নদিয়া: কৃষ্ণনগরের অন্যতম ঐতিহ্য হল জগদ্ধাত্রী পুজো। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকে শুরু হয়ে আসছে এই পুজো। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় রয়েছে কিছু বিশেষ প্রথা। পুজোর পরের দিন প্রতিমা নিরঞ্জন হয় এখানে বেহারাদের কাঁধে করে। যাকে আঞ্চলিক কথায় বলা হয় ‘সাঙ’। এই সাঙ নিয়ে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিবছরই উদ্দীপনা থাকে বিশেষভাবে। তারা বলেন তারা পুজো করেন মূলত এই সাঙ প্রথার জন্যই।
পুজোর পরের দিন সন্ধ্যেবেলা কৃষ্ণনগরের রাজপথ অর্থাৎ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে পোস্ট অফিস মোড় হয়ে সমস্ত প্রতিমা চলে যায় কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাটে বিসর্জনের উদ্দেশে। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিমাই যায় বেহারাদের কাঁধে চেপে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যময়ী বুড়িমা, মেজোমা, ছোটমা, বাঘাডাঙ্গা, গোলাপট্টি বারোয়ারি সহ একাধিক প্রতিমা।
আরও পড়ুন: আবার এসো মা, জগদ্ধাত্রী পুজো শেষে কৃষ্ণনগরে প্রতিমা বিসর্জনে মানুষের ঢল
প্রত্যেক বছরের মতোই এ বছরও চিরাচরিত প্রথায় সাঙ এ করে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হল কৃষ্ণনগরের রাজপথ দিয়ে। বেলা পড়তেই পুজো কর্মকর্তারা তাদের প্রতিমা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কৃষ্ণনগরের রাজপথে। বেহারাদের কাঁধে করে একের পর এক প্রতিমা প্রথমে পৌঁছায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে। এরপর সেখান থেকে সোজা চলে যায় কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাটে নিরঞ্জনের উদ্দেশে। এই পথের দু’ধারেই হাজার হাজার দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় করে থাকেন বছরের এই একটিবার বেয়ারাদের কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার শোভাযাত্রা দর্শন করার জন্য।
আরও পড়ুন: ঘট বিসর্জন উপলক্ষে কৃষ্ণনগরে রাজপথে বেরিয়েছে একের পর এক ট্যাবেলো
রাস্তার দু’ধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অসংখ্য উৎসাহিত জনতা। মাঝে দু এক জায়গায় পুলিশি নিরাপত্তা দেখা গেলেও সেই অর্থে পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষেরা। একের পর এক প্রতিমা কখনও সাঙ এ করে কিংবা কখনও গাড়িতে করে পরপর গেলেও মাঝে বেশ কয়েকবার একটি প্রতিমা যাওয়ার পর অন্যটি আসতে খানিক সময় লেগে যায়। আর সেই কারণেই নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক ঘন্টা পরেও আসতে দেখা যায় না কৃষ্ণনগরের অন্যতম ঐতিহ্যময়ী বুড়িমাকে।
অবশেষে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ছোট মা কৃষ্ণনগরের রাজপথ থেকে চলে যাওয়ার পরে চাষাপাড়া বারোয়ারির থেকে বেহারাদের কাঁধে চেপে বেরোলেন বুড়িমা। বেয়ারাদের কাঁধে চেপেই সোজা তিনি চলে গেলেন রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। হাজার হাজার দর্শনার্থীরা সেই দৃশ্য করে নিলেন ক্যামেরাবন্দি। এরপর রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই রাস্তা ধরে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হল বুড়িমাকে কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাটে।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
বুড়িমা চলে যাওয়ার পরেই কার্যত ফাঁকা হতে শুরু করল কৃষ্ণনগরের রাজপথ।
Mainak Debnath