দূরান্ত থেকে উপচে পড়ে মানুষের ঢল
কোচবিহার: কোচবিহারের মদনমোহন দেবের রথযাত্রা পালন করা হয় সমারোহের সঙ্গে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্তবৃন্দ এই রথ যাত্রায় এসে উপস্থিত হন মদনমোহন বাড়িতে। রথে চেপে কোচবিহারের সকলের প্রাণের দেবতা মদনমোহন দেব যান মাসির বাড়িতে। কোচবিহারের গুঞ্জবাড়িতে অবস্থিত ডাঙর আই মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় মদনমোহন দেবকে। সেখানেই বেশ কয়েকদিন ধরে চলে মেলা এবং পুজোর আসর। তারপর আবারও উল্টো রথে মদনমোহন দেব কে নিয়ে আসা হয় মদনমোহন বাড়িতে।
এই গোটা কর্মকান্ডে কোচবিহারের রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী রথ ব্যবহার করা হয়। তবে দীর্ঘ সময়ের পুরনো হওয়ার কারণে রথের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তার মধ্যে মূল ছিল রথের চাকা। চলতি বছরে রথের চাকাগুলোকে একেবারে নতুন করে শাল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই চাকা তৈরি করতে আনুমানিক দেড় মাসেরও বেশি সময় লাগছে। রথের চাকা প্রস্তুতকারী দেবেন্দ্র শর্মা জানান, “কোচবিহারে এই রথের মেরামতির লোক খুব একটা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রথের মেরামতির কাজ তিনি করেন। চলতি বছরের রথের চাকা নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। সম্পূর্ণ শাল কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে কোচবিহারের রথের চাকা।”
কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল ধারা জানান, “অন্যান্য বছরের মতন এ বছরেও বেশ সমারোহের সঙ্গেই পালিত হতে চলেছে মদনমোহন দেবের রথযাত্রা। মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি রথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ এবার করা হয়েছে। যাতে ভক্তবৃন্দ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে মদনমোহন দেবের রথকে মাসির বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। আশা করা হচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে এবারেও বহু মানুষ এই রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া কোচবিহারবাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহন দেব। সেই কারণে কোচবিহারবাসির মধ্যে এক আলাদা উদ্দীপনা দেখা যায় রথের মেলাকে কেন্দ্র করে।”
বর্তমান সময়ের রথের রঙের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই চাকার কাজও অনেকটাই সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে। আগামী মাসের ১ তারিখের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে রথের। চলতি বছরে একেবারে নতুন চাকা নিয়ে মদনমোহন দেবের রথযাত্রা মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যাবে। ফলে ভক্তদের মধ্যেও অনেকটাই উদ্দীপনা কাজ করছে ইতিমধ্যেই।
Sarthak Pandit
Rath Yatra 2024: এসেই গেল রথযাত্রা, ২৫০ বছরের প্রাচীন উৎসবের প্রস্তুতি শুরু, সেজে উঠছে ১৩ চূড়া বিশিষ্ট রথ, দেখে আসতে পারেন
মহিষাদল: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথযাত্রা পুরী ও হুগলির মাহেশের রথের পর সমানভাবে জনপ্রিয়। প্রায় ২৫০ বছর আগে এই রথ যাত্রার শুভ সূচনা করেছিলেন মহিষাদল রাজবাড়ির রানি মা জানকী দেবী।
১৭৭৬ সালে প্রথম মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রার উৎসব শুরু হয়। কালের নিয়মে রাজবাড়ির প্রাচীন গৌরব ও ঐতিহ্য কিছুটা মলিন হলেও প্রাচীনত্ব এবং জনপ্রিয়তার নিরিখে মহিষাদল রাজবাড়ির এই রথ আজও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে এক আবেগের নাম।
রানি জানকী দেবীর আমলে ২০ চূড়া বিশিষ্ট রথ টানা হত। জাঁকজমক আর আড়ম্বর পূর্ণ সেই যাত্রা। রানি জানকী দেবীর শুরু করা সেই রথযাত্রা উৎসব বর্তমানেও হয়ে আসছে।
চলতি বছর ৭ জুলাই রথযাত্রার উৎসব। ফলে হাতে এক মাসও সময় নেই। তাই মহিষাদলের রথযাত্রা উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মহিষাদলের এই রাজবাড়ির রথ উৎসব বর্তমানে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির পরিচালনা করেন। ১৩ চূড়া বিশিষ্ট কাঠের রথে রয়েছে ৩৪টি চাকা। ১৮৫১ সালে রাজা লক্ষণ প্রসাদ গর্গ রথ সংস্কারের সময় ১৩ চূড়া বিশিষ্ট রথ করেন। সেই থেকেই এই রথ ১৩ চূড়ার। মহিষাদল রাজবাড়ির রথের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই রথে রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপাল জিউ রথে চড়ে বসেন। মন্দির থেকে পালকিতে করে রথে আসেন কুলদেবতা।
মহিষাদল রাজবাড়ির রথ ঘিরে বসে মেলা। দুই সপ্তাহ ধরে মেলা চলে। ২০২৪ সালের রথযাত্রার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই মহিষাদলে শুরু হয়েছে। চলছে মেরামতের কাজ। এর পাশাপাশি যে রাস্তা দিয়ে রথ যায় সে রাস্তা সংস্কারেরও কাজ চলছে। রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানঘর সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু দোকানদারেরা নিজেরাই তাঁদের দোকান ঘর সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে রথের আগে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোর কদমে। মহিষাদল রাজবাড়ির এই রথ শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা নয়, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় রথযাত্রা। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হওয়ায় রথযাত্রার ঘিরে। এবারও তার অন্যথা হবে না বলে মনে করছেন রথযাত্রা কমিটি।
সৈকত শী