নদিয়া: বহু প্রাচীন শান্তিপুরের চাঁদুনি মাতার পুজোতে আজও বসে নহবত সানাইয়ের মজলিস। সানাই অত্যন্ত পুরনো ও ঐতিহ্যশালী এক বাদ্যযন্ত্র। আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে বাড়ি পুজো ইত্যাদিতে এই সানাই নহবত বাজানোর রীতি এবং রেওয়াজ ছিল যথেষ্ট। তবে কালের কালান্তরে অত্যাধুনিক বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কার ও ব্যবহারের কারণে শোনা যায় না সানাইয়ের আওয়াজ।
তবে এখনও পুরনো ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছেন অনেকেই। শান্তিপুরের বহু প্রাচীন চাঁদুনি মাতার পুজোতে আজও আসেন তাঁরা অন্য জেলা থেকে সানাই বাজাতে। মুর্শিদাবাদের কান্দি শহর থেকে সানাইয়ের দল নিয়ে বহু বছর ধরে চাঁদুনি বাড়িতে সানাই ও অন্যান্য ঐতিহ্যময় বাদ্যযন্ত্র সহকারে মজলিস বসাতে আসেন মহেশ্বর বিত্তার। বংশ পরম্পরায় তাঁরা সানাই বাদক। মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে তাঁরা নদিয়ার শান্তিপুরে বছরের দুটি সময়ে আসেন।
আরও পড়ুন: আরিয়া ৩-এর এই দৃশ্য শ্যুটিংয়ের সময় হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল সুস্মিতার, দেখুন সেই ভিডিও
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে তাঁরা আসেন বড় গোস্বামী বাড়িতে এবং কালীপুজো উপলক্ষে তাঁরা আসেন শান্তিপুরের চাঁদুনি বাড়িতে। একাদশীতে তাঁরা চলে আসেন তাঁদের সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের সরঞ্জাম নিয়ে। একাদশী দিন থেকেই তাঁরা সানাইয়ের সুরে আহ্বান জানান পুজোর। কালী পুজো পর্যন্ত তাঁরা বাজিয়ে আবার ফিরে যান বাড়িতে। বছরের অন্যান্য সময় এই পেশায় খুব একটা রোজগার হয় না তাঁদের। সেই কারণে এই পেশার পাশাপাশি তাদের রয়েছে প্রত্যেকেরই অর্থ উপার্জনের বাড়তি উপায়।
আরও পড়ুন: এবার শীতে টানা ১ মাস রোজ সকালে নিমপাতা খান, আশ্চর্য উপকার পাবেন! তবে এক মাসই, জানুন
সানাই বাদক মহেশ্বর বিত্তার জানান, বর্তমানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের রমরমা বাজারে সানাইয়ের প্রচলন অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখনও অনেক অভিজাত বাড়িতেই পুরনো পরম্পরাকে তাঁরা ধরে রেখেছেন। এ কারণেই আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং পুজো পার্বণে ডাক পড়ে তাদের। ঢোল, সানাই, হারমোনিয়াম, প্রেমঝুড়ি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সহকারে তাঁরা আধুনিক গান থেকে শ্যামাসঙ্গীত সুর তুলে আজও মন জয় করে নেন সকলের।
এই বাড়ির সদস্য প্রীতম মুখোপাধ্যায় জানান, প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো শান্তিপুরের চাঁদুনী বাড়ির কালীপুজো। কথিত আছে, কাশীনাথ সার্বভৌম ছিলেন গৌরাঙ্গ দেবের গৃহ শিক্ষক। সৃষ্টিকালে এই স্থান দিয়ে বইত গঙ্গা। বালক কাশীনাথ তাঁর মায়ের কাছে আবদার করেছিলেন কালীমূর্তি করে গড়ে দেওয়ার জন্য। মা মূর্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন কাশীনাথ নিজে সেই পুজো করেছিলেন। দূর দূরান্ত থেকে এসে শান্তিপুরের চাঁদুনি মাকে দেখতে ভিড় জমান ভক্তরা।
Mainak Debnath