হাওড়া: আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্নে যাওয়ার ডাক দেয় পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। অভিযান ঘিরে তুলকালাম। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছোঁড়া হয়। অভিযোগ, সাঁতরাগাছিতে ব্যারিকেড ভাঙতেই পাল্টা লাঠিচার্জ পুলিশের। ফাটানো হয়েছে টিয়ার গ্যাসের শেল।
নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে মিছিল পৌঁছতেই হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে নবান্নের রাস্তায় ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এরপর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও তাদের পিছনে ছুটতে শুরু করে। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ ও ধস্তাধস্তিতে ভাঙে পুলিশের ব্যারিকেড ৷ চলল লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ৷
আরও পড়ুন: নবান্নের সামনেই চলে এল বিক্ষোভকারীরা! দফায় দফায় ইটবৃষ্টি, রেড রোড বন্ধ, ছুটে গেল বিরাট পুলিশ বাহিনী
জাতীয় পতাকা হাতে করে এগোতে যান আন্দোলনকারীরা।হাওড়া ব্রিজেও চলছে তুমুল অশান্তি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশের জলকামান। ফোরশোর রোডেও ধরা পড়ে একই অশান্তির ছবি। অন্যদিকে ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুুলিশের লাঠিচার্জ এবং বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ডাকল বিজেপি। মঙ্গলবার বিকেলে দলের সদর দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে ধর্মঘট। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে বনধ সফল করতে আবেদন জানিয়েছেন সুকান্তবাবু। এদিন মোতায়েন ছিল ৬,০০০ পুলিশকর্মী। হাওড়া যাওয়ার পথে ব্যারিকেড করা হয় কমবেশি ১৯টি জায়গায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার একাধিক জায়গায় বড় ব্যারিকেড তৈরির পাশাপাশি নামানো হয় পুলিশ, র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স। সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, ফরশোর রোড এবং লক্ষ্মীনারায়ণতলা এবং মন্দিরতলায় বড় ব্যারিকেড তৈরি করা হয় ।
নবান্নের আশপাশে গলির মুখগুলোও ঘিরেও ফেলা হচ্ছে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে হাওড়ায় জখম হয়েছেন ব়্যাফের এক জওয়ানের। মাথা ফেটে গিয়েছে চণ্ডীতলা থানার সিআইয়ের। আহত পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করলেন আন্দোলনকারীরাই। খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি হাওড়া এবং সাঁতরাগাছিতে। খিদিপুর মনসাতলায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ইট ছোঁড়াছুঁড়ি। রেড রোড বন্ধ করে চলছে মিছিল। সাঁতরাগাছিতে মাথা ফাটল এক পুলিশ।
আরও পড়ুন: কলে ভাল করে শুনতে পান না, স্মার্টফোনের স্পিকার ঠিকমতো কাজ করে না? সহজ টিপস্ মেনে সারিয়ে ফেলুন
বেলা যত গড়ায় ততই ঝাঁজ বাড়ে আন্দোলনের। বেলা আড়াইটে নাগাদ নবান্নের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় একদল আন্দোলনকারী। নবান্ন থেকে তাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ১০০ মিটার। যদিও মিনিট তিনেকের মধ্যেই তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বেলা গড়াতেই খিদিরপুর, হেস্টিংস, রেড রোড, এম জি রোড দিয়ে মিছিল নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেয়। হেস্টিংস, রেড রোড এবং এম জি রোডে ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। ফের জলকামান চালাতে শুরু করে তারা। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। শুধু তাই নয়, একের পর এক গার্ডরেল কার্যত উপড়ে ফেলেন জনতা। জাতীয় পতাকা ওড়াতে শুরু করেন তাঁরা। অপরদিকে পুলিশও আন্দোলনকারীদের কার্যত বোঝাতে থাকে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এর পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়ায় পুলিশ। এ দিকে, গার্ডরেল ভেঙে ফেলতেই ময়দানে নামে পুলিশের র্যাফ। ছোড়া হয় জলকামান। আর পুলিশের বাহিনী এগিয়ে যেতেই পিছু হটতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা। তবে শুধু সাঁতরাগাছি নয়, হাওড়া ব্রিজের উপরে থাকা গার্ডরেলও সরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পাল্টা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ‘বুক পেতেছি গুলি কর, জাস্টির ফর আরজি কর’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিসের’ মতো স্লোগান তুলে ধেয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: ঘটনার দিন নিয়ে ৭ ‘জরুরি’ প্রশ্ন, এবার সিবিআই জেরার মুখে কলকাতা পুলিশের অফিসার! যা ঘটল…
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে কখনও আন্দোলনকারীদের চাপে, পাথর বৃষ্টির মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। যদিও পর মুহূর্তেই আবার নতুন রণসজ্জায় এগিয়ে আসে উর্দিধারীরা। সকাল থেকেই হাওড়া ময়দানে মিছিল করতে দেখা যায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চকেও। দেখা যায় মঞ্চের নেতা ভাস্কর ঘোষকেও। আহত পুলিশ কর্মীর পাশেও হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। সেখানেও ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। তুমুল ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের সঙ্গে। লাগাতার কাঁদানে গ্যাস চার্জের মধ্যে রাস্তা আকড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় বহু আন্দোলনকারীকে। পুলিশ-আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ফরশোর রোডও।
রাকেশ মাইতি