আউশগ্রামঃ আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের অজয়তীরের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মল্লিকপুর গোস্বামীখন্ড গ্রামে রয়েছে একটি প্রাথমিক হসপিটাল। কংগ্রেস আমলের শেষের দিকে সে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছিল এবং দশ শয্যা বিশিষ্ট সেই হসপিটালে রোগীর চাপ লেগেইছিল। তারপর একটি জমানা গেছে। অজয়ে বহু জল গড়িয়েছে সময়ের তালে, কিন্তু বদলায়নি রামনগর হসপিটালের পরিস্থিতি। বরং বিগত বাম আমলেই বন্ধ হয়ে গেছিল হসপিটালটি একপ্রকার। পুরোনো কোয়াটার্স, অপারেশন থিয়েটার সহ সমস্তকিছুই ভেঙ্গে যায়। চুরি হয়ে যায় হসপিটালের গেট, বাতি স্তম্ভ ও নানান যাবতীয় জিনিষপত্র। কোনও হেলদোল নেই। এলাকার মানুষ অসহায়ের মতো দিন কাটায়।
আরও পড়ুনঃ শহরের পাশাপাশি গ্রামকে গুরুত্ব দিয়েও প্রচার দিলীপ ঘোষের
এক সময়ে এই হসপিটালেই জন্ম হয়েছে, বহুমানুষ সুস্থ হয়েছে ভর্তি থেকে। সেইসঙ্গে নানারকমের অপারেশনও হয়েছে এখানে। এই হসপিটালে দীর্ঘ ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা করে গেছেন ডা. রজত গড়াই। এলাকার বহু সাপে কামড়ানো রোগীকে সুস্থ করে তোলেন তিনি। এই মল্লিকপুর হসপিটালের সামনেই বারাসাতের ডাঙায় নতুন করে তৈরি হয়েছে প্রস্তাবিত থানার বিল্ডিং। সেই ফাঁড়িকে থানা ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেও কয়েক বছর হয়ে গেল। এলাকার ফার্মাসিস্ট সঞ্জয় মণ্ডল আর একজন সরকারি নার্স এখন নিয়মিত মল্লিকপুরের হাসপাতালের আউটডোরটি চালু রেখেছেন। সপ্তাহে একবার কোনও চিকিৎসক আসেন জামতাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। বহুদিন বন্ধ হয়ে গেছে বেড পরিসেবা। হয়না ওটিও। সারাবছরই এই নিয়ে এলাকার মানুষ, প্রসূতি রোগীরাও পরেন মহা অসুবিধায়।
এলাকার সন্তান, লেখক রাধামাধব মণ্ডল বিভিন্ন নাগরিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেন। তিনি বেশ কয়েক বার এই নিয়ে চিঠিচাপাটি করেন বিভিন্ন দফতরসহ মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য দফতরেও। পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসককেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে জানান যে, গ্রামীণ এই দুর্গম এলাকার মানুষের কথা ভেবে এই হসপিটালের পুরোনো দিনের পরিকাঠামো ফেরানো হোক। বেড পরিষেবা করারও দাবি জানান তিনি। শুধু তাই নয়, গত ২৪ শে এপ্রিল আউশগ্রামের হাইস্কুল মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক সভায় আউশগ্রামে আসার আগেও লেখক রাধামাধব মণ্ডল তাকে লিখিত ভাবে সমস্ত বিষয়টি জানান। সে চিঠিরও উত্তর দেয় দফতর।
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, যে, হসপিটালের হাল ফেরাতে সরকারি উদ্যোগ শুরু হয়েছে। নির্বাচনী পর্ব শেষ হলেই তার পক্রিয়া শুরু হবে। লেখক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, দীর্ঘদিনের এই হসপিটালেই আমার জন্ম হয়। বেড পরিষেবার ঘর গুলি ভেঙ্গে গেছে বহুদিন। লাইট পোস্ট গুলিও ভেঙ্গে গেছে অবহেলায়। অপারেশন থিয়েটার এখন কোনও কাজে লাগে না। বহু জিনিস পত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আজকাল নিয়মিত ডাক্তারও থাকে না। এমনকী দুঃখের বিষয় হসপিটালের জায়গাগুলোও একশ্রেণির অসাধু চক্রের মানুষ দখল করে নিচ্ছে। পুরোনো বাউন্ডারি ভেঙ্গে গেছে। নতুন করে বাউন্ডারি দেওয়া হোক। সেইসঙ্গে এই অঞ্চল থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের দূরত্ব ৬৫-৭০ কিমি, গুসকরা শহর ৩২-৩৮ কিমি এবং বন নবগ্রামে আউশগ্রাম ১ নং ব্লক প্রাথমিক কেন্দ্রের দূরত্বও ২০ কিমির মতো।
এমত অবস্থায় অমরপুর, হরিনাথপুর, বসুধা, ভোগাতলা, আকুলিয়া, কালিকাপুরের পাশাপাশি হেদগড়া, গেঁড়াই, ভূঁয়েড়া, ডাঙাপাড়া, পাথারকুচি, মঙ্গলপুর, পল্লীশ্রী, মালচাসহ তিন- চারটি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ এই হসপিটালের চিকিৎসা পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অতীতে এই সব এলাকার কৃষিপ্রধান শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর শ্রেণির মানুষরা এই হসপিটাল থেকে চিকিৎসা পেয়েছে। এলাকার রাজনৈতিক নেতারা অনুব্রত মণ্ডলের কাছে এই হসপিটালকে পুনঃজীবিত করতে দাবি তুলে ছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি! রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বন্দনা ঘোষ বলেন, লেখক রাধামাধব মণ্ডলের জন্য আমাদের এলাকার বহুকিছু হয়েছে। পাণ্ডুরাজার ঢিবি নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। নাগরিকদের পাশে থাকেন। তার হসপিটালের এই কাজকে আমিও সমর্থন করি।