রঞ্জন চন্দ, পশ্চিম মেদিনীপুর: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। যার মধ্যে অন্যতম রথযাত্রা। তবে বাংলা-ওড়িশা সীমানায় এই গ্রামের রথ অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভিন্ন। একটি রথে শুধু জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার একটি করে মূর্তি নয়, এখানে রথে আরোহণ করেন মোট দশটি বিগ্রহ। যেখানে জগন্নাথের বিগ্রহের সংখ্যা মোট চারটি। যাকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে। বছরের পর বছর বংশ পরম্পরায় এই রীতি চলে আসছে বাংলা-ওড়িশা সীমানা এলাকা দাঁতন থানার আঙ্গুয়া গ্রামে। প্রায় দেড়শো বছর ধরে এই রথযাত্রায় মেতে ওঠেন আঙ্গুয়া-সহ পাশাপাশি একাধিক গ্রামে হাজারো মানুষ। সোজারথ থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত নানা আচার পালন করা হয় পরিবারে। এর পর শুরু হয় দুর্গাপুজোর নানা প্রস্তুতি।
পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রার অনুকরণে পশ্চিমবঙ্গের ওড়িশা সীমান্তে অনেক গ্রামে রীতি মেনে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। কোথাও জগন্নাথ মন্দির রয়েছে, কোথাও আবার পারিবারিকভাবে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। ওড়িশা সীমানায় এই গ্রামে জমিদার বাড়ির কুলদেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। পুরনো দিনে দু’টি রথের আয়োজন করা হত। কিন্তু নানা কারণে সেই রথ কমে হয় একটি। প্রতিবছর একটি রথে চেপে দশটি বিগ্রহ ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে আসেন জমিদার পরিবার দাস মহাপাত্র পরিবারে। সেখানে ন’দিন ধরে নানা রীতি মেনে পূজিত হন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। প্রতিদিন ফল প্রসাদ, অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। তবে ফের উল্টো রথযাত্রায় থাকে নানা আয়োজন।
আরও পড়ুন : রাত পোহালেই মনসাপুজো! মঙ্গলবারের পর আবার কবে সর্পদেবী ও অষ্টনাগপূজা? জানুন নির্ঘণ্ট
রথ এবং উল্টোরথযাত্রায় নানা আয়োজন থাকে দাস মহাপাত্রের বাড়িতে। প্রাথমিকভাবে জমিদার পরিবারে তিনজন দেবতা ছিলেন, জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা আয়োজন করা হয় এবং দশমী তিথিতে পুনর্যাত্রা শুরু হয়। উল্টোরথে দিন দশটি বিগ্রহ এসে উপস্থিত হন দাস মহাপাত্র বাড়ির দুর্গাদালানে। সেখানে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় পোড়া পিঠা। এরপর রথের রশি টেনে রথযাত্রা পালন করে গোটা গ্রামের মানুষ।
বংশ পরম্পরায় ক্রমশ এই ধারাকে বজায় রেখেছেন এই জমিদার পরিবার। গ্রামের মানুষের পাশাপাশি পারিবারিক আত্মীয়স্বজনরাও মেতে উঠেন। এরপর দুর্গাদালানে শুরু হয় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। স্বাভাবিকভাবে রীতির বৈচিত্র্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।