কলকাতা:মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া-মুম্বই মেল। দুর্ঘটনার জেরে বেলাইন হয়ে যায় ট্রেনের অন্তত ১৮টি কামরা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার জেরে অন্তত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী। জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনেই ছিলেন মালদহের তিন ফলবিক্রেতা।
মালদহের ইংলিশবাজারের লক্ষ্মীঘাট এলাকার বাসিন্দা ওই ফলবিক্রেতারা। তিনজনেই মুম্বইয়ের ফুটপাতে ফল বিক্রি করে সংসার চালান। পরিবারের কাছে এই খবর পৌঁছতেই উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। রেল দুর্ঘটনায় ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওই ফলবিক্রেতারা। প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এক ফলবিক্রেতার পরিজনের দাবি, ‘রাত দশটা নাগাদ ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। পরে শুনি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে একবার ফোনে কথা বলেছি।’ নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। হাওড়া স্টেশন-সহ একাধিক জায়গায় খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্ক।
এ দিকে, ঘনঘন রেল দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবার কেন্দ্রের সরকারের দিকে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আর কত দিন আমাদের এ সব সহ্য করতে হবে? কেন্দ্রীয় সরকারের এই অকর্মণ্যতার কি কোনও শেষ নেই?’
মালদহ:হাওড়া-মুম্বই মেল দুর্ঘটনায় জখম মালদহের ইংরেজবাজারের লক্ষ্মীঘাট এলাকার তিন যুবক। পেশায় ফল বিক্রেতা তিনজন গতকাল মালদহ থেকে মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ভোররাতে দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার খবর পায় পরিবার। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে পুরুষদের দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার খবরে চরম উৎকণ্ঠায় পরিবার।
রেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন প্রতিবেশীদের। মালদহের ইংরেজবাজারের নরহাট্টা পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীঘাট গ্রাম। এই গ্রামের তিন যুবক জামশেদ শেখ, কাদির শেখ ও সোহরাব শেখ মুম্বই মেলে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরার যাত্রী ছিলেন। ইদে বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁরা। গতকাল সকালে মালদহের বাড়ি থেকে কর্মস্থল মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত দশটা নাগাদ প্রত্যেকেই পরিবারের লোকজনকে জানান তাঁদের ট্রেন হাওড়া থেকে রওনা হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে জামশেদ ও কাদির সম্পর্কে জামাই ও শ্যালক। ট্রেন দুর্ঘটনায় যে কয়েকটি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের মধ্যে ছিল জামশেদ কাদির ও সোহরাব। ঘুমন্ত অবস্থায় ওপরের নির্দিষ্ট আসন থেকে নীচে পড়ে যায় কাদির। কামরা পাল্টি খাওয়ায় শরীরের চোট পান জামশেদ ও সোহরাব। জানলার কাঁচ ভেঙে বের হতে হয় তিনজনকেই। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শুরু হয় চিকিৎসা।
ভোর চারটে নাগাদ পরিবারের লোকজন দুর্ঘটনার খবর পান। এরপর থেকেই কার্যত খাওয়া, ঘুম ছুটেছে মহিলাদের। সকলেই চাইছেন প্রিয়জনেরা দ্রুত সুস্থ হোক। একইসঙ্গে উৎকণ্ঠা কবে আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে পারবে তাঁরা। এরই মধ্যে পরিবার-পরিজনদের ক্ষোভ রেলের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রতিবেশীরা বলেন, প্রায় তিন হাজার দু’শো টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তাঁরা গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। রেলের ভাড়াও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু, যেভাবে পরপর দুর্ঘটনা হচ্ছে তাতে স্পষ্ট, নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও সুরক্ষিত নয়।
ভিন রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চলে। এবার কাজে যাওয়ার পথে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন মালদহের পরিযায়ী শ্রমিক। দুর্ঘটনায় কোমরে চোট পেয়েছেন। দুর্ঘটনার পর ঠিকমত কথা বলতে পারছেন না। সেখানেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মালদহের চাঁচলের পরিযায়ী শ্রমিক রাজু শেখ।
এদিকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যাক্তির দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার খবর পৌঁছাতেই উদ্বিগ্ন পরিবার।পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধা মা-সহ স্ত্রী, তিন সন্তান। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসার কীভাবে চলবে এই চিন্তায় এখন পরিবারের লোকেদের মধ্যে। জখম শ্রমিকের মেয়ে রিয়া খাতুন বলে, “আমার বাবা পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। এখন আমাদের কী হবে আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। শুনছি বাবার কোমরে চোট পেয়েছে। রেলের কাছে চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
নদিয়া: ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে মাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন হাওড়া মুম্বই মেল ট্রেনে৷ গাংনাপুরের এক বৃদ্ধা মা এবং তার ছেলে৷ ১২৮১০ হাওড়া মুম্বই মেল ট্রেন দুর্ঘটনার সময় ট্রেনে ছিলেন নদিয়ার রানাঘাটের গাংনাপুরের বাসিন্দা উৎপল সরকার। মারণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত ৬৪ বছর বয়সের মায়ের চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে এদিন সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে বোম্বে মেলে চেপে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন পেশায় ইলেকট্রিক গাড়ি চালক উৎপল বাবু।
দুর্ঘটনার জেরে উৎপল বাবুর বৃদ্ধা মা জখম হন। এ প্রসঙ্গে আতঙ্কিত উৎপল সরকার জানান, সোমবার সন্ধ্যায় হাওড়া স্টেশন থেকে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে মুম্বইয়ের উদ্দেএ রওনা দেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে ঝাড়খণ্ডের চন্দ্রধরপুরের কাছে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের ১৮ টি বগি। ভোররাতে সকলেই ঘুমিয়ে থাকার কারণে সেভাবে কিছু অনুভব করতে না পারলেও বগিটি তীব্র ঝাকুনি দিয়ে থেমে যায়। সিট থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে মুখ মন্ডলে আঘাত পেয়ে জখম হন বৃদ্ধা মা। সামান্য আঘাত তাঁরও লাগে।
ঝাড়খন্ডে রেল দূর্ঘটনায় চিন্তায় মালদহের তিন পরিবার। দূর্ঘটনাগ্রস্থ ওই ট্রেনেই ছিলেন মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের লক্ষীঘাটের তিন ব্যাক্তি। প্রত্যেকেই মুম্বাইয়ে ফল বিক্রি করেন। মুম্বাইয়ের ফুটপাতে ফল বিক্রি করে সংসার চলে তিন শ্রমিকের
Train Accident | করমণ্ডল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ভয়ংকর দুর্ঘটনা। চলতি মাসে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB) বলছে, গত দশ বছরে স্রেফ রেল দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন আড়াই লক্ষের বেশি মানুষ! তবু এই রেল ব্যবস্থাই দেশের সিংহভাগ মানুষের নির্ভরযোগ্য গণপরিবহণ। ফলে রেল যাত্রায় আতঙ্ক বাড়লেও তা এড়ানো কঠিন।
এই অবস্থায় তৃতীয় মোদি সরকারের বাজেটের দিকে তাকিয়ে ছিল আমজনতা। মনে করা হচ্ছিল, একের পর এক দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে যাত্রী সুরক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ হতে পারে। যদিও হতাশ করল তৃতীয় মোদি সরকারের বাজেট। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সামান্যই বাড়ানো হল রেলের বরাদ্দ।
নয়াদিল্লি: দেশে খুবই ঘন ঘন ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে চক্রধরপুরে বেলাইন হয় হাওড়া-মুম্বই মেল, লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে বহু কামরা। ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে প্রাণ যায় দুই যাত্রীর, আহত হন আরও ২০ জন। রেল দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দায়ী কে? এই নিয়ে মঙ্গলবার সংসদে সরব হলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার জেরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর বিবৃতি দাবি করেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই নিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।