পূর্ব মেদিনীপুর: তীব্র তাপপ্রবাহে রাস্তায় অভিনব উদ্যোগ জেলা পুলিশের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাধারণ পথচারী ও গাড়ি চালকদের স্বস্তি দিতে হাতে তুলে দিল ওআরএস এবং জল। শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে পৌঁছে যায়। দুপুরের দিকে তাপমাত্রার পারদ আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় তাপপ্রবাহের সর্তকতা জারি করা হয়েছে।
তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকলেও কাজের প্রয়োজনে মানুষ বাধ্য হচ্ছে বাইরে বের হতে। এদিকে এই তীব্র গরমে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষ, গাড়িচালকদের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। তীব্র দাবদাহের মধ্যে গাড়ি চালকরা গাড়ি চালাতে চালাতে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। তার ফলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই ক্ষতিকারক পরিস্থিতি এড়াতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে ওআরএস ও পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। যাতে গাড়িচালক এবং পথচারীদের শরীর ঠিক থাকে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এমনিতেই পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ট্রাফিক বিভাগ। এবার ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জল এবং ওআরএস দেওয়া হল গাড়িচালকদের।পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের, পাঁশকুড়া থানা ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মেছোগ্রাম ও রাতুলিয়া এলাকায় পথ চলতি ট্রাক এবং প্রাইভেট গাড়ির ও বাস ড্রাইভারদের জল এবং ওআরএস বিতরণ করা হয়।
গাড়ি চালাতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করলে, গাড়ি ছায়ায় রেখে রেস্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন ট্রাফিক আধিকারিকেরা। সারা বছরই ট্রাফিক সচেতনতায় আতস কাঁচের তলায় থাকে ট্রাফিক ডিউটিরত পুলিশ আধিকারিকেরা। তাদের নানান কাজ করবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন গাড়ি চালকেরা। ট্রাফিক পুলিশদের নিজেদের কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেও মানবিক রূপ রয়েছে। তাদের সেই মানবিক রূপ এদিন বহিঃপ্রকাশ হল।
উত্তর ২৪ পরগনা: ভয়াবহ পরিস্থিতি দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। শুক্রবার প্রথম দফার লোকসভা ভোটের দিনই দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি পেরিয়ে গেল। সেই তালিকায় আছে উত্তর ২৪ পরগনার নাম’ও। আর জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁতেই আগুন লাগল জুট মিলের পাটের গুদামে।
এদিন দুপুরে শ্যামনগরের ওয়েভারলি জুট মিলের পাটের গুদামে আগুন লেগে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই গুদামে মজুত থাকা পাট অতি দাহ্য হওয়ায় দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর দেওয়া হয় দমকলে। ঘটনাস্থলে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রচন্ড রোদ এবং তাপের কারণেই সম্ভবত গুদামের মধ্যে রাখা পাটে আগুন ধরে যায়। দমকলের পক্ষ থেকেও তেমনই জানানো হয়েছে প্রাথমিক অনুমান হিসেবে। এর জেরে সাময়িক ব্যাহত হয়ে পড়ে মিলের উৎপাদন। বন্ধ রাখা হয়েছে কাজ। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানান, প্রথমে মজুত থাকা পাট থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। সেই ধোঁয়া থেকেই কিছুক্ষণের মধ্যে চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব হয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার: রয়্যাল বেঙ্গলদের গরমের হাত থেকে বাঁচতে রয়েল আয়োজন সুন্দরবনের ঝড়খালিতে। কী নেই সেখানে! গত কয়েকদিনের প্রচন্ড গরমে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এই চাঁদিফাটা গরমে হাঁসফাঁস করছে পশুরাও। কাহিল হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের রাজা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ও। তাই তাদের শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষ আয়োজন বন দফতরের।
এই গরমের দাবদাহ থেকে বাঁচতে নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ঝাড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে তিনটি বাঘ আছে। তারা যাতে এই গরমে কোনওভাবেই গরমে কষ্ট না পায় সে জন্য পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নানা আয়োজন করা হয়েছে। এই গরমে যাতে এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা বাঘেরা কোনওভাবে কষ্ট না পায় সেই কারণে দু’বেলা দীর্ঘক্ষণ ধরে পাইপের মাধ্যমে জল ছিটিয়ে তাদের স্নান করানো হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন-সি ট্যাবলেট এবং ওআরএস জলেগুলে খাওয়ানো হচ্ছে এই এখানকার বাঘেদের।
অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টাই বাঘেদের খাঁচার সামনে বিশালাকার স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছারাও বাঘেদের এনক্লোজারের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে বাথটাব। এবার আরও নতুন তিনটি বাথ টাব তৈরি করা হচ্ছে বাঘেদের জন্য। এছাড়াও প্রাকৃতিক পুকুর রয়েছে বাঘেদের স্নানের জন্য। এনক্লোজারের মধ্যে ছায়ার ব্যবস্থা করতে ছাউনিও করা হয়েছে। বাঘেদের খাঁচার মধ্যে বড় বড় পাত্রে জল রাখা হয়েছে যাতে নিজেদের প্রয়োজন মত সেই জল খেতে পারে বাঘ। বাঘেদের শরীরকে শীতল রাখতে এই সমস্ত ব্যবস্থা করা হলেও তাঁদের খাবারের মেনুতে আপাতত অন্য কোনও পরিবর্তন করা হয়নি বলেই বন দফতর সূত্রের খবর। তবে দু’বেলাই বাঘেদের খাঁচাগুলিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখছেন সেখানকার কর্মীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: তীব্র গরমের বলি হলেন এক বৃদ্ধা। শেখ শাকিলা বিবি (৬২) নামে ওই বৃদ্ধা অটোয় করে যাওয়ার সময় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অটোচালক দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সোনারপুরের ঘটনা।
জানা গিয়েছে, সোনারপুরের দক্ষিণ জগদ্দল এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা এদিন অটোয় করে চোহাটি যাচ্ছিলেন। তিনি পেয়ারা বাগান এলাকা থেকে অটোতে চাপেন। এই প্রবল গরমে অটোর মধ্যেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অটোচালক ও সহযাত্রীরা তাঁকে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর দেওয়া হয় সোনারপুর থানাতেও। এদিকে চিকিৎসকরা ওই বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রাথমিকভাবে ওই বৃদ্ধার পরিচয় জানা যায়নি তার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয় সেখান থেকেই ওই বৃদ্ধার পরিচয় বেরিয়ে আসে। এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে নিয়মমাফিক তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েক দিন ধরে গরমের তীব্রতা বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাপ প্রবাহ বইবে কয়েক জায়গায়। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা বলছেন, নিতান্তই প্রয়োজন না থাকলে দুপুরের সময়টায় বাড়িতে বা কোনও ঘেরা জায়গায় থাকা উচিত। বয়স্কদের বিশেষ করে বাইরে না বেরোনোর কথা বলা হয়েছে।