পূর্ব বর্ধমান: কার্গিল যুদ্ধের কথা কমবেশি সকলেরই মনে আছে। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই কারগিল যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল ভারতবর্ষ। সেই থেকে আজও প্রতিবছর ২৬ জুলাই দিনটি কার্গিল দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত কার্গিল যুদ্ধে ভারত জয়লাভ করলেও, দেশের জন্য শহিদ হয়েছিলেন বহু জওয়ান। কারগিল যুদ্ধের ভয়াবহ সেই সব দৃশ্য আজও মনে আছে বর্ধমানের আধা সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়ের। ২৬ জুলাই এলে আজও তিনি গর্ব অনুভব করেন। প্রত্যেকবছর ২৬ জুলাই তিনি স্যালুট দিয়ে সম্মান জানান নিজের স্মৃতি বিজড়িত সেই পোশাককে। নিজের বাড়িতেই গর্বের সঙ্গে পালন করেন কার্গিল বিজয় দিবস।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন সিআরপিএফ জওয়ান পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯৮৮ সালে মধ্যপ্রদেশে সিআরপিএফ জওয়ান পদে যোগদান করেন। প্রত্যন্ত গ্রাম মোস্তফাপুরের বাসিন্দা পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে কাটোয়া শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা তিনি। কারগিল যুদ্ধ চলাকালীন পল্লব’বাবুদের টিম দ্রাস এলাকায় পোস্টিং ছিল৷ তাঁর কাজ ছিল যুদ্ধে জখমদের সেবা করা। জখমদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভরতিকরা। শহিদ জওয়ানদের কফিনবন্দি করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরত পাঠানো৷ যুদ্ধের প্রতিটা দৃশ্য, প্রতিটা মুহূর্ত তিনি চোখের সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। ২০০৯ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন পল্লববাবু। তবে আজওৎকারগিল বিজয় দিবসে তিনি পুরানো স্মৃতি মনে করে গর্ব অনুভব করেন। কার্গিল যুদ্ধের সেইসব ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আজও স্পষ্ট মনে রয়েছে পল্লব চট্টোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন: গণপিটুনি ঠেকাতে পুলিশের প্রচার
তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের দ্রাসে চলে যেতে হয়েছিল। দ্রাস থেকে মাত্র ৫ কিমি দুরেই কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিনিয়ত গুলি, গোলা বর্ষনের আওয়াজে কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। শত্রুপক্ষ মুর্হুমুর্হু মর্টার ছুঁড়ছে। তখন বাড়ির চিন্তা মাথাতেই নেই। এক্কেবারে নিজের মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই প্রাণপনে লোড ছিলেন সবাই। একের পর এক সহযোদ্ধা জখম হচ্ছিল। তাঁদের রক্তে নিজের জামা ভিজেছে। তবুও তাঁদের সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। তবে শহিদদের কথা ভেবে মনের ভেতরটা হু হু করে সেদিন কেঁদেছে।
বর্তমানে পল্লববাবু অবসর নিলেও কার্গিল যুদ্ধ তাঁর কাছে যেন একটা স্মরণীয় মুহুর্ত হিসাবে রয়ে গিয়েছে। প্রতিবছর বিজয় দিবসে বাড়িতে কার্গিলের গল্প শোনানোটা এখন তাঁর রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে অবসর নিলেও আজও দেশের জন্য, শহিদ জওয়ানদের জন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন। পুরানো সেই সমস্ত দৃশ্য আজও মনে গেঁথে রয়েছে তাঁর। যুদ্ধের ২৫ বছর পরেও তিনি এখনও ২৬ জুলাই স্যালুট জানান তাঁর সেই পোশাককে।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী